Thank you for trying Sticky AMP!!

কৃষকেরা হাটে পেঁয়াজ আনা মাত্রই ব্যাপারীরা কিনে নিচ্ছেন

কৃষকের কাছ থেকে পেঁয়াজ কেনার পর ঢাকায় পাঠানোর জন্য বস্তায় ভরা হচ্ছে। সোমবার পাবনার সাঁথিয়ার করমজা চতুরহাটের একটি আড়তে

পেঁয়াজের ভান্ডার বলে পরিচিত পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলার কৃষকের ঘরে মজুত পেঁয়াজের পরিমাণ কমে এসেছে। এ কারণে হাটে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই উপজেলার হাটগুলোয় পাইকারি হিসাবে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে বেড়েছে। আজ বিভিন্ন হাটে পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৮৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষকেরা হাটে পেঁয়াজ আনামাত্রই ব্যাপারীরা কিনে নিচ্ছেন।

দুই উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের দেওয়া হিসাবে আজ সোমবার পর্যন্ত দুই উপজেলায় কৃষকের ঘরে ২৫ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ মজুত আছে। এর মধ্যে সাঁথিয়ায় আছে ১৯ হাজার ও সুজানগরে আছে ৬ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন। তবে বিভিন্ন হাটের ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের মতে, দুই উপজেলায় পেঁয়াজের মজুত প্রায় শেষ। গুটিকয় কৃষকের ঘরে থাকা শেষ অংশের পেঁয়াজ তাঁরা হাটে নিয়ে আসছেন। সেই পেঁয়াজ নিয়েও ব্যাপারীদের মধ্যে একরকম কাড়াকাড়ি চলছে।

সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনকারী উপজেলা হলো সুজানগর। এরপরই সাঁথিয়ার অবস্থান। সুজানগর উপজেলায় এবারের মৌসুমে ১৮ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ১৬০ টন পেঁয়াজ পাওয়া গেছে। সাঁথিয়া উপজেলায় ১৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ করে ১ লাখ ৮৮ হাজার টন পেঁয়াজ পাওয়া গেছে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হয়েছে বেশ আগেই। কৃষকেরা এখন আগাম বা মূলকাটা জাতের পেঁয়াজের আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এবার সাঁথিয়ায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টর ও সুজানগরের ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আগাম পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সাধারণত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে দুই উপজেলার উঁচু জমিতে আগাম পেঁয়াজের আবাদ শুরু হয়ে ডিসেম্বরের শেষ দিকে সেই পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে ওঠে। কিন্তু এবার বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের আবাদ নির্ধারিত সময়ে শুরু হতে পারছে না। আর যদি বৃষ্টি না হয়, তবে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে আগাম জাতের পেঁয়াজের আবাদ শুরু হবে।

আজ সরেজমিন সাঁথিয়া উপজেলার বোয়ালমারী, করমজা চতুরহাট, কাশীনাথপুরসহ কয়েকটি পেঁয়াজের হাটে গিয়ে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ কম। কৃষকেরা হাটে পেঁয়াজ আনামাত্রই ব্যাপারীরা ঘিরে ধরে ভ্যানের ওপর থেকেই কিনে নিচ্ছেন। আড়তদার, ব্যবসায়ী ও কৃষকদের ভাষ্য, কৃষকের ঘরে সামান্য পেঁয়াজই অবশিষ্ট আছে। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারের পেঁয়াজ আমদানি বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই।

ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা বলছেন, সপ্তাহখানেক আগেও দেশি পেঁয়াজের দাম পাইকারিতে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা ছিল। এখন দাম হয়েছে ৮৫ থেকে ৮৭ টাকা।

আজ সাঁথিয়ার বোয়ালমারীতে ছিল হাটবার। হাটের পেঁয়াজের আড়তদার ও ব্যবসায়ী মো. রাজা হোসেন বলেন, ‘আমাগরে এই হাটে চাহিদার তুলনায় আজ পেঁয়াজ আসছে একেবারেই কম। সব মিলিয়ে আজকের হাটে ১০ গাড়ি (প্রতি গাড়িতে গড়ে ১৩ থেকে ১৪ মেট্রিক টন) পেঁয়াজ আসছে। এই পেঁয়াজের বেশির ভাগই ঢাকায় যাবে। আর বাজারে যে টান অবস্থা, তাতে দেশি পেঁয়াজের দাম আরও বেশি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এলসিতে (ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি) প্রচুর পেঁয়াজ ঢুকতেছে দেইখ্যা বাজার এর চাইতে আর বাড়তে পারতেছে না। আমার ধারণা, আগামী দু-এক দিনে দেশি পেঁয়াজের দাম আরও কমবে।’

সাঁথিয়ার করমজা চতুরহাটের পেঁয়াজের আড়ত মুন্নাফ ট্রেডার্সে কথা হয় পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ফকরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকায় পাঠানোর জন্য ১৫ থেকে ১৬ বস্তা দেশি পেঁয়াজ কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে কিনতে পেরেছেন মাত্র ৮ বস্তা। তাঁর আড়তের ব্যবস্থাপক উজ্জ্বল হোসেন বলেন, চাহিদার চেয়ে পেঁয়াজ কম আসছে। যতটুকু আসছে, ব্যাপারীরা কিনে নিচ্ছেন।

সুজানগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাফিউল ইসলাম ও সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, সামনেই পেঁয়াজের নতুন মৌসুম শুরু হতে যাচ্ছে। কৃষকের ঘরে দুই উপজেলা মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ মজুত আছে। পেঁয়াজের আবাদ করতে গিয়ে গত দুই বছর কৃষকেরা লোকসান দিয়েছেন। এবার ভালো দাম পেয়ে কৃষকেরা লোকসান কিছুটা হলেও পোষাতে পারবেন।