Thank you for trying Sticky AMP!!

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের পুরাতন খোয়াই নদীর কচুরিপানা পরিষ্কারের পর নদীর বর্তমান অবস্থা

ব্যারিস্টার সুমনের উদ্যোগ সফল হতে যেসব বাধা সামনে

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক (ব্যারিস্টার সুমন নামে পরিচিত) তাঁর এলাকার পুরোনো খোয়াই নদের আবর্জনা অপসারণের কাজ শুরু করেছেন। তবে নদ পরিষ্কারের সুফল পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা এলাকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ির বর্জ্য।

সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হকের নেতৃত্বে ১৯ জানুয়ারি সকাল থেকে চুনারুঘাট উপজেলার পুরোনো খোয়াই নদের আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়। এ কাজে অংশ নেন বিডি ক্লিন নামের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ছয় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী।

এ কাজ শুরুর পাঁচ দিন পর গতকাল বুধবার সকালে শহরের পুরোনো খোয়াই নদে গিয়ে দেখা যায়, এখনো আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ চলছে। সংসদ সদস্য ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক দিয়ে এ কাজ করাচ্ছেন। তাঁদের সহায়তা করছে চুনারুঘাট পৌরসভা।

স্থানীয় পাঁচ থেকে ছয়জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে ও আশপাশ ঘুরে দেখা গেছে, খোয়াই নদের আধা কিলোমিটারে কচুরিপানা পরিষ্কার হলেও নদীতে এখনো ভাসছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ির আবর্জনা। স্তূপে স্তূপে ভাসছে পলিথিন ব্যাগ। চুনারুঘাট বাজারের ব্যবসায়ী ও আশপাশের বাসিন্দারা আগে যেভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলতেন, এখনো সেভাবেই ফেলছেন। চুনারুঘাট শহরের পূর্ব-দক্ষিণ দিকের বাসিন্দারা তাঁদের বাসাবাড়ির পয়োনিষ্কাশনের নালা এই নদের সঙ্গে আগের মতোই যুক্ত করে রেখেছেন।
চুনারুঘাট সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আরমান আহমেদ (২৩) বলেন, ‘এ নদ নিয়ে আমরা বড় স্বপ্ন দেখছি। ব্যারিস্টার সুমন বলেছেন, এ নদে আবারও নৌকা চলবে। আমরা সেই জায়গায় ফিরে যেতে চাই।’

Also Read: খোয়াই নদ রক্ষায় যথাযথ উদ্যোগ নিন

চুনারুঘাট পৌরসভার মেয়র সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এই নদ নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি। নদ খনন, দুই পাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ এবং নদীর সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে একটি প্রস্তাব তৈরি করেছি। কাজগুলো সম্পন্ন করতে প্রায় ৩০ কোটি টাকার প্রয়োজন। এখন অর্থ পেলেই সবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।’ নদীতে ময়লা ফেলা বিষয়ে পৌর মেয়র বলেন, ‘আমরা ৩০ থেকে ৪০ বছরের ময়লা পরিষ্কার করছি। মানুষকে বোঝানো হচ্ছে, তাঁরা যেন এখন থেকে ময়লা-আবর্জনা নদী না ফেলেন।’

সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক বলেন, ‘আমি এলাকাবাসীকে কথা দিয়েছিলাম, নির্বাচিত হলে খোয়াই নদ থেকে কচুরিপানা পরিষ্কার করে নৌকা চলাচলের ব্যবস্থা করব। এ কাজের শুরু হয়ে গেছে। নদ পুরোপুরি কচুরিপানামুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কাজ চলতেই থাকবে। তবে এলাকাবাসী যদি তাঁদের গৃহস্থালির বর্জ্য ফেলা বন্ধ না করেন, তাহলে এ দূষণ রোধ করব কী করে?’ তিনি সবাইকে দূষণের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

Also Read: পুরাতন খোয়াই দখলের মহোৎসব

মূল খোয়াই নদের দৈর্ঘ্য ১৭৫ কিলোমিটার। উৎপত্তিস্থল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নদটি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে। এটি চুনারুঘাট, শায়েস্তাগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলা ঘেঁষে লাখাইয়ের কৈরাল এলাকায় মেঘনার সঙ্গে মিশেছে। বাংলাদেশ অংশে এর দৈর্ঘ্য ৯৩ কিলোমিটার।

খোয়াই বর্ষা মৌসুমে (চুনারুঘাট শহর ঘেঁষে প্রবাহিত অংশ) বন্যার পানিতে শহর ভাসিয়ে দিত। এ কারণে ১৯৭৮ ও ১৯৭৯ সালে সরকার চুনারুঘাট উপজেলা সদরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিন কিলোমিটারের গতি পরিবর্তন করে। গতি পরিবর্তনের কারণে নদের (পারকুল এলাকা থেকে বাগবাড়ির মুখ পর্যন্ত) প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ পুরোনো খোয়াই নদ হিসেবে পরিচিতি পায়। এর দুই পারে গড়ে উঠেছে জনবসতি। তখন থেকেই ময়লা-আবর্জনা ও কচুরিপানায় ভরে উঠতে থাকে নদটি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, পুরোনো খোয়াই নদটি চুনারুঘাটের বাসিন্দাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষাকালে শহরের বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের অন্যতম মাধ্যম এটি। সংসদ সদস্যের উদ্যোগের প্রশংসা করেন তিনি।