Thank you for trying Sticky AMP!!

শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় বাসিন্দাদের হামলার প্রতিবাদে ফটক আটকে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের বিক্ষোভ। আজ বিকেল চারটায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে

মাইকে ডেকে লোক জড়ো করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় বাসিন্দাদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে রেলক্রসিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গত মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনার জেরে এ হামলা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হওয়া এ হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে বিক্ষোভ করছেন শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা। এ অংশ শাখা ছাত্রলীগের উপপক্ষ চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) নামে পরিচিত। উপপক্ষটি নিজেদের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটির জেরে ছাত্রলীগের উপপক্ষ বিজয় ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রসহ চারজন আহত হয়েছিলেন। যে কর্মচারীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়েছিল, তাঁর নাম বখতিয়ার উদ্দিন। তিনি স্থানীয় ফতেপুর ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে বিচারের দাবি করছিলেন বখতিয়ারের অনুসারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

সর্বশেষ আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর মাইক দিয়ে ডেকে স্থানীয় লোকদের জড়ো করেন বখতিয়ারের অনুসারীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট এলাকায় চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সড়কও অবরোধ করেন। অবরোধ চলার সময় বেলা তিনটার দিকে রেলক্রসিং এলাকায় অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থীকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন স্থানীয় লোকজন।

যেসব শিক্ষার্থী স্থানীয়দের হামলায় আহত হয়েছেন, এর মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁরা হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরের মাইশা তাসনীম ও শাহাদাত হোসেন।

জানতে চাইলে শাহাদাত প্রথম আলোকে বলেন, মাইশার আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ট্রেনে ঢাকা যাওয়ার কথা ছিল। এ কারণে তিনি তাঁকে এগিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন। তিনটার দিকে ১ নম্বর গেটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গোলচত্বর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঠেন তাঁরা। পরে অটোরিকশাটি রেলক্রসিং এলাকায় পৌঁছালে স্থানীয় লোকজন পথ আটকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন তাঁদের।

শাহাদাত বলেন, তাঁর বন্ধু মাইশার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করেছেন স্থানীয় লোকজন। মাথার চুলও কিছুটা পুড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা। পরে পুলিশ এসে তাঁদের উদ্ধার করে। তিনি এ ঘটনার বিচার চান। কোনো কারণ ছাড়াই তাঁদের দুজনকে মারধর ও গালাগাল দেওয়া হয়েছে।

তবে মারধরের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন স্থানীয় বাসিন্দা বখতিয়ার উদ্দিন। তিনি বলেন, কাউকে মারধর করা হয়নি। শান্তিপূর্ণভাবে তাঁরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন।

স্থানীয়দের হামলায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত এক শিক্ষার্থী। আজ বিকেল পাঁচটায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে

ছাত্রলীগের বিক্ষোভ
এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হওয়া এ হামলার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে মূল ফটক আটকে বিক্ষোভ করছে ছাত্রলীগের উপপক্ষ। বিকেল চারটা থেকে এ বিক্ষোভ শুরু হয়। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দাবি, এ ঘটনায় বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের অবরোধ চলবে।

যে অংশটি বিক্ষোভ করছে, এটির বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতৃত্ব দেন শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মির্জা খবীর সাদাফ। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এর আগেও বিভিন্ন সময় স্থানীয় বাসিন্দারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। মারধর করেছে। তবে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এ কারণে বারবার হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটছে। বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল সিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য মো. সেকান্দর চৌধুরী (প্রশাসন) প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমানে কমিটি নেই। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ, মারামারি, চাঁদাবাজি ও সাংবাদিককে মারধরের ঘটনার পর এ কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্র। কমিটি না থাকলেও নেতা-কর্মীরা সক্রিয় আছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও আরেকটি পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। এ দুটি পক্ষের আবার ১১টি উপপক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে বিজয় ও চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) নামের দুটি মহিবুল হাসানের ও বাকি ৯টি আ জ ম নাছির উদ্দীনের।