Thank you for trying Sticky AMP!!

জোড়া লাগানো অবস্থায় জন্ম নিয়েছিল মনি-মুক্তা। জন্মের ছয় মাস পর সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করা হয়। তারা ভালো আছে, গত মঙ্গলবার পড়ল ১৫ বছরে। ওই দিন নিজ বাড়িতে স্বজন–প্রতিবেশীদের নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠান পালন করা হয়

জোড়া–যমজ মনি-মুক্তা পা রাখল ১৫-তে, স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার

২০০৯ সালের ২২ আগস্ট মাথা জোড়া লাগানো অবস্থায় জন্ম নেয় যমজ দুই বোন মনি ও মুক্তা। প্রায় ছয় মাস পরে ২০১০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসক এম আর খান সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করেন মনি-মুক্তাকে। জন্মদিন সবার জন্য আনন্দের হলেও মনি-মুক্তার আনন্দ আয়োজনটা এ জন্য খানিকটা বেশি। তারা গত মঙ্গলবার পা রাখল ১৫ বছরে।

মনি ও মুক্তা দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পালপাড়া গ্রামের জয় প্রকাশ পাল ও কৃষ্ণা রানী পাল দম্পতির মেয়ে। প্রতিবছর মা-বাবা স্বজন-প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করে বাড়িতে তাদের জন্মদিনের আয়োজন করেন। মনি-মুক্তার বড় আরও এক ভাই ও বোন রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে পাল পাড়ায় নিজ বাড়িতে মনি-মুক্তার জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবারও নতুন জামাকাপড় কেনা হয়েছে তাদের। বড় ভাই সজল কুমার (২৫) ও বোন দিশারী রানী (১৯) বাড়িটা সাজান। কেক কাটার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন স্বজন-প্রতিবেশীরা। মনি-মুক্তাকে ঘিরে উৎসবে মাতেন সবাই।

হাট-বাজারে গেলে অনেকেই মেয়েদের খোঁজখবর নেন। অস্ত্রোপচারের সময় ডাক্তার কোনো ফি নেননি। মেয়েরা ডাক্তার হতে চায়। যদি তাদের আশা পূরণ হয়, তাহলে মেয়েদেরকে বলব, তারা যেন রোগীর কাছে ফি না নেয়।
জয় প্রকাশ পাল, মনি–মুক্তার বাবা

মনি-মুক্তার মা-বাবা জানান, তাঁদের যমজ দুই মেয়ে ভালো আছে। দুজনে স্থানীয় ঝাড়বাড়ী দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি নাচ, গান, ছবি আঁকা শিখছে। দুজনকে একই রকমের সাইকেল কিনে দিয়েছেন তাদের বাবা। উপজেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে প্রশংসাও পেয়েছে দুজনে। পাড়ার সবাই পছন্দ করে তাদের। চার ভাইবোনের মধ্যে যমজ এ দুই বোনের খুব ভাব। দেখতেও এমন যেন আলাদা করে বলা যায় না-কে মনি, আর কে মুক্তা। তবে মনির উচ্চতা একটু বেশি বলে চিনতে সমস্যা হয় না মা-বাবার।

বাবা জয় প্রকাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাট-বাজারে গেলে অনেকেই মেয়েদের খোঁজখবর নেন। অস্ত্রোপচারের সময় ডাক্তার কোনো ফি নেননি। মেয়েরা ডাক্তার হতে চায়। যদি তাদের আশা পূরণ হয়, তাহলে মেয়েদেরকে বলব, তারা যেন রোগীর কাছে ফি না নেয়।’

কথা বলতে বলতে ২০০৯ সালের ওই দিনটাতে ফিরে যান জয় প্রকাশ। ওই বছর ২২ আগস্ট স্ত্রীর সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের জন্য পার্বতীপুরে শ্বশুরবাড়ি এলাকার একটি বেসরকারি ল্যাম্ব হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন জয় প্রকাশ। হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষের বাইরে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। সন্তান জন্ম হলো, কান্নার শব্দও শুনলেন জয় প্রকাশ।

চার ভাইবোনের মধ্যে যমজ এ দুই বোনের খুব ভাব। দেখতেও এমন যেন আলাদা করে বলা যায় না-কে মনি, আর কে মুক্তা। তবে মনির উচ্চতা একটু বেশি বলে চিনতে সমস্যা হয় না মা-বাবার

সকাল গড়িয়ে বিকেল হলেও সন্তানের মুখ দেখতে দেওয়া হয় না জয় প্রকাশকে। মনে খটকা লাগে তাঁর। বিকেল চারটায় জয় প্রকাশ জানতে পারেন, যমজ কন্যাসন্তানের বাবা হয়েছেন। আনন্দ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। সে আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। পরক্ষণেই জানতে পারেন, দুটি সন্তান জন্ম নিলেও তাদের মাথা দুটো জোড়া লাগানো। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে জয় প্রকাশের। এর পর সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের আলাদা করার ঘটনাটি সে সময় গণমাধ্যমে খবর হয়।

জয় প্রকাশ বলেন, ‘মনি-মুক্তা যখন জোড়া লাগা অবস্থায় জন্ম নেয়, আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ি। পাড়া-প্রতিবেশীরা কটুকথা বলত। বাড়ির পাশ দিয়ে কেউ গেলে মুখটা ঘুরিয়ে নিত। অনেকে দেখতে আসত, নানা কুকথা বলত। মেয়ে দুটিকে সুস্থ অবস্থায় পেয়ে মনে হচ্ছিল যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাইছি। মনি-মুক্তা আমাদের ঘরে আনন্দ এনে দিয়েছে। অভাবের মধ্যেও সেই সময়ের কষ্টগুলো ভুলে যেতে প্রতিবছর স্বজন-প্রতিবেশীদের নিয়ে আয়োজন করে মেয়েদের জন্মদিন পালন করি।’

প্রতিবছর ২২ আগস্টের অপেক্ষায় থাকে মনি ও মুক্তা। এই দিনে তাদের জন্য উপহার নিয়ে বাড়িতে স্বজনরা আসে। তাদের মা ভালো খাবারের আয়োজন করেন। নতুন জামা কিনে দেন বাবা। চলে হই-চই, উৎসবে মেতে থাকে পুরো বাড়ি।

মনি-মুক্তার এবারের জন্মদিন উপলক্ষে বাড়িতে তাদের নানা-নানি এসেছেন। নানা দেবেন্দ্রনাথ পাল (৭৬) বলেন, ‘খুবই ভালো লাগছে। এক দিন আগেই আসছি। নাতনিদের আনন্দ দেখে অনেক খুশি। কি দুর্দিন গেছে তাদের। আজকে তারা স্কুলে পড়ছে। এলাকার সবাই তাদের স্নেহ করে। তাদের মনের আশা যেন পূরণ হয়।’