Thank you for trying Sticky AMP!!

৩৩ বছর পর বড় ভাইয়ের হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার, থানায় মিষ্টি বিতরণ

সিলেটে ৩৩ বছর পর বড় ভাইকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। খবর পেয়ে থানায় মিষ্টি নিয়ে যান আবুল কালাম (বাম থেকে দ্বিতীয়)

সিলেটের আবদুস সালাম প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছিলেন ৩৩ বছর আগে। হত্যা মামলায় ৩০ বছর আগে একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় হয়। কিন্তু সাজাপ্রাপ্ত আসামি এত দিন ছিলেন পলাতক। আবদুস সালাম যখন খুন হন, তখন তাঁর ছোট ভাই আবুল কালামের বয়স প্রায় আড়াই বছর। বড় ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর স্মৃতি মনে নেই।

আবুল কালাম বড় হওয়ার পর বুঝতে পারেন, মা–বাবা নীরবে প্রায়ই কাঁদতেন বড় ভাইয়ের হত্যার বিচারের জন্য। ছেলে হত্যার বিচার না দেখে বাবা হাছন আলী মারা গেছেন প্রায় পাঁচ বছর আগে। মা সরফুন নেছার বয়স এখন ৮০। আবুল কালাম বড় ভাইয়ের হত্যাকারীকে ধরতে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ধরনা দিয়েছিলেন। কিন্তু আসামি পলাতক থাকায় এবং তাঁকে চিনতে না পারায় তেমন কোনো কাজ হয়নি।

অবশেষে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে আবদুস সালাম হত্যার একমাত্র আসামি মাসুক মিয়াকে (৫৬) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বড় ভাই হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ৩৩ বছর পর গ্রেপ্তারের খবরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন আবুল কালাম। তিনি ব্যক্তিগত কাজে বৃহস্পতিবার বাইরে ছিলেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে খবরটি পান। এরপর তিনি বাজার থেকে মিষ্টি নিয়ে রওনা দেন গোলাপগঞ্জ থানায়।

থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালে এপ্রিল মাসে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মণাবন্দ ইউনিয়নের করগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আবদুস সালাম জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে খুন হয়েছিলেন। ওই মাসের ১৩ এপ্রিল থানায় মামলা করেন আবদুস সালামের স্বজন। ঘটনার পর থেকে আসামি মাসুক মিয়া পালিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে  ১৯৯২ সালে হত্যা মামলার রায় দেন আদালত। মাসুক মিয়ার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় হয়।

আবুল কালাম বলেন, বড় ভাই যখন খুন হন, তাঁর বয়স কম ছিল। তখন তিনি কিছুই বোঝেননি। ৩৩ বছর কেটে গেছে। ভাইয়ের হত্যার আসামি মুক্ত হয়ে ঘোরাফেরা করছেন—এমনটি ভেবে মনে মনে কষ্ট পেতেন। আসামি গ্রেপ্তারের খবর শুনে কিছুটা হলেও তাঁর মা এবং পরিবারের সদস্যরা স্বস্তি পেয়েছেন। তিনি মনে মনে ভাবতেন, একদিন অবশ্যই তাঁর ভাইয়ের হত্যাকারী সাজা পাবেন। তাই খুশি হয়ে তিনি পুলিশ সদস্যদের মিষ্টিমুখ করিয়েছেন বলে জানান।

গোলাপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সাজাপ্রাপ্ত মাসুক মিয়া ভারতে আত্মগোপন করে ছিলেন। পরে কিছুদিন সৌদি আরবেও ছিলেন। পরে আবার ভারতে ফেরেন। সম্প্রতি তিনি বোনের কুলখানিতে অংশ নিতে গোলাপগঞ্জে ফেরেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিতে তিনি বোরকা পরে এলাকায় চলাফেরা করতেন। তাঁকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারের পর গতকাল বিকেলে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

ওসি রফিকুল বলেন, ‘৩৩ বছর পর হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করায় তাঁর সহোদর কৃতজ্ঞতা জানাতে মিষ্টি নিয়ে থানায় হাজির হয়েছিলেন। আমরা বলেছি, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছিমাত্র।’