Thank you for trying Sticky AMP!!

বালিয়াডাঙ্গীতে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা, জড়িতরা শনাক্ত হয়নি

ভাঙচুর করা প্রতিমার বিভিন্ন অংশ ছড়িয়েছিটিয়ে পড়ে আছে। মঙ্গলবার দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সিন্দুরপিন্ডি এলাকায়

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় তিন দিনেও জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় সিন্দুরপিন্ডি হরিবাসর কমিটির সভাপতি যতীন্দ্র নাথ সিংহ রোববার সন্ধ্যায় বালিয়াডাঙ্গী থানায় মামলা করেন। তবে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিমা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের এখনো শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। মন্দির এলাকায় কোনো সিসিটিভি ক্যামেরাও ছিল না। এরপরও জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল কাজ করছে। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত শনিবার দিবাগত রাতের কোনো একসময়ে ধনতলা ইউনিয়নের সিন্দুরপিণ্ডি এলাকার আটটি, পাড়িয়া ইউনিয়নের কলেজপাড়া এলাকার তিনটি ও চাড়োল ইউনিয়নের সাহবাজপুর নাথপাড়া এলাকার একটি মন্দিরের মোট ১৪টি প্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। রোববার ভোরে এলাকার লোকজনের নজরে এলে প্রতিমা ভাঙচুরের বিষয়টি জানাজানি হয়। আজ সকালে স্থানীয় লোকজন প্রতিমাগুলো ভাঙা অবস্থায় পেয়ে প্রশাসন ও পুলিশকে খবর দেন। পরে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দ্রুত জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেন।

এদিকে গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ঠাকুরগাঁও জেলার প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলের মধ্যে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ঠাকুরগাঁও জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার গুপ্ত,পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ঠাকুরগাঁও জেলার সভাপতি অরুণাংশু দত্ত, সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ ছাড়াও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আসলাম উপস্থিত ছিলেন। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক টি এম মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

আজ বিকেল পাঁচটার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সিন্দুরপিণ্ডি হরিবাসর চত্বরে সম্প্রতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মু. সাদেক কুরাইশী, সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি অরুণাংশু দত্ত, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশে বক্তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে মনে সাহস ধরে রাখতে অনুরোধ করে বলেন, এই দেশ হিন্দু, মুসলিম সবার। এখানে কোনো বিভেদ নেই। যারা মন্দিরে হামলা করে প্রতিমা ভাঙচুর করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে, তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।

আজ দুপুরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে বালিয়াডাঙ্গীতে প্রতিমা ভাঙচুরে প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট। সংবাদ সম্মেলনে  সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি করা হয়।

আজ দুপুরে ধনতলা ইউনিয়নের সিন্দুরপিণ্ডি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরে মন্দিরে ভাঙচুর করা প্রতিমাগুলো এখনো পড়ে আছে। আর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজন তা দেখে আক্ষেপ করছেন।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক টি এম মাহবুবুর রহমান বলেন, অনেকেই প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা বিএনপির ঘাড়ে চাপাতে চাইছেন। বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী এ ঘটনার জড়িত নয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি কখনো সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে না। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার দাবি জানাই।’

এ বিষয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ঠাকুরগাঁও জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার গুপ্ত বলেন, ‘মন্দিরে মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনাটির তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। আমরা এ ঘনটায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে মানববন্ধন করব। এরপর প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করা না হলে আরও বড় কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমরা এখনো কোনো ভালো খবর দিতে পারছি না। তবে আমাদের চেষ্টার ত্রুটি নেই। যেসব মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে, সেগুলোতে সিসি টভি ক্যামেরাও ছিল না। কেউ কিছু বলতেও পারছে না। এসব প্রতিবন্ধকতা নিয়েই আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। এ জন্য একটু সময় লাগছে। তবে আমাদের বিশ্বাস আছে আমরা পারব।’