Thank you for trying Sticky AMP!!

কাবিখার টাকায় খাল ভরাট 

অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতাকে সুবিধা দিতে খাল ভরাট করে রাস্তা করা হচ্ছে।

রাস্তা নির্মাণের নামে চলছে খাল ভরাটের আয়োজন। মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কলমা ইউনিয়নের কলমা বাজার এলাকায়

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের বরাদ্দের টাকায় স্থানীয় ব্যক্তিদের জন্য রাস্তা করার নামে প্রবাহিত একটি খাল ভরাট করা হচ্ছে। এতে খালটি সংকুচিত হয়ে প্রবাহ বন্ধের পথে। খালটির অবস্থান উপজেলার কলমা ইউনিয়নের কলমা বাজার এলাকায়।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের যোগসাজশে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সদস্যকে সুবিধা দিতে রাস্তা নির্মাণের নামে খাল ভরাট করা হচ্ছে। তবে এ কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দাবি, যেখানে ভরাট করা হচ্ছে, সেটি খাল নয়।

কোনো অবস্থাতে খাল ভরাট, খালের প্রবাহ বন্ধ করা যাবে না। খাল ভরাট করে রাস্তাও করা যাবে না। খালের জায়গায় খাল থাকবে, রাস্তা করতে হলে খাল বাদ দিয়ে করতে হবে।
মো. জাকির হোসেন, ইউএনও, লৌহজং উপজেলা 

উপজেলা ভূমি কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, রেকর্ড অনুসারে খালটির দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৩৬০ ফুট। প্রস্থ ৬২ ফুট। খালটির উৎপত্তি পদ্মা নদী থেকে। তবে স্থানীয় ব্যক্তিদের দাবি, ভরাট করতে থাকা খালটি কলমা খাল নামে পরিচিত। খালটি পদ্মা নদী থেকে উপজেলার ভড়াকর এলাকা হয়ে কলমা বাজার দিয়ে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ফজুশা এলাকায় গিয়ে মিশেছে। খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় ছয় কিলোমিটার।

গত মঙ্গলবার কলমা বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাজারের পূর্বপাশে খালের অংশে ৮ থেকে ১০টি দোকান করা হয়েছে। এতে সেতুর অংশে খালটি অনেকটা সরু হয়ে গেছে। এর মধ্যে কয়েক দিন আগে সেতুর মাঝামাঝি অংশ থেকে খালের পশ্চিম পাশে নতুন করে বাঁশ পুঁতে বড় বড় বাঁশের মাচা ও নেট দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী খালটির প্রস্থ ৬২ ফুট হলেও দখল ও ভরাটের ফলে ওই জায়গায় তা অনেক কমে এসেছে। দুই পাশ সংকুচিত হয়ে খালের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খালটি দিয়ে কয়েক বছর আগে নৌকা ও মালবাহী ট্রলার চলত। এ খালেই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ গোসল করতেন। খরস্রোতা ছিল খালটি। এক জায়গায় ডুব দিলে স্রোত ২০-৩০ দূরে ঠেলে নিয়ে যেত। কয়েক বছর ধরে নৌ চলাচল নেই। তবে পানির ভালো প্রবাহ ছিল। বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন নানা কাজে খালের পানি ব্যবহার করেন। বালু ফেলে খালটি ভরাট করা হলে উপজেলার অন্য খালের মতো কলমা খালটিও অস্তিত্ব হারাতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা।

খালের পূর্বপাশে দোকানগুলো স্থানীয় আবদুর রব ফকিরের। তাঁর দাবি, কেনা জায়গায় তিনি দোকান করেছেন। দোকান করার ক্ষেত্রে খালের ৬২ ফুট জায়গা ছেড়ে করা হয়নি, এমন প্রশ্ন করা হলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি আবদুর রব। তিনি বলেন, ‘খাল দখল করলে করেছি, তাতে আপনার কী।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খালের পশ্চিম পাশে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইদ্রিস শেখ ভরাট করছেন। খালটির পাশেই তাঁর একটি জায়গা রয়েছে। সেখানে যাতায়াতের উদ্দেশ্যে খাল ভরাট করে রাস্তা করা হচ্ছে। কাবিখার টাকায় রাস্তাটি ভরাট করা হচ্ছে। এ কাজে ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা জড়িত থাকায় কেউ ভয়ে প্রতিবাদও করেন না। কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না স্থানীয় ভূমি কার্যালয়ের কর্মকর্তা এবং প্রশাসনের লোকজনও। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, খাল ভরাট অন্যায়, সেটি করা হচ্ছে সরকারি প্রকল্পের টাকায়। যে প্রকল্পের মাধ্যমে হচ্ছে, সেসব কাজ হতদরিদ্রদের করার কথা, সেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রেজার। সব মিলিয়ে পুরো কাজটিতেই বড় অনিয়ম হচ্ছে। 

অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতা ইদ্রিস শেখ বলেন, কোথাও খাল দখল করা হয়নি। সরকারি প্রকল্পের টাকায় মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তা করা হচ্ছে। এর বাইরে নিজের জায়গা নিজের টাকা খরচ করে ভরাট করছেন বলে দাবি করেন ইদ্রিস। 

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোতালেব শেখেরও দাবি, খাল ভরাট করা হচ্ছে না। সরকারি জায়গায় স্থানীয় কুমারবাড়ী থেকে কলমা বাজার সেতু পর্যন্ত প্রায় ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থের মাটির রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। এই জনপ্রতিনিধি বলেন, রাস্তাটি করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তাঁর প্রাপ্ত কাবিখা প্রকল্প থেকে ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। সে টাকায় ভরাট কাজ হচ্ছে। 

খাল ভরাটের বিষয়ে লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো অবস্থাতে খাল ভরাট, খালের প্রবাহ বন্ধ করা যাবে না। খাল ভরাট করে রাস্তাও করা যাবে না। খালের জায়গায় খাল থাকবে, রাস্তা করতে হলে খাল বাদ দিয়ে করতে হবে।’