Thank you for trying Sticky AMP!!

চোঙা পিঠা তৈরির ডলু বাঁশ টুকরা করে রাখা হয়েছে। গত সোমবার মৌলভীবাজারের বড়লেখা সদরের ষাটমায়

হারিয়ে যাচ্ছে ‘চোঙা’ পিঠা 

পরিবেশ-প্রকৃতির পালাবদলে ডলু বাঁশ, বাঁশ পোড়ানোর উপকরণ দুর্লভ হওয়ায় ‘চোঙা’ পিঠা ক্রমে হারিয়ে যাওয়ার পথে। 

পৌষসংক্রান্তিতে ডলু বাঁশ আর চোঙা পিঠা গ্রামীণ সংস্কৃতির অন্যতম একটি অনুষঙ্গ ছিল। আগুনে পুড়িয়ে বাঁশের ভেতরে বিন্নি চাল, বিন্নি চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি এই পিঠা শীতের সকালকে উষ্ণতায় ভরিয়ে রেখেছে একটা সময়। কিন্তু পরিবেশ-প্রকৃতির পালাবদলে ডলু বাঁশ, বাঁশ পোড়ানোর উপকরণ দুর্লভ হওয়ায় ‘চোঙা’ পিঠা ক্রমে হারিয়ে যাওয়ার পথে। 

 চোঙা পিঠা মৌলভীবাজারে পরিচিত একটি নাম। বাঁশ পুড়িয়ে তৈরি হওয়ায় অনেকের কাছেই এই পিঠার আলাদা আকর্ষণ আছে। তবে এখন এই পিঠা তার ঐতিহ্য, গৌরব হারানোর পথে। শুধু পৌষসংক্রান্তির সময় এলেই জেলার কিছু হাটবাজারে চোঙা পিঠা তৈরির উপকরণ ডলু বা কালি বাঁশের দেখা মেলে। 

পৌষসংক্রান্তির সময় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মুন্সীবাজারে ডলু বাঁশ টুকরা করে আঁটি বেঁধে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া পৌষসংক্রান্তির পরও বড়লেখা উপজেলা সদরের ষাটমা এলাকায় কিছু ডলু বাঁশ বিক্রি হচ্ছে। বড়লেখায় বিক্রেতারা ডলু বাঁশের সঙ্গে বিন্নি ধানের চালও বিক্রি করেন। 

গতকাল শুক্রবার বড়লেখার আইনুল হক বলেন, ‘ডলু বাঁশ এখন একদম কম পাওয়া যায়। পৌষ-মাঘ এই দুই মাস আমরা বাঁশ বেচি। সব দিন সমান বিক্রি অয় (হয়) না। তবে পৌষ মাসেই বেশি বিক্রি অয়। সাথে বিরইন চাউলও (বিন্নি চাল) বেচি।’ তিনি জানিয়েছেন, ২০ টুকরার একটি আঁটি আকার অনুযায়ী ১০০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। দিনে দেড় হাজার থেকে তিন হাজার টাকার বাঁশ বিক্রি হয়।

শীতকালে, বিশেষ করে পৌষসংক্রান্তির সময়টিতে এই পিঠা তৈরি হয়। একসময় অনেকটা নিয়মের মতো ঘরে ঘরে পিঠা তৈরির আয়োজন ছিল। নিজেরা খেতেন, আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো হতো। অনেকে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে তৈরি পিঠা পাঠাতেন। এটি চোঙা পিঠা, বাঁশ পিঠা বা চুং পিঠা—এ রকম নামে পরিচিত।

 শীতের এই সময়ে ধানের শুকনা খড়, ঢেঁকিছাঁটা চাল, প্রয়োজনীয় বাঁশ ও স্থানীয় হাওর-বাঁওড়ের মাছের সহজলভ্যতা ছিল অতীতে। তখন প্রায় প্রতি বাড়িতেই এই পিঠা তৈরির ধুম পড়ত, পিঠা তৈরিকে কেন্দ্র করে হইচই হতো। সেই ঐতিহ্য এখনো কিছু আগ্রহী ও শৌখিন মানুষ সীমিত আকারে ধরে রাখলেও তার ব্যাপকতা আর আগের মতো নেই। 

সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠক আহমদ আফরোজ গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘ছোটবেলায় দেখেছি, প্রায় ঘরেই চোঙা পিঠা তৈরি হতো। কিন্তু এখন সেটা চোখে কম পড়ে। তবে কত দিন টিকে থাকবে, তা বলা যাচ্ছে না। চোঙা পিঠার অন্যতম উপকরণ হচ্ছে ডলু বাঁশ, সেটাই দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে।’