Thank you for trying Sticky AMP!!

শয্যার অভাবে মেঝেতে শয্যা পেতে থাকতে হচ্ছে রোগীদের। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড

নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে বরিশালে এক মাসে ১০ শিশুর মৃত্যু

শীত মৌসুমে বরিশালে এবার ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধি বেড়ে গেছে। বিশেষ করে শিশুরা এর বড় শিকার। নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে চলতি ডিসেম্বরেই বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। একই হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন আরও চার বয়স্ক ব্যক্তি।

করোনার ধকল কাটতে না কাটতেই এ অঞ্চলে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত রোগের বিস্তারে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এই সরকারি হাসপাতালে রোগীদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না। নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর-সর্দিসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা।

চিকিৎসকেরা বলছেন, শীত মৌসুম শুরুর পর থেকেই শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ বা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন (এআরআই) বা সর্দি-কাশি, গলাব্যথা থেকে শুরু করে ব্রঙ্কাইটিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস ও নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। এবার রোগীর চাপ বেশি।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, শীত মৌসুমের শুরুতে এ ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব প্রতিবছরই দেখা দেয়। তবে এবার একটু বেশি। কারণ, শীতের প্রকোপ এখনো ততটা শুরু হয়নি। শীত পুরোপুরি শুরু হয়ে গেলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডটি রোগীতে ঠাসা। ৩৬ শয্যার ওয়ার্ডটিতে অন্তত আড়াই শ শিশু ভর্তি আছে। তবে হাসপাতালের হিসাব বলছে, বর্তমানে ১৪১ রোগী ভর্তি। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ২৩ শিশু। শয্যা না পেয়ে মেঝেতে বিছানা পেতে রাখা হয়েছে বেশির ভাগ শিশুকে। রোগীর চাপে নার্স ও চিকিৎসকেরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক শিশু রোগীর স্বজনেরা বলেছেন, শয্যার অভাবে মেঝেতে শয্যা পেতে থাকতে হচ্ছে তাঁদের। এতে শিশুরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গৃহবধূ মনসুরা বেগম বললেন, পাঁচ বছরের মেয়ে সোহানা আক্তারকে নিয়ে ছয় দিন ধরে হাসপাতালে আছেন। প্রথম দুই দিন মেঝেতেই ছিলেন। এরপর শয্যা পেয়ে কিছুটা স্বস্তিতে আছেন এখন। এত রোগীর চাপে ওয়ার্ডটিতে গরমে কষ্ট পেতে হয়।

হাসপাতালের নতুন ভবনে সম্প্রতি খোলা মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বেশ কয়েকজন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এই ওয়ার্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন নার্স জানান, মেডিসিন ওয়ার্ডে চলতি মাসে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত ৭ নভেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভাগের হাসপাতালগুলোতে শুধু শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ২ হাজার ৭৯৫ জন রোগী। একই সময়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৬৮৮ জন।

চিকিৎসাবিশেষজ্ঞদের মতে, এ সময়ে এসব রোগ থেকে রেহাই পেতে গরম কাপড় ব্যবহার, যতটা সম্ভব ঠান্ডা পরিবেশ এড়িয়ে চলা জরুরি। এ ক্ষেত্রে শিশুদের ঠান্ডা বাতাস থেকে দূরে রাখা, সেই সঙ্গে ধুলাবালু থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে। শৈত্যপ্রবাহ চলাকালে শিশুদের যতটা সম্ভব কম ঘর থেকে বের করতে হবে। ঘরের মধ্যে ঠান্ডা বাতাস যেন না ঢোকে, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।