Thank you for trying Sticky AMP!!

আচরণবিধি ভেঙে নারায়ণগঞ্জে শামীম ও সেলিম ওসমানের ব্যানার-ফেস্টুনের ছড়াছড়ি

নারায়ণগঞ্জ শহরের আল্লামা ইকবাল রোড এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটিতে শামীম ওসমানের ছবি–সংবলিত ফেস্টুন লাগানো হয়েছে

আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায়, দেয়াল, খুঁটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমান ও তাঁর ভাই জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম ওসমানের পক্ষে ছবি–সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। দুই প্রার্থীর পক্ষে নানা কৌশলে রঙিন ব্যানার–ফেস্টুন লাগিয়েছেন তাঁদের অনুসারী নেতা–কর্মীরা।

শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। তাঁর ভাই সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শহরের আল্লামা ইকবাল রোড এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটিতে শামীম ওসমানের ছবি–সংবলিত দুটি ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। ফেস্টুনে লেখা রয়েছে, ‘আমার জন্য দোয়া করবেন, আপনাদের খুশি করে মহান সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করতে পারি।’ শামীম ওসমানের পক্ষে প্রচারণা চালাতে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম ফেস্টুন দুটি লাগিয়েছেন। এ ছাড়া শহরের চাষাঢ়া, চানমারী, ইসদাইরসহ বিভিন্ন এলাকায় তাঁর পক্ষে ছবি–সংবলিত বিভিন্ন ফেস্টুন দেখা গেছে।

ইসদাইর রাবেয়া হোসেন উচ্চবিদ্যালয়ের মূল ফটকে টাইলস দিয়ে শামীম ওসমানের ছবি লাগানো আছে। জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, স্কুলটি অনেক থেকে আগে ভোটকেন্দ্র। স্কুল কর্তৃপক্ষ সংসদ সদস্য হিসেবে তাঁর (শামীম ওসমান) ছবি লাগিয়েছেন। ভোটের সময় প্রয়োজনে ছবিটি ঢেকে দেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের লোহার বেড়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানের পক্ষে ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। শনিবার বিকেলে

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালার ৭ ধারা অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী কিংবা তাঁদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি সিটি করপোরেশন এবং পৌর এলাকার দালান, দেয়াল, গাছ, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটি; সরকারি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের স্থাপনায়; বাস-ট্রাক কিংবা অন্য কোনো যানবাহনে পোস্টার-লিফলেট বা হ্যান্ডবিল টানাতে পারবেন না। তবে প্রতীক বরাদ্দের পর পোস্টার সাদা-কালো রঙের পোস্টার টানাতে পারবেন। ১২ ধারা অনুযায়ী, ভোট গ্রহণের নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ আগে কোনো প্রার্থী কোনো ধরনের প্রচার শুরু করতে পারবেন না।

সরেজমিনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের লোহার বেড়া, গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটিতে শামীম ওসমানের ছবি–সংবলিত ফেস্টুন দেখা গেছে। ওই কার্যালয়ের বিপরীতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি’ শিরোনামে শামিয়ানা টাঙিয়ে ক্যাম্প তৈরি করেছে বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ জেলা ও মহানগর কমিটি। অন্যদিকে চানমারীতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে মহান বিজয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শামীম ওসমানের স্ত্রী সালমা ওসমানের পক্ষে বিলবোর্ড লাগিয়েছেন কর্মী–সমর্থকেরা। বিলবোর্ডের বিপরীত পাশে হরতাল, অবরোধ ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শামীম ওসমান ও তাঁর স্ত্রীর ছবি–সংবলিত শামিয়ানা টাঙিয়ে ক্যাম্প বানিয়েছে ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের বন্দর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম ওসমানের পক্ষে গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি, উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের দেয়ালে ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। সেসব ফেস্টুনে প্রার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি, ফেরি উদ্বোধনের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। আচরণবিধির লঙ্ঘন করে শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের পক্ষে এসব ব্যানার–ফেস্টুন লাগিয়েছেন তাঁদের কর্মী–সমর্থকেরা।

নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রার্থীদের ছবি–সংবলিত ব্যানার–ফেস্টুন টানানো আচরণবিধির লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আবদুল হামিদ ভাষানী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের উচিত তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম ওসমানের পক্ষে ফেস্টুন টানিয়েছেন কর্মী–সমর্থকেরা

অভিযোগের বিষয়ে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতা শাহ্ নিজাম প্রথম আলোকে বলেন, অতি উৎসাহী হয়ে তাঁদের কেউ হয়তো ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়েছিলেন। তাঁরা হয়তো আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি জানেন না। অনেকগুলো অপসারণ করা হয়েছে। আর যেগুলো আছে, সেগুলো দ্রুত সরানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সভাপতি ধীমান সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ব্যানার–ফেস্টুন টাঙানো প্রার্থীদের পক্ষে কৌশলী প্রচারণা। এগুলো আচরণবিধি লঙ্ঘন। তিনি বলেন, নির্বাচনী আইনে বলা আছে, রঙিন পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন লাগানো যাবে না। প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচারণা চালানো যাবে না। কিন্তু তাঁদের পক্ষে কৌশলে রঙিন ব্যানার–ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দ্রুত এগুলো অপসারণ এবং প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

প্রার্থীর ছবি-সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যেসব ব্যানার-ফেস্টুনে প্রার্থীদের ছবি আছে, সেগুলো আচরণবিধির লঙ্ঘন। সেগুলো অপসারণ করা হবে।