Thank you for trying Sticky AMP!!

মৌলভীবাজারে মনু নদের পাড়ে এক টুকরা ‘নিশ্বাসের জানালা’

ফুলের গাছ ডালপালা মেলে বেড়ে ওঠছে। মৌলভীবাজার শহরের শান্তিবাগে মনু নদের পাড়

শহরের বাসাবাড়ি, এরপর নদীর পাড়, পাশেই মনু নদ। নদের পাড়টি সাজানো হয়েছে সুন্দর করে। এটি হয়ে উঠেছে মৌলভীবাজারের মানুষের এক টুকরা ‘নিশ্বাসের জানালা’। সকাল হলে চলে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের হাঁটাহাঁটি, শরীরচর্চা, ছোটাছুটি। বিকেলে সারা দিনের ক্লান্তি-অবসাদকে দূর করতে ভিড় করেন নারী-শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ।

মৌলভীবাজার শহরের উত্তর পাশে শান্তিবাগে মনু নদের দৃষ্টিনন্দন পাড় এখন সেজে উঠছে ফুলগাছে। দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির ফুলগাছ লাগানো হচ্ছে এই স্থানে। পরিচ্ছন্ন, পাকা হাঁটাপথ, মনু নদের বুক ছুঁয়ে আসা খোলা হাওয়া, চোখের সামনে পানির স্রোতে ঝিলমিল করা ঢেউ—এসব মিলে স্থানটিতে তৈরি হয়েছে ভালো লাগার মতো প্রাকৃতিক পরিবেশ।

গতকাল বুধবার সকাল ছয়টার দিকে শান্তিবাগে গিয়ে দেখা যায় নানা বয়সের অনেক নারী-পুরুষ। চল্লিশোর্ধ্ব বয়সের মানুষই বেশি। আছেন কিছু তরুণ-তরুণীও। পশ্চিম অংশে একদল মানুষ শরীরচর্চা করছেন। পাশেই কেউ একা, আবার দুই থেকে চারজনের দলে হাঁটছেন কেউ কেউ।

অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক, প্রাবন্ধিক, ছোটকাগজ ‘ফসল’-এর সম্পাদক মো. আবদুল খালিক বলেন, ‘আমাদের শৈশব-কৈশোর থেকে এই স্থান চেনা। একটা সময় এই পথ দিয়ে শহরের পশ্চিম অংশে আসা-যাওয়া করেছেন পূর্ব দিকের লোকজন। একসময় মনু নদের পাড়ের এই অংশ ঝোপঝাড়ে ভরে ওঠে। হাঁটাচলার সুযোগ আর থাকেনি। পৌরসভা স্থানটিকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। মন ভালো হওয়ার মতো একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে।’

পৌর কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার শহরের উত্তর পাশে মনু নদের শান্তিবাগ এলাকার পাড় ধরে পথচারীরা শহরের পূর্ব-পশ্চিম এই দুই প্রান্তের মধ্যে আসা-যাওয়া করতেন। যানবাহনের সুযোগ-সুবিধা বাড়লে এদিকে মানুষের পায়ে চলা কমে যায়। শান্তিবাগে মনু নদের পাড় অনেকটাই পরিত্যক্ত হয়ে যায়। সম্প্রতি মৌলভীবাজার পৌর কর্তৃপক্ষ মনু নদের শান্তিবাগ এলাকাকে মনোরম একটি স্থান হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। মনু সেতুর কাছ থেকে মৌলভীবাজার প্রধান ডাকঘর পর্যন্ত প্রায় ৮০০ মিটার এলাকাকে দৃষ্টিনন্দন স্থান হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। খরচ হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। তবে এখনো ক্যাফেটেরিয়া ও শৌচাগার চালু হয়নি, চালুর প্রক্রিয়ায় আছে।

পৌর কর্তৃপক্ষ স্থানটিকে আরও আকর্ষণীয় করতে ফুলে ফুলে সাজিয়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। লাগানো হচ্ছে দেশি-বিদেশি নানা জাতের ফুলগাছ। সম্প্রতি শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুলগাছের চারা লাগানো শুরু করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত লাগানো গাছের মধ্যে আছে পাম, কাঠগোলাপ, বাগানবিলাস, হলুদ শিমুল, হলুদ কৃষ্ণচূড়া, সাদা কৃষ্ণচূড়া, লাল ক্যাশিয়া, হলুদ জাকারান্ডা, সাদা হিজল, ক্যাশিয়া ব্যাকেরিনা, বহনিয়া মনান্ড্রা, মাউন্টেন পিংক, স্বর্ণ অশোক, পিংক শিমুল, অপরূপা চাপা, ফাগরিয়া, উইগো হলিয়া, কুরচি ইত্যাদি। পাড়ের ৭০০ মিটারের মধ্যে এই গাছের চারা লাগানো হবে। নদের পাড় ঘেঁষে লাগানো হয়েছে হিজল, করচ ও কদমের চারা। ফুলগাছ লাগানোর এই কার্যক্রম চলছে।

শহরের শান্তিবাগের বাসিন্দা ও মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ফজলুল আলী বলেন, এটা যেমন বিনোদনের জায়গা হয়েছে, তেমনি স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের সকাল-বিকেল হাঁটার জায়গাও হয়েছে।

শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা ও সংগঠক নাজিমউদ্দিন নজরুল বলেন, এই এলাকা মৌলভীবাজার শহরের দৃষ্টিনন্দন একটা স্থান হয়ে গেছে। এখন গাছ লাগানোয় অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের একটা জায়গা হবে।

মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফুলগাছ লাগানোর ক্ষেত্রে আমরা বিলুপ্তপ্রায়, বিরল—এমন অনেক গাছ সংগ্রহ করছি। এ ক্ষেত্রে নিসর্গ, পরিবেশ-প্রকৃতি নিয়ে ভাবেন—এমন লোকজনের পরামর্শ নিচ্ছি। মানুষ যাতে নিরাপদে সুন্দর পরিবেশে হাঁটাচলা করতে পারেন, বসতে পারেন, সে রকম ব্যবস্থা করা হবে।’