Thank you for trying Sticky AMP!!

ভোটের পর মোংলার সোনাইলতলা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে ঈগল প্রতীকের কর্মী সরদার মাহাবুবুর রহমানের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে

নির্বাচন–পরবর্তী হামলা-হুমকির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, বাড়িছাড়া কেউ কেউ

বাগেরহাটের চারটি আসনের তিনটিতেই নৌকার শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। আসনগুলোয় একতরফা জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। ব্যতিক্রম বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুন নাহারের বিপক্ষে আওয়ামী লীগেরই এক নেতা প্রার্থী ছিলেন। ভোটের দিন তেমন কোনো সহিংসতা না হলেও নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে হামলা-মারধরসহ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন উভয় পক্ষের লোকজন। কেউ কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তালা ও এলাকাছাড়া করার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।

বাগেরহাট-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীকে নির্বাচন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মোংলা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী ইজারাদার। এখানে নৌকার প্রার্থী হাবিবুন নাহার ৭৫ হাজার ৯৬৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ইদ্রিস আলী ইজারাদার পেয়েছেন ৫৮ হাজার ২০৪ ভোট। নির্বাচনের পর স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা ব্যক্তিদের বাড়িতে হামলা হচ্ছে। যদিও আওয়ামী লীগের প্রার্থী পাল্টা অভিযোগ করেছেন।

মোংলার চাঁদপাই ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁদপাই এলাকার সঞ্চয় কুমার বাছাড় নির্বাচনে ইদ্রিস আলীর কর্মী ছিলেন। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকে তিনি এলাকায় ফিরতে পারছেন না। আজ রোববার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সঞ্চয় বলেন, ‘আমি এখন কীভাবে আছি জানেন? আমার হাতে একটা ব্যাগ, রাতে কোথায় ঘুমাব জায়গা খুঁজে পাচ্ছি না। আর কী শুনবেন আমার কাছে? আমার কথা বলার পরিবেশ নেই। আমার বাড়ির পুকুরের মাছ পর্যন্ত ধরে নিয়ে গেছে। ঘেরের বাসায় আগুন দিয়েছে। আমি থাকলে পুড়ে মারা যেতাম। পলায়, পলায় আছি।’

সঞ্চয় কুমার বলেন, ‘আমার স্ত্রী ঈগলের পথসভায় গীতা পাঠ করেছিল। এইটা হইছে বড় দোষ।’ কারা হুমকি দিচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়িতে সাত বছরের ছোট একটা বাচ্চা রইছে। ওদের তো নিরাপত্তা নেই কোনো। নাম বললে কী হবে বোঝেন!’

নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ করে গতকাল শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন মোংলার বীর মুক্তিযোদ্ধা কেশব লাল মণ্ডল। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দলীয় বাধা না থাকায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী ইদ্রিস আলী ইজারাদারের হয়ে নির্বাচন করেন। ৭ জানুয়ারি ভোট গণনার পর পুরো মোংলায় সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহারের ক্যাডাররা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তাদের হামলা, মারধর, দখল, ভাঙচুরে এলাকার মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যে কয়েক শ পরিবার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। শুধু হাবিবুন নাহারকে ভোট না দেওয়ায় এমন ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ইদ্রিস আলী ইজারাদার বলেন, ‘আমার নেতা-কর্মীদের অধিকাংশই এখন বাড়িছাড়া। যে দু-চারজন আছেন, তাঁরাও ঘরে অবরুদ্ধ। তাঁদের ঘের লুট হচ্ছে। অনেকের গরু-ছাগল লুট হয়ে গেছে। ২০০১ সালের তাণ্ডবলীলা এবার ছাড়ায়ে গেছে। আমি তখন মোংলায় নোঙ্গরখানা (লঙ্গরখানা) খুলতে বাধ্য হয়েছিলাম। কিন্তু আজকে যদি আমি নোঙ্গরখানা খুলি, তা সরকারের বিরুদ্ধে চলে যাবে। জ্ঞান থাকতে আমি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যাব না। আমি চাই, যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন, তাঁরা যেন শান্তিতে থাকতে পারেন।’ তিনি বলেন, ভোটের মাঠে অনেক কিছুই হয়েছে। তিনি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান না। অত্যন্ত সুকৌশলে তাঁকে হারানো হয়েছে।

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহার। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় উল্টো নৌকার কর্মীরা আহত হচ্ছেন বলে পাল্টা অভিযোগ করেন হাবিবুন নাহার। তিনি বলেন, ‘অটোপাস ইউপি চেয়ারম্যানদের আবির্ভাবের পর এ সমস্যার শুরু। তাদের তো মানুষের ভোট নিতে হয়নি, তাদের চলাফেরাই আলাদা। যাঁরা আমাদের সঙ্গে ছিলেন, তাঁদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়। ঘের দখল, মামলা, মারধর নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। মানুষ ভোটের মাধ্যমে অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়েছে।’

স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন এক ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধা সাজিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উল্লেখ করে সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহার আরও বলেন, ‘কার ঘের কে দখল করেছে, তা না বলে গড়ে একটা বললে হবে না। নির্দিষ্ট করে বলতে হবে। তারা ঢালাও অভিযোগ করছে। আমার সমর্থকেরা হামলা-নির্যাতনে জড়িত নন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় আমার কয়েকজন সমর্থক আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন খুলনায় ভর্তি আছেন।’

পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান প্রথম আলোকে বলেন, রামপাল-মোংলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধারাবাহিকতায় নির্বাচনের আগে-পরে কিছু বিষয় তাঁদেরও নজরে এসেছে। কয়েকটি ঘটনায় মামলাও হয়েছে। কিছু বিষয় ঘের-জমির দ্বন্দ্ব থেকেই ঘটে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু বিষয় সামনে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক আছে। কোনো ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে। সবার সহযোগিতায় দ্রুত পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে।