Thank you for trying Sticky AMP!!

ঈদের আনন্দ নেই, আছে শুধু দীর্ঘশ্বাস

১০ বছর বয়সী হামিমের হাতে বাবা আলিয়ার রহমানের ছবি। বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বগা গ্রামে

১০ বছর বয়সী হামিমের কাছে বাবার স্মৃতি বলতে আছে শুধু একটা ছবি। ঘরের বারান্দায় বসে আনমনে সেই ছবিই দেখছিল সে। ঈদে অন্য শিশুরা বাবার সান্নিধ্য পেলেও সে সুযোগ নেই হামিমের। ৯ বছর আগে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হন হালিমের বাবা অলিয়ার রহমান।

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ে ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ অলিয়ার রহমানের মতো অন্তত ৩০ জেলে পরিবারের বাস বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বগা ও চারাখালী গ্রামে। সাগরে গিয়ে আর ফিরে না আসা ওই জেলেরাই ছিলেন পরিবারগুলোর একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষ আজ নানা আয়োজনে ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপন করছে। কিন্তু নিখোঁজ থাকা ওই জেলেদের পরিবারে নেই ঈদের আনন্দ। অনাহারে-অর্ধাহারে কাটে তাঁদের দিন।

বগা গ্রামের জেলেপল্লির পাশ দিয়ে যাওয়া খালের পাড়ে হালিমদের ছোট্ট ঘর। তাঁর মা নূরুন নাহার বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওদের বাবা সেই যে সাগরে গেল লাশটাও পাইনি। হালিমের বয়স তখন তিন মাস। তিনডে বাচ্চা নিয়ে আমি এই খানে আছি। মেয়েডারে বিয়ে দিছি। আর ওগো দুইজনরে নিয়ে আছি এহন।’ তিনি আরও বলেন, ‘গরিবের আবার ঈদ কিসের। ঠিকমতো তিন বেলা খেতেই পারি না। ঈদে আবার নতুন জামা! ওদের তেমন কিছুই দিতে পারি না।’

অলিয়ার রহমানের লাশ পাওয়া না গেলেও একই সঙ্গে সাগরে যাওয়া মহিদুল মোল্লার পরিবার অবশ্য তাঁর লাশ পেয়েছিলেন। তাঁর মা হাছিয়া বেগম বলেন, ‘সাগরে গিয়ে আমার এক ছেলে মারা গেছে। ৩টি ছোট ছোট সন্তান রেখে গেছে। এর পর থেকে যে কীভাবে আমাদের দিন কাটে, তা কেউকে বোঝানো যাবে না। কখনো খেয়ে, আবার কখনো না খেয়ে কেটে যায় জীবন।’

মহিদুলের স্ত্রী মুরশিদা বেগম বলেন, ‘আসলে আমাদের দেখার কেউ নেই। স্বামী মারা যাওয়ার পরে আর কেউ খোঁজও নেয় না। বেঁচে থাকলে ছেলেদের কখনো সাগরে পাঠাব না বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মধ্যবয়সীয় এই নারী।’

সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলে আবুল হোসেন বলেন, ‘সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে আসলে যা পাই, তা সঞ্চয় করার কোনো উপায় থাকে না। এই অবস্থায় যেসব জেলে মারা যায়, তাদের পরিবার খুবই সংকটে পড়ে। কী যে নিদারুণ কষ্টে থাকে পরিবারগুলো, তা বলে বোঝানো যাবে না।’

একই এলাকার আরেক জেলে মো. আইয়ুব আলী বলেন, ‘সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে আমার দুই ভাই মারা গেছে। এরপরও সাগরে যাই। অন্য কোনো কাজও শিখিনি, লেখাপড়া জানি না। কী করব, বাধ্য হয়েই যাতি হয় সাগরে। বাপ-দাদার হাত ধইরে আমরা সাগর যেতে শুরু করেছি। এহনও আছি, তবে সন্তান গো আর এই ঝুঁকির জীবনে আনতি চাই না।’

এদিকে বগা ও চারাখালী গ্রামে চার শতাধিক জেলে থাকলেও মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলাকালে সরকারি সুবিধা হিসেবে চাল পান মাত্র ১৫৩ জন জেলে। এমন দাবি করেন মৎস্যজীবী নেতা ইব্রাহিম আমানির। তিনি বলেন, আসলে দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার মানুষ সাগরে মাছ ধরে জীবন যাপন করেন। কিন্তু তাঁরা তেমন কোনো সহযোগিতা পান না। এলাকার সব জেলেকে সরকারি সহযোগিতার আওতায় আনা দরকার।

কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা আক্তার বলেন, বগা ও চারাখালী এলাকার জেলেরা খুবই আর্থিক কষ্টে থাকেন। এখানের সব জেলে সরকারি চালও পান না। এ ছাড়া ২০১৫ সালে সাগরে নিখোঁজ হওয়া ১৯ জন জেলের পরিবার এখনো সরকারি সহযোগিতা পায়নি। জেলেদের কার্ড বৃদ্ধি ও নিহত জেলেদের সরকারি সহযোগিতার জন্য মন্ত্রণালয়ে লেখা হয়েছে বলে জানান তিনি।