Thank you for trying Sticky AMP!!

ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষের পর স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক আটকে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। গতকাল রাত সাড়ে আটটায় দুই নম্বর গেট এলাকায়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় এ কমিটি গঠন করা হয়। চার সদস্যের এ কমিটিকে আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) মো. সেকান্দর চৌধুরী ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দফায় দফায় ছাত্রলীগের উপপক্ষ বিজয়ের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের চারজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় রাত সাড়ে ৯টায় স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি, কর্মচারী ও পুলিশ নিয়ে বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বৈঠকেই তদন্ত কমিটি গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।

জানতে চাইলে সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) মো. সেকান্দর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটিকে আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চার সদস্যের এ কমিটিতে ফলিত রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীনকে আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ডেপুটি রেজিস্ট্রার গাজী নূর উদ্দিনকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন ও সৌরভ সাহা। বেলা সাড়ে ১১টায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির চিঠি ইস্যু করা হচ্ছে।

যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানো ছাত্রলীগের এ উপপক্ষটি বিজয় নামে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় সাপ্তাহিক বাজারের দিন ছিল।

এদিন অন্য দিনের তুলনায় এ এলাকায় লোকজনের সমাগম বেশি হয়। বিকেল পাঁচটার দিকে ওই বাজারে ইফতারি কিনতে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কর্মচারী বখতিয়ার উদ্দিন। এ সময় তাঁর মোটরসাইকেলের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। পরে এ নিয়ে বখতিয়ারের সঙ্গে ওই ছাত্রের কথা-কাটাকাটি হয়।

এ সময় ঘটনাস্থলে ছাত্রলীগের কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের জামিন আহমেদও উপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে বখতিয়ারের সঙ্গে জামিনেরও কথা-কাটাকাটি হয়। এর সূত্র ধরেই উপস্থিত ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী ও বখতিয়ারের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

বখতিয়ার স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। হাতাহাতির এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক কর্মচারী ও হাটহাজারী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে এলে আবার হাতাহাতি হয়।

এরপর বখতিয়ার ও মিজানুরের অনুসারীরা লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের ওই কর্মীদের ধাওয়া দেয়। এ খবর জানাজানি হওয়ার পর বিজয় উপপক্ষের অনুসারীরা আলাওল ও এ এফ রহমান হল থেকে বের হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ হয়। পরে রাত ৯টার দিকে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের এ উপপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০২২ সালের ২২ মে চার ঘণ্টাব্যাপী দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। এতে ছাত্রলীগের তিন কর্মী আহত হয়েছিলেন। ছাত্রলীগ কর্মীর মোটরসাইকেলের সঙ্গে স্থানীয় এক ব্যক্তির ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কা লাগার পর তর্কাতর্কির জেরে এ সংঘর্ষ হয়েছিল।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমানে কমিটি নেই। গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ, মারামারি, চাঁদাবাজি ও সাংবাদিককে মারধরের ঘটনার পর এ কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্র। কমিটি না থাকলেও নেতা–কর্মীরা সক্রিয় আছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও আরেকটি পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন। এ দুটি পক্ষের আবার ১১টি উপপক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে বিজয় ও চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) নামের দুটি পক্ষ মহিবুল হাসানের ও বাকি ৯টি আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।