Thank you for trying Sticky AMP!!

কাঁঠালের দামে খুশি শ্রীপুরের বাগানিরা  

প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এ বছর সব ধরনের কাঁঠালের উৎপাদন কিছুটা কম। তবে বাজারে দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে।

গ্রাম থেকে সংগ্রহ করা কাঁঠালের স্তূপ। সিলেটের কদমতলী নেওয়ার জন্য ট্রাকে তোলা হচ্ছে কাঁঠাল। গতকাল গাজীপুরের শ্রীপুরের শিরিশগুড়ি গ্রামে

কাঁঠালের জন্য বিখ্যাত গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা। সেখানকার লাল মাটির কাঁঠালের চাহিদা দেশজুড়ে। উপজেলাটিতে কাঁঠালের ভরা মৌসুম চলছে। ট্রাকভর্তি কাঁঠাল যাচ্ছে দেশের বড় বড় বাজারে। বাগানমালিকেরা বলছেন, অনাবৃষ্টিতে এ বছর কাঁঠালের উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। তবে দাম নিয়ে সন্তুষ্ট তাঁরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের তথ্য বলছে, শ্রীপুরে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে প্রতিবছর ৭৭ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন কাঁঠাল উৎপাদন হয়। গত বছর শ্রীপুরে উৎপাদিত কাঁঠালের বাজার ছিল ৩৮ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার। উপজেলাটিতে বেশি কাঁঠাল উৎপাদন হয় শ্রীপুর পৌরসভা, তেলিহাটি, বরমী, গোসিংগা, প্রহ্লাদপুর, মাওনা, কাওরাইদ, রাজাবাড়ী ও গাজীপুর ইউনিয়নে।

শ্রীপুরের সবচেয়ে বড় কাঁঠালের বাজার বসে উপজেলার জৈনা বাজারে। এখান থেকে কাঁঠাল নিয়ে যান সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারেরা। জৈনাবাজার ছাড়াও ভবানীপুর, বাঘেরবাজার, নতুনবাজার, মাওনা, নয়নপুর, গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি, রঙিলাবাজার, সিডস্টোরসহ বিভিন্ন স্থানে কাঁঠালের বাজার বসে।

সম্প্রতি শ্রীপুরের মাওনা, প্রহ্লাদপুর ও রাজাবাড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব এলাকায় মূলত খাজা, গালা ও দোরসা জাতের কাঁঠাল বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয়। তবে এ অঞ্চলের হাজারি জাতের ছোট আকারের একটি কাঁঠালের জাত ব্যাপক জনপ্রিয়। কিন্তু এই জাতের কাঁঠালের উৎপাদন কমে গেছে। বাগানমালিকেরা জানিয়েছেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এ বছর সব ধরনের কাঁঠালের উৎপাদন কিছুটা কম। তবে বাজারে দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর যে কাঁঠালের দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, সে কাঁঠাল এ বছর ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যাচ্ছে।

রাজাবাড়ী ইউনিয়নের মিটালু গ্রামে গিয়ে কথা হয় কাঁঠালচাষি মোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁর বাগানে ৬০টি গাছের মধ্যে ৫০টি গাছের কাঁঠাল মে মাসে পাইকারি দামে বিক্রি করে ফেলেছেন। বাকি ১০টি গাছের কাঁঠাল খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে।

মোফাজ্জল বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর গাছে কাঁঠাল কম এসেছে। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে উৎপাদন অনেকটাই কম। তবে পাইকারি ও খুচরা বাজারে গত বছরের তুলনায় এ বছর কাঁঠালের দাম ভালো।

মাওনা ইউনিয়নের শিরিশগুড়ি গ্রামে দেখা যায়, সেখানে সড়কের পাশে প্রচুর কাঁঠাল স্তূপ করে রাখা। ট্রাকে কাঁঠালগুলো তোলা হচ্ছে। কাঁঠাল তুলতে সেখানে কাজ করছেন ১০ জন। সেই সঙ্গে আশপাশের গ্রাম থেকে ভ্যান ভর্তি করে কাঁঠাল নিয়ে এসে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে।

এ সময় সেখানে কথা হয় কাঁঠালের পাইকারি ক্রেতা ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, শিরিশগুড়ি গ্রাম থেকে প্রতিদিন একটি ট্রাক আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার কাঁঠাল নিয়ে সিলেটের কদমতলীতে যাচ্ছে। মিষ্টি স্বাদের কারণে সিলেটে শ্রীপুরের কাঁঠালের ব্যাপক চাহিদা আছে। একেকটি কাঁঠাল ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যাচ্ছে। মাওনা ইউনিয়নের শিরিশগুড়ি, বেলতৈল, বেতঝুড়ি, সিমলাপাড়া, বদনীভাঙ্গা, সালদপাড়া গ্রাম থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করেন ওই পাইকার। 

বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশেও যাচ্ছে শ্রীপুরের কাঁঠাল। এলাকাটিতে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল উৎপাদন হওয়ায় কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহার নিয়েও বাগানমালিকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। এ ছাড়া কাঁঠালের বেশি বেশি চারা রোপণের জন্য কৃষক পর্যায়ে উৎসাহিত করা হয়। কাঁঠাল দিয়ে সরকারিভাবে শ্রীপুর উপজেলার ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে। শ্রীপুর উপজেলা চত্বরে বসানো হয়েছে বিশাল আকারের কাঁঠালের ভাস্কর্য। 

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা প্রথম আলোকে বলেন, স্বাদে শ্রীপুরের কাঁঠালের কদর অনেক।