Thank you for trying Sticky AMP!!

আঁকাবাঁকা আঙুল দিয়ে লিখে জিপিএ-৫ পেল নাজমীন

নাজমীন সুলতানা

শারীরিক প্রতিবন্ধী নাজমীন সুলতানার হাতের আঙুল কোনোটা ছোট, কোনোটা বাঁকা। আবার কোনোটা একেবারেই নেই। এমনই আঙুল দিয়ে কলম ধরে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। ফলাফল প্রকাশের পর নাজমীনের মুখে হাসি। অদম্য মেধাবী মেয়েটির ইচ্ছা—পড়ালেখা করে সে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করবে।

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার জালালপুর গ্রামের নাজমুল হোসেন ও ফারজানা খাতুন দম্পতির বড় মেয়ে নাজমীন। তাঁদের নাইমা (১১) ও ফাহিম (৪) নামের আরও দুটি সন্তান আছে। জালালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিয়ে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে নাজমীন।

নাজমীন বলে, জন্ম থেকেই তার হাত-পায়ের আঙুলগুলো ঠিকমতো কাজ করে না। দুই হাতের দুটি করে আঙুল নেই। দুটি বাঁকা আর একটি লম্বা কিন্তু শুকনা। এ অবস্থায় সে বড় হয়েছে। তার হাত-পায়ের আঙুল দেখে সবাই বলত, সে পড়ালেখা করতে পারবে না। কীভাবে কলম ধরবে? এগুলো শুনে তার খারাপ লাগত। তবে তার ইচ্ছাশক্তির কারণে সে পড়ালেখা করতে পেরেছে। পঞ্চম শ্রেণির পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল। করোনার কারণে অষ্টম শ্রেণিতে পরীক্ষা দিতে পারেনি। বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা ছাড়াই নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হয়।

নাজমীন বলে, দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ায় অন্যদের মতো সে প্রাইভেট পড়তে পারেনি। তারপরও নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেত এবং বাড়িতে পড়ালেখা করত। তার আশা ছিল, এসএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পাবে।

সে বলে, ‘যখন ফল শুনতে পেয়েছি, খুবই খুশি হয়েছি। আমার ইচ্ছা কোটচাঁদপুর সরকারি কেএমএইচ ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হওয়ার। চিকিৎসক হয়ে দেশের মানুষের সেবা করা।’

নাজমীনের মা ফারজানা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, মাঠে তাঁদের কোনো চাষযোগ্য জমি নেই। স্বামী নাজমুল হোসেন অন্যের জমিতে কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। মাঠে কিছু জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেন। এভাবে তাঁদের সংসার চলে যাচ্ছে। মেয়েটা পড়ালেখায় ভালো হওয়ায় কষ্ট হলেও খরচ জোগাড় করতে হয়। এখন কলেজে ভর্তি হলে তাঁর খরচ আরও বেড়ে যাবে। এখন কীভাবে সেই খরচ জোগাবেন, সেটা নিয়েই দুশ্চিন্তা।

নাজমীনের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা. আক্তার জাহান প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েটি খুবই ভালো ও মেধাবী। তাঁরা সব সময় তার দিকে খেয়াল রেখেছিলেন। নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। মেয়েটির বাবা দরিদ্র। পড়ালেখায় সহযোগিতা করতে পারলে, সে ভালো করতে পারবে। তার ইচ্ছা চিকিৎসক হওয়া, সেই ইচ্ছাও পূরণ হবে।