Thank you for trying Sticky AMP!!

খামারিদের আস্থার নাম ময়না বেগম

এলাকার অনেকেই ময়না বেগমকে ‘ভ্যাকসিন আপা’ নামে ডাকেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২০ সালে তিনি পেয়েছেন রংপুর বিভাগীয় ‘জয়িতা’ পুরস্কার

কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে প্যারাসিটামল, বিভিন্ন অ্যান্টিসেপটিক-টিকা-গজ-ব্যান্ডেজ নিয়ে হেঁটে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে ঘোরেন ময়না বেগম (৩২)। মানুষের বাড়িতে যান, হাঁস-মুরগি-গরু-ছাগল-ভেড়ার খোঁজখবর নেন। প্রয়োজনে সাধারণ কিছু ওষুধ দেন। প্রাণিসম্পদ অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন রোগের টিকা সরবরাহ করেন। এই কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের কাছে, বিশেষ করে খামারিদের ভরসার প্রতীক হয়ে উঠেছেন ময়না বেগম।

দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের কামদেবপুর বনগাঁও মাথাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সেন্টু মিয়ার (৬৫) মেয়ে ময়না বেগম। ছয় ভাইবোনের মধ্যে ময়না পঞ্চম। তাঁর বয়স যখন দুই বছর, তখন বসন্ত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় একটি চোখের আলো নিভে যায়। পড়াশোনা করতে পেরেছেন নবম শ্রেণি পর্যন্ত। কিন্তু এর মধ্যেই নিজের চেষ্টায় সংসারের হাল ধরেছেন ময়না। গবাদিপশু পালন ও পরিচর্যাবিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি এখন স্থানীয় খামারিদের গবাদিপশুর রোগবালাই হলে ছুটে যাচ্ছেন। এলাকার অনেকেই ময়নাকে ‘ভ্যাকসিন আপা’ নামে ডাকেন। এই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২০ সালে ময়না পেয়েছেন রংপুর বিভাগীয় ‘জয়িতা’ পুরস্কার।

ময়না বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে কারও সঙ্গে দেখা হলে বলেন, পরদিন যেন তাঁদের বাড়িতে একটু যাই। কিংবা কাউকে ওষুধ দিয়েছি গরু সুস্থ হয়েছে, খামারি ফোন করে ধন্যবাদ দেন। কখনো নিজে থেকেই খামারে যাই, খোঁজখবর নিই। প্রাণিসম্পদ অফিস কর্তৃক প্রদত্ত ভ্যাকসিন দিতে যাই, কিংবা কোনো তথ্য থাকলে সেগুলো পৌঁছে দিই।’

Also Read: কল্যাণী মিনজি শিশুদের স্বপ্ন দেখান, মানুষ গড়েন

ময়না বেগম জানান, ২০১৯ সালে বন্যা-পরবর্তী সময়ে ধর্মপুর শালবনে দিনাজপুরের স্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘পল্লীশ্রী’র এক কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। ময়নাও সেদিন বনে পাতা কুড়াতে গিয়েছিলেন। বস্তাপ্রতি সেসব পাতা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। ওই কর্মকর্তার পরামর্শে মাথাপাড়া গ্রামে ২৮ জনকে নিয়ে একটি সংগঠন চালু করেন। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ময়নাকে দেওয়া হয় গবাদিপশু পালন ও পরিচর্যাবিষয়ক প্রশিক্ষণ। সেখানে গরুর খুরারোগ, লাম্পিস্কিন, তড়কা, বাদলা, গলা ফোলা, কলেরা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার বিষয়ে প্রশিক্ষণ পান।

বনগাঁও গ্রামের খামারি বাবর আলী (৪৬) বলেন, তাঁর খামারে ছয়টি গরু ছিল। বর্তমানে চারটি আছে। গরুর টিকা দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগের টিকা দেওয়ার বিষয়ে ময়না সব সময় খোঁজ রাখেন। একবার একটা গরুর বড় অসুখ হলে শহরের ডাক্তারকে নিয়ে ময়না তাঁর খামারে এসেছিলেন।

Also Read: যেভাবে বন বাঁচিয়ে সফল উদ্যোক্তা হলেন কক্সবাজারের তিন হাজার নারী

বিরল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সফিউল ইসলাম বলেন, উপজেলায় বর্তমানে গরু-মহিষ-ছাগল-ভেড়া রয়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার ৪৪৫ এবং হাঁস-মুরগি রয়েছে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬০টি। এর মধ্যে ধর্মপুর ইউনিয়নে গবাদিপশুর সংখ্যা বেশি। তিনি বলেন, উপজেলা অফিসে বেশ কিছুদিন ধরে ভেটেরিনারি সার্জন নেই। সে ক্ষেত্রে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ৭১ জন পশু পল্লিচিকিৎসক সেবাদান করছেন। তাঁদের প্রত্যেককে নিয়ে মাসে একবার সভা করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস।

ময়নার বিষয়ে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ময়না মেয়েটা ভালো। এলাকায় গরু-ছাগলের চিকিৎসা দিয়ে বেড়ায়। ডাকলেই পাওয়া যায় ময়নাকে। শুধু গরু-ছাগলের চিকিৎসাই নয়, অসহায় দুস্থ মানুষকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে নানা প্রয়োজনে ময়না এখন অনেকের ভরসা।’