Thank you for trying Sticky AMP!!

লক্ষ্মীপুরে আলোচিত নোমান-রাকিব হত্যা মামলার আসামি দেওয়ান ফয়সাল (মাঝে) উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন

জামিন পেয়ে ফুলের মালা পরে হত্যা মামলার আসামির শোভাযাত্রা

লক্ষ্মীপুরে আলোচিত আবদুল্লাহ আল নোমান ও রাকিব ইমাম হত্যা মামলার আসামি দেওয়ান ফয়সাল উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় তিনি লক্ষ্মীপুর কারাগার থেকে বের হয়ে মাইক্রোবাসে চড়ে অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলের শোভাযাত্রায় রামগঞ্জ শহরে আসেন। পরে শহরের কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে বালিয়া চৌমুহনী এলাকায় জড়ো হন তাঁরা। সেখানে তাঁকে মালা পরিয়ে ও ফুল ছিটিয়ে বরণ করা হয়। এ সময় মিষ্টি বিতরণ করেন তাঁর পক্ষের লোকজন। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন নিহত ব্যক্তিদের পরিবার।

হতাশা প্রকাশ করে রাকিবের ভাই সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী কাশেম জিহাদি মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। জড়িত যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁরাও জামিনে বের হয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করা হচ্ছে। আর আমরা এসব অসহায়ের মতো দেখছি।’

দেওয়ান ফয়সাল রামগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দার বাজার এলাকায় গত ২৫ এপ্রিল রাতে যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমামকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হত্যা মামলায় দেওয়ান ফয়সাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গত ২ মে চন্দ্রগঞ্জ জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ারুল কবীর তাঁর জবানবন্দি নেন। ফয়সাল জোড়া খুনের মামলার ৩ নম্বর আসামি। হত্যাকাণ্ডের পর তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। গত ১ মে ঠাকুরগাঁও থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র‌্যাব। সাত মাস পর গতকাল জামিন পান ফয়সাল।

গতকাল চৌমুহনী এলাকায় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দেওয়ান বাচ্চু এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) রামগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সুমন ভূঁইয়া গলায় ফুলের মালা পরিয়ে ফয়সালকে বরণ করেন। এ বিষয়ে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার ভাই দেওয়ান ফয়সাল হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। তিনি পরিস্থিতির শিকার। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার কারণে আত্মীয়স্বজন নিজ উদ্যোগে মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছেন।’

নিহত নোমানের স্বজনেরা জানান, প্রতিদিন তাঁরা আশায় থাকেন, প্রধান আসামি ধরা পড়বেন। কিন্তু আট মাস পেরিয়ে গেলেও কাশেম জিহাদিকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। অথচ জিহাদি হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস রেকর্ড ও কল করে অনবরত হুমকি দিচ্ছেন তাঁদের। চাঁদাও চাইছেন। যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁরাও জামিন পেয়ে যাচ্ছেন। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।

চরম নিরাপত্তাহীনতায় থাকার কথা জানিয়েছেন মামলার বাদী বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেভাবে তৎপর ছিল, এখন তা একদম নেই। অগ্রগতি না থাকায় গত ১০ জুন তিনি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তনের আবেদন করেন। পরে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দেন পুলিশ সুপার।

হত্যাকাণ্ডের পরদিন রাতে নোমানের বড় ভাই ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এতে আবুল কাশেম জিহাদিকে প্রধান করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ এবং ১৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। কাশেম জিহাদি চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বশিকপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। গত ১৭ মে কাশেম জিহাদিকে বহিষ্কার করে থানা আওয়ামী লীগ।