Thank you for trying Sticky AMP!!

দুই কারণে পাটের দাম কম 

বানেশ্বর বাজারে গতকাল শনিবার প্রতি মণ পাট ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। 

পাট

রাজশাহীর পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজার পাট বেচাকেনার জন্য সুপরিচিত। গত বছর মৌসুমের শুরুতে পাটের দর উঠেছিল প্রতি মণ ৩ হাজার ২০০ টাকা। এবার মৌসুমের শুরুতে সর্বোচ্চ দর ছিল ২ হাজার ৭০০ টাকা। বর্তমানে দাম আরও কমে গেছে। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর বাংলাদেশের পাটের প্রধান আমদানিকারক দেশ ছিল ভারত। দেশটি থেকে এবার পাটের সুতা ও কাঁচা পাট—দুটিরই চাহিদা কমেছে। আর দেশে পাটের চট ও বস্তার ব্যবহার কমছে। পাটের জায়গা দখলে নিচ্ছে প্লাস্টিক পণ্য। এসব কারণে পাটের দর গত বছরের চেয়ে কমেছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভালো দাম পাওয়ায় তিন বছর ধরে রাজশাহীতে পাট চাষ বেড়েছে। জেলায় এবার ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত বছর ছিল ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় পাট চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই দুই উপজেলাতেই এবার পানিসংকটও বেশি দেখা  দেয়। এ কারণে চাষিরা জমি থেকেই পাট বিক্রি করে দেন। ফলে রাতারাতি পাট নিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীর উদ্ভব হয়। তাঁরা সরাসরি জমি থেকে পাট কিনে পুকুর ভাড়া নিয়ে পাট পচিয়ে বিক্রি করার ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এই নতুন ব্যবসায়ীরা ধরাশায়ী হয়েছেন।

দেশে আইন থাকলেও পাটের বস্তার ব্যবহার কমে যাচ্ছে। বাড়ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। এসব কারণে পাটের দর পড়ে যাচ্ছে।
আবুল বাসার, রাজ্জাক জুট মিলের মালিক

বানেশ্বর বাজারে গতকাল শনিবার প্রতি মণ পাট ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পানিসংকটের কারণে পাটের মান এবার খারাপ হয়েছে। ফরিদপুরে উৎকৃষ্ট মানের পাটের মণ ২ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। এ বাজারের ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির বলেন, প্রতিবছর তিনি ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ মণ পাট কেনেন। মৌসুমের এই সময় গত বছর ২৫-৩০ হাজার মণ পাট কিনেছিলেন। এবার কিনেছেন ২০ হাজার মণ পাট। ভারত এবার কাঁচা পাট কম কিনছে। যে কারণে পাটের চাহিদা কমে গেছে। 

পাটের বাজারের অবস্থা জানতে কথা হয় ফরিদপুরের রাজ্জাক জুট মিলের মালিক আবুল বাসারের সঙ্গে। মুঠোফোনে তিনি বলেন, দুই বছর আগে বাংলাদেশের পাটের বড় আমদানিকারক ছিল তুরস্ক। তারা বাংলাদেশ থেকে পাটের সুতা কিনত। গত বছর থেকে বৈশ্বিক মন্দার কারণে সেখানে চার ভাগের এক ভাগ রপ্তানি হচ্ছে। গত বছর ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশ ছিল। তারা সুতা ও কাঁচা পাট দুটিই নিত। এবার তারা আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। 

আবুল বাসার আরও বলেন, দেশে আইন থাকলেও পাটের বস্তার ব্যবহার কমে যাচ্ছে। বাড়ছে প্লাস্টিক। এসব কারণে পাটের দর পড়ে যাচ্ছে। তাঁর মিল সক্ষমতার ৫০ শতাংশ উৎপাদন করে। এতে ২০-২২ হাজার মেট্রিক টন সুতা উৎপাদন করা হয়। 

বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) শাহেদ আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সরকারি সব পাটকল বন্ধ হয়ে গেছে। পাটের বাজারের ওপরে তাদের আর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বেসরকারি মিলমালিক ও ব্যবসায়ীরা বলতে পারবেন কেন পাটের দর পড়ছে। 

এদিকে পানিসংকটের কারণে একশ্রেণির মৌসুমি ব্যবসায়ীরা রাজশাহীতে পুকুর ভাড়া নিয়ে পাট পচানোর জন্য জমি থেকে সরাসরি কৃষকের পাট কিনেছিলেন। তাঁরাও বিপাকে পড়েছেন। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আরিফপুর গ্রামের নূর ইসলামসহ তিন ব্যবসায়ী এবার ২২ বিঘা জমির পাট কিনেছিলেন। বেচাকেনা শেষে তাঁদের প্রায় এক লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।