Thank you for trying Sticky AMP!!

মানিকগঞ্জে দালাল ছাড়া পাসপোর্ট করতে গেলে ভোগান্তি

দালাল ছাড়া পাসপোর্টের আবেদন করলে নানা ছুতায় হয়রানির শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ সেবাগ্রহীতাদের।

মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের দীর্ঘ সারি

মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে দালাল ছাড়া সেবা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। সেবাপ্রার্থীরা বলছেন, তাঁরা নিজেরা পাসপোর্টের আবেদন করলে নানা ছুতায় হয়রানি করা হয়। কোনো দালালের শরণাপন্ন হলে সব কাজ দ্রুত হয়ে যায়। এ জন্য গুনতে হয় অতিরিক্ত আড়াই থেকে পাঁচ হাজার টাকা। কখনো কখনো দায়িত্বরত আনসার সদস্যরাও দালালের ভূমিকা নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

পুরোনো পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ৬ আগস্ট সকালে নতুন পাসপোর্টের আবেদন জমা দিতে পাসপোর্ট কার্যালয়ে আসেন সিঙ্গাইর উপজেলার চান্দহর এলাকার নজরুল ইসলাম। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর দুপুর ১২টার দিকে তিনি আবেদন জমা দিলে ভুল দেখিয়ে তা ফেরত দেন দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা।

এই প্রতিবেদককে নজরুল ইসলাম বলেন, আগের পাসপোর্টে পেশা স্টুডেন্ট ছিল। নতুন পাসপোর্টের আবেদনে প্রাইভেট সার্ভিস লেখায় তা জমা নেননি। পরে এক আনসার সদস্যকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দিলে সেই আবেদনই জমা নেন। পরে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ছবি তোলা হয়।

শুধু নজরুল ইসলামই নন, পাসপোর্ট করতে আসা আরও অনেকে জানালেন দালালদের দৌরাত্ম্যের কথা। দুই সপ্তাহ ধরে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে এবং দালাল ও আবেদনকারীদের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা পাসপোর্ট কার্যালয়ের সামনের সড়কের পাশে ছোট ছোট ৩০ থেকে ৩৫টি দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকানে কম্পিউটার নিয়ে বসেছেন দালাল ও তাঁদের সহযোগীরা। এসব দোকানে দালালদের মাধ্যমে সেবাপ্রার্থীরা পাসপোর্টের ফরম পূরণ করে নিচ্ছেন। দালালেরাই পাসপোর্টের জন্য ব্যাংকের টাকা জমা দেন।

প্রতিদিনই পাসপোর্ট কার্যালয়ে আবেদন জমা দিতে গ্রাহকদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়। পাসপোর্টের ফরম জমা নেওয়ার কক্ষ ছেড়ে গ্রাহকদের লম্বা সারি গিয়ে মিলেছে মূল ফটকের কাছে। নিচতলা ও দোতলার তিনটি কক্ষে আঙুলের ছাপ ও ছবি তোলার জন্যও গ্রাহকদের ভিড় থাকে।

জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই পাসপোর্ট কার্যালয় থেকে সাধারণ ও জরুরি—এই দুই ধরনের পাসপোর্ট করা যায়। ৫ বছর মেয়াদি সাধারণ পাসপোর্টের জন্য সরকারি হিসাবে ৪ হাজার ২৫ এবং জরুরি পাসপোর্টের জন্য ৬ হাজার ৩৯৫ টাকা লাগে। আর ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ পাসপোর্টের জন্য ৫ হাজার ৭৫০ টাকা এবং জরুরি পাসপোর্টের জন্য লাগে ৮ হাজার ৫০ টাকা।

পাসপোর্ট কার্যালয়ের সামনে ফুয়াদ মুয়াদ ফটোকপির দোকান থেকে পাওয়া যায় এক দালালের মুঠোফোন নম্বর। কল করলে আকাশ মিয়া পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি বলেন, সাধারণ পাসপোর্ট করতে ৮ হাজার ৫০০ টাকা লাগবে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৭৫০ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয়; বিকাশে ২০০ টাকা, আবেদনপত্র পূরণে ২০০ টাকাসহ ৬ হাজার ১৫০ টাকা খরচ হয়। বাড়তি ২ হাজার ৩৫০ টাকা নেওয়া হয় কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই বাড়তি টাকার ভাগ পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিতে হয়।

মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন সহকারী পরিচালক নাহিদ নেওয়াজ। তবে তিনি দালালদের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, দালালদের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। দালালদের বিরুদ্ধে আবারও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হবে। এ ছাড়া আনসার সদস্যদের কেউ টাকাপয়সা নিলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।