Thank you for trying Sticky AMP!!

টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না আমেনার, বোনের লেখাপড়া বন্ধের পথে

টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না আমেনা আক্তারের। ৬ আগস্ট দুপুরে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের উদাপাড়া গ্রামে

আমেনা আক্তারের বয়স এখন ২৬ বছর। এই বয়সে তাঁর লেখাপড়া শিখে কাজ করার কথা। কিন্তু তিনি দুঃসহ জীবন বয়ে বেড়াচ্ছেন। টাকার অভাবে তাঁর চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না। অভাবের সংসারে কলেজে পড়ুয়া তাঁর ছোট বোন মনিকা আক্তারের (১৭) লেখাপড়াও বন্ধের পথে। পারিবারিক টানাপোড়েন ও বাবা নিরুদ্দেশ হওয়ার ঘটনায় ১৩ বছর বয়সে আমেনা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। সেই থেকে তাঁর এই দশা।

আমেনার একমাত্র উপার্জনক্ষম ছোট ভাই মো. আল আমিন (২১) বিদ্যুতের মিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করে যা পান, তা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চলে। আমেনা আক্তারদের বাড়ি নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের উদাপাড়া গ্রামে। আমেনা একই গ্রামের জসিম উদ্দিনের মেয়ে। জসিম উদ্দিন স্ত্রী-সন্তানদের ফেলে ১৫ বছর ধরে নিরুদ্দেশ।

লেংগুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, বিষয়টি খুবই কষ্টের। ইউপির পক্ষ থেকে বড় ধরনের কোনো সহযোগিতা করার সুযোগ নেই। তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে একবার কিছু সহযোগিতা করেছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বজন সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে আমেনা আক্তারের জন্ম। স্থানীয় লেংগুরা উচ্চবিদ্যালয়ে তিনি সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তবে অভাব-অনটনের কারণে ২০০৮ সালে একদিন আমেনার বাবা জসিম বাড়ি থেকে চলে যান। এর পর থেকে তাঁর খোঁজ নেই। এ ঘটনায় আমেনা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। একপর্যায়ে আমেনা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। তাঁকে পাশের উপজেলা দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা আমেনাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু অভিভাবকহীন দরিদ্র পরিবারের পক্ষে তাঁকে আর উন্নত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়নি। বছর তিনেক ধরে তিনি অন্যের সাহায্য ছাড়া বিছানা থেকে দাঁড়াতে পারেন না। মা মমতাজ বেগম পাঁচ বছর আগে মারা গেছেন।

টাকার অভাবে বোনের চিকিৎসা করাতে না পেরে হতাশ ভাই আল আমিন। ছোট বোন মনিকা আক্তার দুর্গাপুর মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাঁর পড়ালেখা প্রায় বন্ধের পথে।

ঘরের বারান্দায় তেরপলের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে আছেন মানসিক ভারসাম্যহীন নারী আমেনা আক্তার। তাঁর মুখ দিয়ে লালা বের হচ্ছে। ৬ আগস্ট দুপুরে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের উদাপাড়া গ্রামে

৬ আগস্ট দুপুরে আমেনা আক্তারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি জীর্ণ ছাপড়ায় তাঁদের বসবাস। ঘরের চালার টিনগুলো পুরোনো হয়ে ছিদ্র হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পেতে টিনগুলোতে পলিথিন মোড়ানো। ঘরের বারান্দায় তেরপলের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে আছেন আমেনা।

সেখানে কথা হয় আমেনা আক্তারের ছোট বোন মনিকা আক্তারের সঙ্গে। সে প্রথম আলোকে বলে, ‘টাকার অভাবে আপার চিকিৎসা করা হয়নি। কবিরাজি চিকিৎসা করানোর পর তাঁর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। এ অবস্থা দেখা যে কী কষ্টের, তা বোঝাতে পারব না। ভাই ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করে যা পায়, তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে গেছে। তাই ভাই চায়, আমি যেন পড়াশোনা ছেড়ে দিই।’

মশারির ভেতরে বসে আছেন মানসিক ভারসাম্যহীন নারী আমেনা। ৬ আগস্ট দুপুরে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের উদাপাড়া গ্রামে

মনিকা আক্তারের ভাই আল আমিন বলেন, তাঁরা গরিব মানুষ। ঠিকমতো সংসারই চলে না। টাকার অভাবে বড় বোনের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। ছোট বোনের লেখাপড়াও হয়তো আর চালাতে পারবেন না। সরকারি সহায়তা বা কেউ একটু যদি সহযোগিতা করতেন, তবে হয়তো তাঁদের জীবন বদলে যেত।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, আমেনার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তাঁর চিকিৎসার জন্য যা প্রয়োজন, তা–ই করা হবে। ভাতার আওতায় এনে তাঁর জন্য সরকারি একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হবে। ছোট বোনের লেখাপড়ার ব্যবস্থা এবং ভাইয়ের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।