Thank you for trying Sticky AMP!!

‘কখনো ভাবিনি এভাবে ছেলের লাশ কবরে শোয়াতে হবে’

পদ্মা সেতুতে ট্রাক উল্টে নিহত হয়েছেন শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার এলাকার কায়সার শেখ। আজ তাঁর মরদেহ বাড়িতে আনা হলে স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন

পদ্মা সেতুতে ট্রাক উল্টে নিহত কায়সার (২৪) ও রাজু খন্দকারের (৩৮) মরদেহ গ্রামে এনে দাফন করেছেন স্বজনেরা। তাঁদের অকাল মৃত্যুর ঘটনা মানতে পারছেন না আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের মানুষ। প্রিয়জনকে হারিয়ে মাতম করছে পরিবার দুটি। দুজনের নিহত হওয়ার ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। মুন্সিগঞ্জের পদ্মা সেতু উত্তর থানার হেফাজতে রয়েছেন ট্রাকের চালক মো. নিয়াজ।

পদ্মা সেতু উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর ট্রাকটির চালককে সেতু থেকে আটক করা হয়েছে। তিনি আমাদের হেফাজতে আছেন। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা লিখিত অভিযোগ দিলে তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে।’

Also Read: পদ্মা সেতুতে ট্রাক উল্টে দুজনের মৃত্যু

স্থানীয় লোকজন জানান, গতকাল রোববার রাতে শরীয়তপুর জেলা শহরের জননী অক্সিজেন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ট্রাক ঢাকার উদ্দেশে যায়। নিহত রাজু খন্দকার জননী অক্সিজেনের মালিক আনোয়ার হোসেনের শ্যালক এবং কায়সার ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক। অক্সিজেনের খালি সিলিন্ডার নিয়ে যাওয়ার পথে পদ্মা সেতুর ওপর ট্রাকটি দুর্ঘটনাকবলিত হয়। ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পদ্মা সেতুর ১৩ ও ১৪ নম্বর পিয়ার বরাবর সেতুতে উল্টে যায়। ট্রাকটির ওপরে বসে থাকা কায়সার ও রাজু খন্দকার ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ সময় আহত হন রাজুর ভাই রাজিব খন্দকার, তাঁর স্ত্রী মুক্তা আক্তার, তাঁদের শিশুসন্তান আলিফ ও নুর।

২ জুলাই রাজুর বাবা বাদশা খন্দকার মারা যান। তাঁকে গ্রামের বাড়িতে দাফন করে রাজু, তাঁর ভাই রাজীব, রাজীবের স্ত্রী ও দুই সন্তান শরীয়তপুরে বোনের বাড়িতে আসেন। রোববার ট্রাকে চেপে ঢাকায় রওনা হন। ট্রাকটি উল্টে গেলে তিনি চাপা পড়েন।

শরীয়তপুর সদরের ডোমসার গ্রামের নুরুল ইসলাম শেখের ছেলে কায়সার শেখ। তিনি পরিবারের ছোট সন্তান। পরিবারের অভাব দূর করার আশায় ১ জুলাই যোগ দিয়েছিলেন জননী অক্সিজেন নামের প্রতিষ্ঠানটিতে। রোববার সন্ধ্যার পর প্রতিষ্ঠানটির অক্সিজেনের খালি সিলিন্ডার ভরে আনতে নারায়ণগঞ্জের মদনপুরের বন্দর এলাকার দিকে রওনা হন। প্রতিষ্ঠানটির মালিকের কয়েক স্বজন শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য ওই ট্রাকে চড়েন। এ কারণে কায়সারকে ট্রাকের ওপরে বসতে হয়। পদ্মা সেতুতে ওঠার পর ট্রাকটি অতিরিক্ত গতিতে চলছিল। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তা উল্টে যায়।

আজ সকালে কায়সারের মরদেহ নিয়ে স্বজনেরা গ্রামে আসেন। মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। কায়সারের বাবা নুরুল ইসলাম শেখ বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। কান্না করতে করতে তিনি বলছিলেন, ‘ছেলেটার জন্য কিছুই করতে পারিনি। অভাব-অনটন আর কষ্টের মধ্যেই তার জীবন কেটেছে। কখনো ভাবিনি এভাবে ছেলের লাশ কবরে শোয়াতে হবে।’

রাজু খন্দকার বরিশালের বাকেরগঞ্জের নিয়ামতি এলাকার মৃত বাদশা খন্দকারের ছেলে। পরিবারের সঙ্গে থাকতেন ঢাকার মীরহাজিরবাগ এলাকায়। ২ জুলাই রাজুর বাবা বাদশা খন্দকার মারা যান। তাঁকে গ্রামের বাড়িতে দাফন করে রাজু, তাঁর ভাই রাজীব, রাজীবের স্ত্রী ও দুই সন্তান শরীয়তপুরে বোনের বাড়িতে আসেন। রোববার ভগ্নিপতি আনোয়ার হোসেনের অক্সিজেন সিলিন্ডারবাহী ট্রাকে চেপে ঢাকায় রওনা হন। ট্রাকের ভেতরে সবার বসার জায়গা না হওয়ায় রাজু ট্রাকের ওপরে বসেন। ট্রাকটি উল্টে গেলে তিনি চাপা পড়েন।

রাজুর ভগ্নিপতি জননী অক্সিজেনের মালিক আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের ট্রাকে চাপা পড়ে স্বজন ও সহকর্মীকে হারাতে হবে ভাবতে পারিনি। তাঁদের পরিবারকে কী জবাব দেব?’

রাজুর ভাই রাজীব খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুর্ঘটনায় ভাই মারা গেছে। আমার স্ত্রী ও দুই সন্তান আহত হয়েছে। তাদের চিকিৎসা করানোর জন্য ঢাকায় আছি। এমন একটি দিন আমাকে দেখতে হবে তা কখনো ভাবতে পারিনি।’