Thank you for trying Sticky AMP!!

বাঁশ-বেতের তৈরি বিশেষ ধরনের পাত্রে এভাবে রেশম পোকাকে খেতে দেওয়া হয়েছে তুঁতপাতা

তুঁতপাতার সংকটে রেশম চাষ প্রকল্প

সংকটের সমাধানে তুঁতগাছ লাগানোর জন্য সরকারি জমি বরাদ্দের পাশাপাশি রেশম গুটির দাম আরও বাড়ানোর দরকার।

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বড়হর গ্রামে দেড় যুগ ধরে চলা রেশম উৎপাদন প্রকল্পটি তুঁতপাতার সংকটে ভুগছে। জায়গার অভাবে লাগানো যাচ্ছে না তুঁতগাছ। ইতিমধ্যে অনেক গাছ মারা গেছে। এই গাছের পাতাই রেশম পোকার খাবার। তুঁতপাতার অভাবে কমে এসেছে রেশম গুটি উৎপাদনও।

ফলে দেড় যুগ পুরোনো রেশম চাষ প্রকল্পটি অনেকটা থমকে পড়েছে। সংকটের সমাধানে তুঁতগাছ লাগানোর জন্য সরকারি জমি বরাদ্দের পাশাপাশি রেশম গুটির দাম আরও বাড়ানোর দরকার বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বড়হর গ্রামের রেশমচাষি সীমা রানী ও বীণা রানী জানান, আগে চার মাস পরপর ২৫ থেকে ৩০ কেজি রেশম গুটি তোলা যেত। বর্তমানে পোকার খাদ্যসংকটের কারণে ১৫ থেকে ২০ কেজি উৎপাদন করা যাচ্ছে। পাতা আরও বেশি হলে ৪০ কেজির বেশি উৎপাদন করা যেত। এতে আয় বাড়ার পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তাও পাওয়া যেত এই শিল্পে।

বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, কাপাসিয়ার বড়হর গ্রামের রেশম উৎপাদন প্রকল্পটি ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড়। প্রকল্পটি শুরু হয় ২০০৪ সালে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বড়হর গ্রামের ৩০ জন নারী রেশম পোকার চাষ করে তা থেকে গুটি উৎপাদন করছেন। পাতার জন্য ওই গ্রামের খালের পাড়ে প্রায় তিন কিলোমিটার জায়গাজুড়ে তুঁতগাছ রোপণ করা হয়। কিছু গাছ এর মধ্যে মারা গেছে। আবার খালের পাড়ে জমির মালিকেরা নিজেরা কিছু বহু বর্ষজীবী গাছ লাগিয়েছেন। যেগুলো তুঁতগাছের বৃদ্ধি ব্যাহত করছে।

রেশম উন্নয়ন বোর্ডের কাপাসিয়া উপজেলা রেশম সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জহুরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, তুঁতগাছের উৎপাদন বাড়াতে পারলে রেশম গুটির উৎপাদন বেড়ে যেত, কিন্তু গাছ লাগানোর মতো জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। রেশম গুটির মূল্য আরও বাড়াতে পারলে উদ্যোক্তারা খুশি হতেন। এ ছাড়া তুঁতগাছের আশপাশের জমির মালিকেরা যেসব গাছ লাগিয়েছেন, সেগুলো বড় হলে তুঁতগাছ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বড়হর গ্রামে রেশম গুটি প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, সেখানে নারীরা বাঁশ-বেতের তৈরি একধরনের বিশেষ পাত্রে রেশম পোকা রেখে দিয়েছেন। পোকা রাখার পাত্রগুলো থরে থরে সাজানো। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে পোকাগুলোকে খাবার হিসেবে তুঁতগাছের পাতা দিচ্ছেন নারীরা। এসব পাতা বাড়ির কাছে খালের পাড়ে তুঁতগাছ থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন তাঁরা। রেশম চাষের উদ্যোক্তারা জানান, ২০০৪ সালের শুরুতে বড়হর গ্রামের শিল্পী রানী, রিতা রানী ও জায়েদা প্রথম এই চাষ শুরু করেন। তাঁদের সফলতা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে রেশম চাষে যুক্ত হন আরও অনেকে।

রেশম গুটি দুই ক্যাটাগরিতে ৩৫০ ও ৪০০ টাকা কেজি দরে কৃষকের কাছ থেকে কিনে নেয় রেশম উন্নয়ন বোর্ড। গুটি উৎপাদনের জন্য কৃষকদের বিনা মূল্যে রেশম পোকার ডিম সরবরাহ করা হয় বোর্ড থেকে। এখানে উৎপাদিত রেশম গুটিগুলো চলে যায় দেশের বেনারসি পল্লিগুলোতে। এগুলো থেকে তৈরি হয় দামি বস্ত্র।

বর্তমান দামে রেশম গুটি উৎপাদন মোটেও পোষায় না জানিয়ে রেশমচাষি শ্যামলী রানী বলেন, ‘১ কেজি রেশম গুটি ৩৫০ টাকা মূল্যে বিক্রি করলে পোষায় না। প্রতি কেজি অন্তত ৫০০ টাকা হলে ভালো আয় হতো।’

বিমলা রানী একসময় হাতপাখা বানিয়ে বাজারে বিক্রি করতেন। রেশম গুটি প্রকল্প শুরু হওয়ার পর তিনি এ পেশায় পুরোপুরি নিজেকে নিয়োজিত করেন। তাঁদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা নেই। তুঁতগাছ লাগানোর মতো নিজস্ব জমিও নেই। তুঁতগাছ লাগাতে সরকারি সুবিধা চান বিমলা। তুঁতগাছ লাগানোর জন্য সরকারি সহায়তা চান রেশমচাষি পার্বতী রানীও।

তুঁতগাছ লাগানোর মতো খাসজমি খুব একটা নেই জানিয়ে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা রেশমচাষিদের খালের পাড়ে আরও বিস্তৃত জায়গাজুড়ে তুঁতগাছ লাগাতে উৎসাহিত করছি।’