Thank you for trying Sticky AMP!!

শিবপুরে স্বামীকে হত্যার পর থানায় গিয়ে স্ত্রীর আত্মসমর্পণ

নরসিংদী জেলার মানচিত্র

নরসিংদীর শিবপুরে শাবল দিয়ে আঘাত করে স্বামীকে হত্যার পর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন ঝুনু বেগম (৩৫) নামের এক নারী। আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ওই নারী থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে শিবপুর উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রামে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সারা রাত লাশের পাশে বসে থেকে আজ সকালে ওই ঘরে তালা দিয়ে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন ঝুনু বেগম। পরে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পর ওই নারীর স্বামীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত ব্যক্তির নাম মোফাজ্জল প্রধান (৩৮)। তিনি শিবপুরের মাছিমপুর ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রামের মৃত ওয়াজউদ্দিন প্রধানের ছেলে। তাঁর স্ত্রী একই এলাকার মোসলেম উদ্দিনের মেয়ে। মোফাজ্জল রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন, অন্যদিকে ঝুনু বেগম স্থানীয় একটি তৈরি পোশাক কারখানার কর্মী ছিলেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, মোফাজ্জল ও ঝুনুর প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ২০ বছর আগে বিয়ে করেন। এর আগে ঝুনু বেগমকে অন্যত্র বিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর মা–বাবা। কিন্তু বিয়ের দুই দিনের মাথায় ওই স্বামীকে ছেড়ে প্রেমিক মোফাজ্জলের কাছে চলে আসেন তিনি। এই দম্পতির ১৭ বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে।

ওই নারীর বরাতে পুলিশ জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঘরের আলমারিতে জমানো কিছু টাকা স্ত্রী ঝুনু বেগমের কাছে চেয়েছিলেন মোফাজ্জল। স্ত্রী ওই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে ঘরে থাকা একটি শাবল নিয়ে আসেন মোফাজ্জল। ওই শাবল দিয়ে আলমারি ভাঙতে গেলে মোফাজ্জলকে বাধা দেন ঝুনু। পরে ওই শাবল নিয়ে স্ত্রী ঝুনু বেগমের ওপর আক্রমণ করতে আসেন তিনি। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তাঁর হাত থেকে শাবলটি ছিনিয়ে নেন ঝুনু। উত্তেজিত অবস্থায় ওই শাবল দিয়ে স্বামীর মাথায় পরপর তিনটি আঘাত করে বসেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মোফাজ্জলের।

সারা রাত স্বামীর লাশের পাশেই বসে ছিলেন ঝুনু বেগম। রাত পেরিয়ে সকাল হলে ওই ঘরে তালা দিয়ে আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে শিবপুর মডেল থানায় আসেন ঝুনু বেগম। পরে কর্তব্যরত কর্মকর্তা সহকারী উপপরিদর্শক জিয়াউর রহমানের কাছে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দেন তিনি। বিষয়টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়াকে জানানো হয়। পরে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। পরে দুপুরে তাঁদের ঘরের তালা ভেঙে মোফাজ্জলের লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহত মোফাজ্জলের স্বজন ও প্রতিবেশী রিপন প্রধান বলেন, ‘নিহত মোফাজ্জল আমার বড় ভাইয়ের শ্যালক ছিলেন। গত রাতে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা যখন ঘটে, এর পর থেকে আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত আমরা কেউই কিছু টের পাইনি। ঝুনু বেগম নিজেই ওই ঘরে তালা মেরে সকালে থানায় গিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পুলিশকে জানান। পরে থানা থেকে খবর নেওয়া হলে আমরা বিষয়টি জানতে পারি। মোফাজ্জল ও ঝুনুর প্রেমের বিয়ে হলেও অভাবের কারণে তাঁদের মধ্যে পারিবারিক কলহ ছিল।’

শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামীর মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছেন ঝুনু বেগম। তিনি এখন থানাহাজতে আটক আছেন। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত শাবলটিও উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।