Thank you for trying Sticky AMP!!

মানিকগঞ্জে শীতে বেড়েছে সবজির দাম

শৈত্যপ্রবাহে মানিকগঞ্জে বাজারগুলোতে অধিকাংশ সবজির দাম বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। রোববার সকাল ১০টার দিকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড কাঁচাবাজারে

ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১০টা। কিন্তু সূর্যের দেখা নেই। কুয়াশার চাদরে মোড়া চারপাশ। এর মধ্যেই সরগরম হয়ে ওঠে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড কাঁচাবাজার। বাজারে কয়েকজন ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সবাই জানালেন, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে বেড়েছে সবজির দাম। বাড়তি দামে অনেকটা বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী স্বামী কর্মস্থলে যাওয়ায় গৃহকর্ত্রী হোসেনে আরা (৪০) প্রতিবেশী এক নারীকে নিয়ে সবজি কিনতে বাজারে এসেছেন। আধা কেজি কাঁচা মরিচ ও এক কেজি শিম কিনেছেন তিনি। কাঁচা মরিচের দাম জিজ্ঞেস করতেই হোসনে আরা বলেন, ‘চার দিন আগে ৫০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ কিনলাম। আজ ১০০ টাকা কেজি। এক কেজি শিম ৪০ টাকায় কিনতে হলো। অথচ চার দিন আগেও ২৫ টাকায় কিনেছি।’

সবজির দাম প্রসঙ্গে কথা হয় বাসস্ট্যান্ড কাঁচাবাজারের সবজির ব্যবসায়ী কাজল হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানালেন, শৈত্যপ্রবাহে সবজির সরবরাহ কিছুটা কমেছে। আড়ত থেকে বাড়তি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। এ কারণে তাঁদেরও কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তীব্র শীতে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় পাইকারি সবজির বাজারে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ৫০ টাকা ছিল, রোববার তা বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। এক কেজি আলু ২২ টাকা থেকে ২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বড় আকারের প্রতিটি ফুলকপি ২০ টাকায় বিক্রি হলেও সপ্তাহের ব্যবধানে তা বেড়ে ৪০ টাকা হয়েছে। গোল বেগুন কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতিটি লাউ ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ৭০ টাকা হয়েছে। তবে গাজর ও পেঁয়াজের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি কেজি গাজর ৪০ টাকা এবং পেঁয়াজ ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জেলা শহরের অন্যান্য বাজার ঘুরেও একই চিত্র দেখা যায়। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড বাজারের পাশে রিকশা রেখে সবজি কিনতে বাজারে আসেন রিকশাচালক জেলা সদরের পশ্চিম সেওতা গ্রামের নূরু মিয়া। তিনি বলেন, ‘এহন শীতকাল। তরিতরকারির (সবজি) দাম কম থাহার কথা, কিন্তু বাজারে সব তরিতরকারির দাম বেশি। আমাগো মতো গরিব মাইনষের সংসার চালানো কী যে কষ্ট! শীতের মধ্যে যাত্রীও কম, রিকশা চালাইয়্যা যা পাই, তাতে আর সংসার চলবার চায় না!’

জেলার সিঙ্গাইর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন সবজির ব্যাপক আবাদ হয়ে থাকে। এ ছাড়া জেলা সদর, সাটুরিয়া উপজেলাতেও সবজির আবাদ হয়। কৃষকদের সঙ্গে বথা বলে জানা যায়, সিঙ্গাইরের সবজি ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ সাভার, গাজীপুরের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। জেলা সদর ও সাটুরিয়ার সবজি জেলা সদরে কম আসে। সেখানকার অধিকাংশ সবজিও ঢাকার কাঁচাবাজারে পাঠানো হয়।

সবজির দাম মাঝেমধ্যেই ওঠানামা করে বলে জানান মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা আইয়ুব আলী। তিনি বলেন, শীতকালে সবজির দাম কিছুটা কম থাকে। তবে এবার শীতের শুরু থেকেই সবজির দাম তুলনামূলক বেশি। আড়ত থেকেই সবজি কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। এ কারণে তাঁদেরও বেশি দামে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে।

এসব বিষয়ে কথা হয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ করা হয়। সবজির দাম ওঠানামা করে থাকে। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে সবজির দাম কিছুটা বেশি। তবে ভোক্তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বেশি দামে সবজি বিক্রি করলে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।