Thank you for trying Sticky AMP!!

নিজ গ্রামের বিদ্যালয়ে সংবর্ধনা পেলেন একুশে পদকজয়ী জিয়াউল হক। রোববার চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার মুশরীভূজা ইউসুফ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে

একুশে পদকজয়ী জিয়াউল হককে নিজ গ্রামের বিদ্যালয়ে সংবর্ধনা

গ্রামের যে বিদ্যালয়কে সরকারীকরণের জন্য একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছিলেন, সেই বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একুশে পদকজয়ী জিয়াউল হককে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ঘিরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার মুশরীভূজা ইউসুফ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ।

স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকালে বৃষ্টির কারণে বিদ্যালয়ের মাঠে বানানো মঞ্চে অনুষ্ঠান করা যায়নি। তবে বৃষ্টি উপেক্ষা করে এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা, নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। রংবেরঙের পতাকা ও রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো পথে লালগালিচার ওপর হেঁটে বিদ্যালয়ের মিলনায়তনের মঞ্চে সস্ত্রীক আসেন জিয়াউল হক।

বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মো. আলাউদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক, বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আজগার আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আফসার উদ্দীন, ব্যবসায়ী গোলাম মোহাম্মদ, শিক্ষক আবদুল করিম, জিয়াউল হকের ছেলে মোহাব্বত হক প্রমুখ।

Also Read: একুশে পদক পাওয়ায় বাড়িতে মানুষের ভিড়, জিয়াউল হক ব্যস্ত দই বিক্রিতে

বক্তারা বলেন, একজন সাধারণ মানুষ হয়ে জিয়াউল হক অসাধারণ কাজ করে একুশে পদক জয় করেছেন। বইয়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়ানো ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যে নেশা জিয়াউলের, সেখানে তাঁর পেশা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি। দই বিক্রির টাকা দিয়ে গড়ে তোলা পাঠাগার থেকে বই পড়েছে এ বিদ্যালয়সহ আশপাশের অন্য উপজেলার বহু শিক্ষার্থী। জীবনে তাদের অনেকেই প্রতিষ্ঠিত। এ বিদ্যালয়কে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাতীয়করণের দাবি ও প্রতিশ্রুতি আদায় করে তিনি শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন। জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগারের জন্য জমি ও ভবন চেয়েছেন। ব্যক্তিগত কিছু না চেয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর কর্ম অনুসরণযোগ্য। তাঁর একুশে পদক জয়ে এলাকায় আনন্দের বন্যা বইছে।

Also Read: একুশে পদক পেয়ে ‘মধুর যন্ত্রণায়’ দই বিক্রেতা জিয়াউল হক

সংবর্ধনায় জিয়াউল হক বলেন, ‘এত শান্তি জীবনে আর কখনো পাইনি। তবে আরও শান্তি পাব, যেদিন এলাকা মাদকের অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে, অনাচার থেকে মুক্ত হবে। মাদকের কারণে অনেক পরিবারে অশান্তি দেখছি। মৃত্যুও দেখছি।’ জিয়াউল হক জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। ইউপি চেয়ারম্যানের প্রতি আহ্বান জানান, তাঁর কাছে মানুষ যেন ন্যায়বিচার পান। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক এই বিদ্যালয়ে ছাত্র হিসেবে ১৯৯৫ সালে এসএসসি পাস করেন। তিনি বলেন, জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার থেকে বিনা মূল্যে বই ও সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে লেখাপড়া করেছেন। না হলে এ অবস্থানে আসতে পারতেন না। জীবনে এমন আনন্দময়, প্রাণবন্ত অনুষ্ঠান আর দেখেননি তিনি। আগের দিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিদ্যালয়ের স্কাউট, সাধারণ ছাত্র ও শিক্ষকেরা সাজসজ্জার কাজ করেছেন। এ সময় মনে হয়েছে, তাঁরা একজন প্রাণের মানুষকে সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানাতে যাচ্ছেন।

মুশরীভূজা ইউসুফ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কাউট শিক্ষক রাকিবুল ইসলামও এই বিদ্যালয়ের ছাত্র। তিনি বলেন, ‘জিয়াউল হকের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মতো এত আনন্দময় অনুষ্ঠান এ বিদ্যালয়ে আর দেখিনি।’ জিয়াউল হক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য ছিলেন উল্লেখ করে রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে গল্প করার সময় জিয়াউল হক বলতেন, তাঁর জীবনে তিনটে ইচ্ছা আছে। সেগুলো হলো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে কথা বলা আর জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগারের উন্নয়ন ও স্কুলটিকে জাতীয়করণের জন্য আবেদন জানানো। কী আশ্চর্য! তাঁর তিনটি ইচ্ছাই পূরণ হলো। তাঁর সঙ্গে আমরাও পরম সৌভাগ্যের অংশীদার হলাম।’

Also Read: ‘মনটা ভরে গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমিই বেশি গুরুত্ব পেয়েছি’ বললেন আপ্লুত জিয়াউল