Thank you for trying Sticky AMP!!

এই গরমে দুর্গম কাশিপাড়ার ৪৩ পরিবারে পানির জন্য হাহাকার

আধা কিলোমিটার দূর থেকে পানি নিতে এসেছেন এক নারী। সম্প্রতি পানছড়ি উপজেলার লোগাং ইউনিয়নের কাশিপাড়া এলাকায়

আধা কিলোমিটার দূর থেকে পানি নিতে এসেছেন এক নারী। ছবিটি সম্প্রতি পানছড়ি উপজেলার লোগাং ইউনিয়নের দুর্গম কাশিপাড়া এলাকা তোলাখাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার লোগাং ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা কাশিপাড়ায় ৪৩টি পরিবারের বসবাস। এসব পরিবারের পানের জন্য ও দৈনন্দিন ব্যবহারের পানির জন্য একমাত্র ভরসা ছোট এক পাহাড়ি ছড়া। বর্তমানে ছড়ার পানি প্রায় শুকিয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। তীব্র গরমে পানির সংকটে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় লোকজন।

পানছড়ি সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে কাশিপাড়া। গত শনিবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, গ্রাম থেকে প্রায় ৩০০ ফুট পাহাড়ের নিচে ছোট একটি পাহাড়ি ছড়া বয়ে গেছে। ছড়ার পাড়ে কুয়ার মতো ছোট গর্ত করে পানি জমা করা হয়। তবে ছড়ার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কুয়ায় ধীরগতিতে পানি জমছে। অল্প ওই পানিতে ভাসছে বিভিন্ন পোকা ও ময়লা আবর্জনা। সেই পানি নিতে তপ্ত গরমের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন কয়েকজন নারী ও শিশু।

পানি নিতে আসা সহেলি ত্রিপুরা বলেন, প্রতিদিন তাঁদের দুটি পাহাড় ও এক কিলোমিটারের বেশি পাহাড়ি পথ হেঁটে তিন থেকে চারবার পানির জন্য আসতে হয়। সকালে পানি নিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে বেলা বেড়ে যায়। এদিকে সারাদিন কুয়ার পাশে বিভিন্ন বয়সের মানুষের ভিড় লেগে থাকে। এ জন্য গ্রামের নারীরা বেশির ভাগ সময় সন্ধ্যার পরে হারিকেন কিংবা কুপি জ্বালিয়ে গোসল করে আসেন।

গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাশিপাড়ার ৪৩টি পরিবারে ৩৬৮ জনের বেশি লোকজন বাস করেন। সারা বছরই তাঁদের পানির সংকট আছে। প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের শুরু থেকেই বর্ষার আগপর্যন্ত পানির সংকট দেখা দেয়। তবে চার-পাঁচ বছর ধরে ছড়ার পাড়ের গাছ-বাঁশ নিধনের ফলে গ্রামে বেশি পানির সমস্যা দেখা দিয়েছে। কুয়ার পানি বেশির ভাগ সময় ঘোলাটে থাকে। এসব পানি ব্যবহারের ফলে গ্রামের লোকজন প্রায় সময় ম্যালেরিয়া, জন্ডিস, ডায়রিয়া ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হন। বর্ষার সময় বৃষ্টির পানি ধরে রাখা হলেও শুষ্ক মৌসুম এলে পানির ভোগান্তি বেড়ে যায়। তবে গত কয়েক দিনে তীব্র গরম আর বৈসু উৎলক্ষে যে পরিমাণ পানির প্রয়োজন ছিল, তা পাননি গ্রামবাসী।

গৃহবধূ রাধিকা রানী ত্রিপুরা বলেন, চিকিৎসকেরা পানি ফুটিয়ে পান করার জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু সময়ের অভাবে তাঁরা সেটা করতে পারেন না। ভোর হওয়ার আগে পানি আনতে গেলে পানি নিয়ে আসতে আসতে সূর্য উঠে যায়। এরপর সাংসারিক কাজ শেষ করে জুম কিংবা বাগানে কাজ করতে যেতে হয়। কাজ শেষে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়েই নোংরা পানি পান করেন তাঁরা।

কাশিপাড়ার হেডম্যান চারু বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, গ্রামের বেশির ভাগ পরিবার গরিব ও দিনমজুর। গভীর নলকূপ কিংবা রিংওয়েল বসানোর খরচ তাঁদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। গ্রামের বাসিন্দারা মাইলের পর মাইল হেঁটে পানি সংগ্রহ করেন। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদে তিনি নিজে ১৬ বছর ধরে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

চারু বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, গত দুই মাসে গ্রামের তিনজন জন্ডিস ও ১৪ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়াও যদি কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা করে তাহলে গ্রামের লোকজন উপকৃত হবে।

জানতে চাইলে লোগাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জয় কুমার চাকমা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যেসব নলকূপ ও রিংওয়েল দেওয়া হয়, সেগুলো ৫০ থেকে ৬০ ফুটের বেশি গভীর নয়। তবে কাশিপাড়ায় নলকূপ বসাতে হলে মেশিনের সাহায্যে পাথর কেটে বসাতে হবে। এটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, যা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে সম্ভব নয়।

খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রেবেকা আহসান বলেন, সব এলাকায় নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। তবে যেসব এলাকায় পানি পাওয়া যায় না সেসব এলাকায় কীভাবে ব্যবস্থা করা যায়, তা ভেবে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া খাগড়াছড়ির এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে পানি পাওয়া যায় না, সেসব এলাকা পর্যবেক্ষণ করে পানির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। কাশিপাড়া এলাকায় কীভাবে দ্রুত পানির ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।