Thank you for trying Sticky AMP!!

বাগেরহাটে চোর সন্দেহে দিনমজুরকে হাত–পা বেঁধে বেধড়ক মারধর

গণপিটুনি

বাগেরহাটের মোল্লাহাটে এক দিনমজুরকে চোর সন্দেহে বেঁধে রেখে নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে। গত শনিবার মোল্লাহাট উপজেলার গাংনী ইউনিয়নের ঘোষগাতী বাজারে মারধরের ঘটনা ঘটে। তবে মারধরের ঘটনার দুটি ভিডিও আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।  

নির্যাতনের শিকার দিনমজুরের নাম শেখ মনিরুজ্জামান (৪২)। তিনি উপজেলার পূর্ব দারিয়ালা গ্রামের প্রয়াত ইসলাম শেখের ছেলে। ভূমিহীন হওয়ায় গাংনী মাতারচর আশ্রয় প্রকল্পে পাওয়া সরকারি ঘরে থাকেন তিনি। ওই দিন আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাঁকে মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ তাঁকে গোপালগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মনিরুজ্জামানকে ‘ছাগলচোর’ আখ্যা দিয়ে ভ্যান থেকে নামিয়ে গামছা দিয়ে তাঁর দুই হাত বাঁধছেন এক ব্যক্তি। এর মধ্যেই আরও কয়েকজন এসে মনিরুজ্জামানকে লাঠি দিয়ে পেটানো শুরু করেন। এ সময় মনিরুজ্জামান মাটিতে শুয়ে পড়েন। কাঁদতে কাঁদতে মনিরুজ্জামান এ সময় আকুতি করে বলেন, তিনি চোর নন। তবে সেখানে উপস্থিত লোকজন ওই কথার তোয়াক্কা না করে মনিরুজ্জামানকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। পরে কয়েকজন এসে মনিরুজ্জামানের পা-ও বেঁধে ফেলেন।

অপর একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, বাঁধা অবস্থায় মনিরুজ্জামানকে অনবরত পেটানো হচ্ছে। মারতে মারতে একজন হাঁপিয়ে গেলে আরেকজন এসে মারছেন। এর মধ্যে মনিরুজ্জামান অচেতন হয়ে পড়েন। যাঁরা মারছিলেন, তাঁদের পাশে থাকা ব্যক্তিরা ‘উপুড় করে, সোজা করে, পায়ে, তালু’তে মারতে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। জ্ঞান ফিরলে কয়েকজন জড়ো হয়ে মনিরুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শনিবার মনিরুজ্জামানকে নিয়ে স্থানীয় মাতারচর এলাকার জাহিদ নামের এক ব্যক্তি তাঁর অসুস্থ ছাগল নিয়ে চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে যান। সেখান থেকে ভ্যানে করে বাড়ি ফেরার পথে ঘোষগাতী গ্রামের কয়েকজন তাঁদের চোর সন্দেহে ভ্যানের গতি রোধ করেন।

আহত মনিরুজ্জামান বলেন, ‘একটি ছাগলের বাচ্চা নিয়ে আমি আর আমার এক চাচা জাহিদ হাসপাতালে আসছিলাম। সেখান থেকে ফিরে যাওয়ার পথে ছাগলের মালিক জাহিদ চাচাকে রানিং (ভ্যান চলন্ত) অবস্থায় লোকজন লাঠি দিয়ে একটা বাড়ি দেন। ঘোষগাতী বাজারের ওখানে কয়েকজন আগে থেকেই দাঁড়ানো ছিলেন। পরে আরও লোকজন জড়ো হন। বাড়ি দিলে তিনি (জাহিদ) দৌড় দেন। পরে লোকজন আমাকে মারধর করেন। আমাকে মিথ্যা চুরির অভিযোগ দিয়ে প্রচুর মেরেছেন। মারতে মারতে অনেকগুলো লাঠি ভেঙেছেন আমার গায়ে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। সেখানে অনেক লোক ছিলেন, ৪০-৫০ জন। কিন্তু মেরেছেন ৩-৪ জন। সবাইকে চিনি না। একজন ছিলেন, তাঁর নাম মাহামুদ, ওয়ার্কশপের কাজ করেন। আমি বারবার হাতে-পায়ে ধরে বলছি, “আমারে মারার আগে একটু যাচাই করে নিন। আমি চোর নই।” কেউ কোনো কথাই শোনেননি।’

ওই দিন মনিরুজ্জামানকে মারধরে ঘটনায় জড়িত কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় দুই যুবকের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, এলাকায় গরু চুরি বেড়েছে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা হয় না। তাই মানুষ আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন।

মনিরুজ্জামানের মা করিমন নেছা বলেন, ‘আমরা খুব গরিব, কিন্তু কখনো কেউ চুরির অভিযোগ দিতে পারবে না। এইভাবে মানুষ মানুষকে মারে! এর কি কোনো বিচার পাব?’

মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) নাহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গণপিটুনির শিকার এক ব্যক্তিকে গত শনিবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তাঁর শরীরজুড়ে আঘাতের চিহ্ন আছে। তবে কোথাও ক্ষত নেই। সবই লাঠিজাতীয় কোনো কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন। উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ ওই ব্যক্তিকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোমেন দাশ বলেন, মারধরের ঘটনার পরদিন দুই পক্ষকেই থানায় ডাকা হয়েছিল। ভুল-বোঝাবুঝি থেকে ওই ঘটনা ঘটেছে বলে দুই পক্ষই নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করে নিয়েছে। এ বিষয়ে ওই দিনমজুরের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি। তবে অভিযুক্তদের কাছে দিনমজুরের পরিবার চিকিৎসার খরচ দাবি করেছিল।