Thank you for trying Sticky AMP!!

সন্তানদের হারিয়ে দিশাহারা মা–বাবা

ছেলের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রিফাতের বাবা মো. শাহজাহান। ডানপাশে বিলাপ করছিলেন মা রাশিদা বেগম। শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের খানপুর এলাকায়

১১ বন্ধু মিলে নারায়ণগঞ্জের বন্দরের নবীগঞ্জে মেলা দেখতে যান। মেলা শেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে শীতলক্ষ্যা নদী পার হচ্ছিলেন তাঁরা। তীরের কাছাকাছি এসে নৌকাটি ডুবে যায়। আট বন্ধু সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও সাঁতার না জানা তিনজন নিখোঁজ হন। ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশ তাঁদের লাশ উদ্ধার করে। এরপর লাশটি তিনটি যাঁর যাঁর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া তিন বন্ধু হলেন নারায়ণগঞ্জ শহরের ব্যাংক কলোনি এলাকার রিফাত হোসেন (১৮), খানপুর এলাকার শাহ্ পরান (১৮) ও একই এলাকার শাওন (২০)। রিফাত ও শাহ পরানের লাশ শহরের মাসদাইর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। শাওন পরিবারের সঙ্গে খানপুরে থাকত। তাঁর গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার আজমেরীগঞ্জ উপজেলার আজিজনগর এলাকায়। লাশটি সেখানে নিয়ে গেছেন স্বজনেরা।

আজ শনিবার দুপুরে ব্যাংক কলোনি এলাকার রিফাতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুই কক্ষের ভাড়া বাড়ির একটি কক্ষে নির্বাক বসে আছেন রিফাতের বাবা মো. শাহজাহান। পাশে বিছানায় বসে বিলাপ করছেন রিফাতের মা রাশিদা বেগম। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন স্বজনেরা।

রিফাতের বাবা শাহজাহান শহরের কেন্দ্রীয় লঞ্চ টার্মিনালে কলা বিক্রি করেন। তার দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। শাহজাহান আক্ষেপ করে বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে রিফাত। ও আমাকে ব্যবসার কাজে সহযোগিতা করত। সেই ছেলে আমাদের কষ্টের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেছে। বাবা-মায়ের মন তো মানে না।’

গতকাল বিকেলে মাঠে খেলছিলেন রিফাত। তাঁকে ডেকে হোটেল থেকে পুরি ও চা আনান রাশিদা বেগম। তিনি বলেন, ‘বিকেলে ছেলের সঙ্গে বসে চা খেয়েছি। এরপর সে সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে মেলা দেখতে যায়। পোলাডা আমারে এভাবে একা রেখে চলে যাবে, ভাবতে পারি না। এখন আর কেউ আমার গলা ধরে ঘুমাতে চাইবে না।’

একমাত্র ছেলে শাহ্ পরানকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন বাবা মেহেদী হাসান। শহরের খানপুর মেইন রোড এলাকায় তাঁদের বাড়িতে বিরাজ করছে শোকের পরিবেশ। বাড়ির সামনে সড়কে চেয়ার নিয়ে বসে আছেন কয়েকজন স্বজন। ভেতরে শাহ্‌ পরানের বাবাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা।

Also Read: মেলা দেখতে গিয়ে শীতলক্ষ্যায় নৌকাডুবি, দুজনের মৃত্যু

শাহ্ পরান সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। একটি দোকানে সেলসম্যানের কাজ করতেন। শাহ্‌ পরানের বাবা মেহেদী হাসান একটি বহুতল ভবনে লিফটম্যানের চাকরি করেন। তিনি বলেন, ‘ওর মা অনেক আগে মারা গেছে। সবার আদরের ছিল আমার বাবায়। এই হাত দিয়ে ওর লাশ কবরে রেখে এসেছি। এই কষ্ট কীভাবে সহ্য করব!’

শীতলক্ষ্যা নদীতে প্রায় নৌ দুর্ঘটনা ঘটলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ করেন শাহ্ পরানের ফুফু পারভীন আক্তার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, প্রায়ই শীতলক্ষ্যা নদীতে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। প্রশাসন নজরদারি করলে নৌকায় বা ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা সম্ভব নয়।

নৌকাডুবির ঘটনায় মারা যাওয়া শাওন নারায়ণগঞ্জ বার একাডেমি স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। তাঁর বাবা জিয়াউল হক শহরের ৫ নম্বর মাছঘাট এলাকায় মাছের ব্যবসা করেন।

শাওনের এক স্বজন জানিয়েছেন, বাবা-মায়ের তিন মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে শাওন সবার ছোট। আজ সকাল ১০টায় জানাজা শেষে তাঁর লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জে অবস্থিত কদম রসুল দরগায় মাসব্যাপী মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ওই মেলা দেখে বন্ধুদের সঙ্গে ফিরছিলেন মারা যাওয়া তিনজন।

নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ফোরকান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, নৌকাটিতে কোনো কিছুর সঙ্গে ধাক্কা লাগেনি। হুড়োহুড়িতে ডুবে গেছে। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাশ তিনটি ময়নাতদন্ত ছাড়াই হস্তান্তর করা হয়েছে।