Thank you for trying Sticky AMP!!

‘ভালো কাজের নেতা হতে চাই’

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাকে স্কাউটরা সায়েন্স প্রজেক্টের নানা ধরনের মডেল উপস্থাপন করে। সোমবার বিকেলে

‘বাড়িতে কখনো নিজের কাজ নিজে করিনি, এখানে এসে সব কাজই নিজেকে করতে হচ্ছে। সময়মতো ঘুম থেকে ওঠা, খাওয়াসহ এখানকার সবাই সব কাজ নিজে করছে। কেউ না পারলে আমরা তাদের শিখিয়ে দিচ্ছি। এখান থেকে ফিরে গিয়েও একইভাবে চলার চেষ্টা করব। যে বন্ধুরা এখানে আসেনি, তাদেরও বলব আমাদের মতো হতে।’

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাকে ৩২তম এশিয়া প্যাসিফিক ও একাদশ জাতীয় স্কাউট জাম্বুরিতে অংশ নেওয়া হবিগঞ্জের জেকে অ্যান্ড এইচকে হাইস্কুলের স্কাউট নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিফাত আদনান এভাবেই তার অভিব্যক্তি জানায়।

কুয়াকাটা ভিলেজের নিঝুম দ্বীপ সাব ক্যাম্পের মুক্ত স্কাউট গ্রুপের স্কাউট নেতা নবম শ্রেণির ছাত্রী আসমা সুলতানা বলে, ‘এখানে এসে স্কাউট দলের নেতা নির্বাচিত হয়েছি। এক দিনের জন্য সবাই আমার দেওয়া নির্দেশনায় কাজ করছে। আমাদের সবার উদ্দেশ্যই ভালো কিছু করা। তাই আমরা যেকোনো বাধা পেরিয়ে ভালো কাজের নেতা হতে চাই।’

শুধু আসমা সুলতানা নয়, তার মতো প্রায় সব স্কাউট এখান থেকে নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরতে চায়। একাদশ জাতীয় স্কাউট জাম্বুরির মূল প্রতিপাদ্য—‘শাবাশ-শক্তির ফোয়ারা’। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাকের শালবনে বাংলাদেশ স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ৩২তম এশিয়া প্যাসিফিক ও একাদশ জাতীয় স্কাউট জাম্বুরি।

আজ সোমবার চারটি সাব ক্যাম্পের ‘উৎসব’ নামের চ্যালেঞ্জ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, মৌচাক স্কাউট উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে ‘ফান ফ্যাক্টরি’তে স্কাউটরা আনন্দের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন স্টলে সায়েন্স প্রজেক্ট, বাইসাইকেল মেরামত, প্লাম্বিং, ক্রাফটিং ইত্যাদি শিখছে। উপজেলার মাদবপুর এলাকায় খান ব্রাদার্স নিটওয়ারি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানায় স্কাউটদের একটি দল নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের পোশাকশিল্পে উৎপাদনের আদ্যোপান্ত ব্যবহারিক দেখানো হয়েছে। উৎসব চ্যালেঞ্জে শিশুদের নানা প্রদর্শনীতে গ্রামীণ আবহ ও বিভিন্ন লোকজ ঐতিহ্য তৈরি করা হয়।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাকে স্কাউটরা সায়েন্স প্রজেক্টের নানা ধরনের মডেল উপস্থাপন করে। সোমবার বিকেলে

সোমবার বিকেলে স্কাউট প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, মৌচাকের শালবনে স্কাউটরা বিভিন্ন অবকাঠামো দিয়ে তাঁবু সাজিয়ে সবার চেয়ে ভিন্ন রূপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সংগৃহীত সেসব সরঞ্জাম দিয়ে তারা তাঁবুতে বিভিন্ন জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার তাক, চুলা, পয়োনিষ্কাশনের নালা, আঙিনা, ফটক, পুকুর তৈরি করছে। এ ছাড়া নিজস্ব তাঁবুকে রঙিন সাজে সজ্জিত করতে চলছে নানা আয়োজন। দেখা যায়, অনেকেই তাঁবুর সামনের আঙিনার মাটি সমান করে পানি ছিটিয়ে বসবাস উপযোগী করছে। দেখলে মনে হয়, পুরো জাম্বুরিতে যেন তাঁবু বর্ণিল করে সজ্জিত করার এক অঘোষিত প্রতিযোগিতা চলছে।

স্কাউট কর্মকর্তারা জানান, স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বঙ্গবন্ধু অ্যারিনায় উডব্যাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে স্কাউটের বয়স্ক নেতারা নির্দিষ্ট সময় সেবা প্রদান করে লক্ষ্যে পৌঁছে উডব্যাজ অর্জন করেন। উডব্যাজধারী স্কাউটরা দুই বিটসহ সবুজ স্কার্ফ পরিধান করেন। সেসব স্কাউটকে নিয়ে জাম্বুরি উপলক্ষে বিশেষ উডব্যাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন উডব্যাজ পরিচালক আবু জাফর সাব্বির আহমেদ। বিশেষ স্কাউট ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কমিশনার (প্রশিক্ষণ) আমিনুল এহসান খান, প্রধান স্কাউট ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক জাতীয় কমিশনার মিহির কান্তি মজুমদার। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ স্কাউটের জাতীয় কমিটির সভাপতি মো. শাহ আলম।

বাংলাদেশ স্কাউটসের জাতীয় উপকমিশনার মীর মোহাম্মদ ফারুক বলেন, এখানে স্কাউটরা যা শিখছে, তা তাদের ব্যক্তিজীবনে কোনো না কোনোভাবে কাজে লাগবে। এ শিক্ষা কাজে লাগিয়ে তারা ভালো কিছু করে এগিয়ে যাবে।

১৯ থেকে শুরু হওয়া এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক স্কাউট জাম্বুরি শেষ হবে ২৭ জানুয়ারি। এতে ৮ হাজার স্কাউট সদস্য, ১ হাজার ইউনিট লিডারসহ মোট ১১ হাজার সদস্য অংশ নিচ্ছেন। জাম্বুরিতে রয়েছে ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, স্কাউট চায়না (তাইওয়ান), থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, কানাডা, বিশ্ব স্কাউট সংস্থা ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিনিধি।