Thank you for trying Sticky AMP!!

যেখানে এসে চোখের পানি ফেলেছেন ৪০ শহীদের পরিবারের সদস্যরা

বধ্যভূমির নামফলকের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন একজন শহীদের দুই স্বজন। শনিবার দুপুরে সিলেট ক্যাডেট কলেজের পূর্ব পাশের টিলায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার শহীদ স্মৃতি উদ্যানে

বধ্যভূমিতে সারবদ্ধ কয়েকটি নামফলক। এর একটির সামনে বসে অঝোরে কাঁদছিলেন শাহরীন রহমান (৫৭)। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর স্বামী। একপর্যায়ে নামফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শাহরীন।

নামফলকটিতে লেখা লে. কর্নেল এ এফ জিয়াউর রহমান, পিতা মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা। এই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শাহরীন রহমানের বাবা।

আজ শনিবার দুপুরে সিলেট ক্যাডেট কলেজের পূর্ব পাশের টিলায় ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার শহীদ স্মৃতি উদ্যান’ নামের ওই বধ্যভূমির ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরীসহ শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

শহীদ স্মৃতি উদ্যানটিতে ৬৬ জন শহীদের স্মৃতিফলক লাগানো হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শাহরীনসহ ৪০ শহীদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁদের সবার চোখে ছিল পানি।

শাহরীন রহমান ও তাঁর স্বামী সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে এসেছেন। শাহরীন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা এ এফ জিয়াউর রহমান সিলেট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। ১৯৭১ সালে শাহরীনের বয়স ছিল পাঁচ বছর। সে সময়কার স্মৃতি আবছা মনে আছে তাঁর। ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল (পয়লা বৈশাখের দিন) তাঁর বাবাকে পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর আর তিনি বাড়ি ফেরেননি। বাবাকে যেখানে হত্যা করে গণকবর দেওয়া হয়েছিল, ৫২ বছর পর সেই স্থানে এসেছেন তিনি। এ আবেগ বোঝানো যাবে না।

উদ্বোধনের পর বধ্যভূমির নামফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শহীদের পরিবারের সদস্যরা

কথা বলার সময় চোখ ছলছল করছিল শাহরীনের। তিনি বলেন, সেদিন তাঁদের বাড়ির সামনে পাকিস্তানি সেনাদের গাড়ি থেমেছিল। ওই সময় তিনি ঘরের সামনে খেলছিলেন। একপর্যায়ে গাড়ি থেকে নেমে আসা এক সেনাসদস্য তাঁকে জিজ্ঞেস করছিল, বাড়িটি কর্নেল জিয়ার কি না। শাহরীন হ্যাঁ বললে সেনাসদস্য তাঁর বাবার কাছে নিয়ে যেতে বলছিল। ওই সেনাসদস্য তাঁর বাবাকে দেখে স্যালুটও দিয়েছিল। এরপর তাঁর বাবাকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল। ওই দিন কর্নেল জিয়াউর রহমান চলে যাওয়ার পর আর বাড়িতে ফেরেননি। পরে জানতে পারেন, এই স্থানে এপ্রিলের ২১-২২ তারিখের দিকে অনেক বুদ্ধিজীবীকে চোখ বেঁধে হত্যা করা হয়েছিল।

সিলেট সেনানিবাসের সহযোগিতায় শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবদুস সালাম বীর প্রতীকের পরিবারের উদ্যোগে বধ্যভূমিটি নির্মাণ করা হয়। এর ফলকে ৬৬ জন শহীদের নাম–পরিচয় রয়েছে। তবে এ উদ্যানে নাম না জানা আরও অনেককে গণকবর দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ চলছে।

সিলেট নগরের লামাবাজার এলাকার বাসিন্দা বজেন্দ্র সিংহ প্রথম আলোকে বলেন, শহীদ স্মৃতি উদ্যানে তাঁর বাবা ও ভাইকে হত্যা করা হয়েছিল। আগে জানতেন, তাঁদের সিলেট ক্যাডেট কলেজ এলাকায় নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরে নিশ্চিত হন, এ টিলাটির ওপরে তাঁর বাবা ও ভাই শায়িত আছেন। আজ এখানে বধ্যভূমির উদ্বোধন করায় ভালো লাগছে।

শনিবার দুপুরে এ বধ্যভূমির উদ্বোধন করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী

স্মৃতি উদ্যানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ‘যাঁদের রক্তে মুক্ত এ দেশ’ নামের অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শহীদ সিরাজুল আবদালের স্ত্রী সৈয়দা সাকিনা আবদাল। বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবদুস সালামের সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শাহরীন রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল গোলাম হেলাল মোর্শেদ খান, রাশেদা কে চৌধূরী, শহীদ শামসুদ্দিন আহমদের ছেলে জিয়া উদ্দিন আহমদ।  

সৈয়দা সাকিনা আবদাল তাঁর বক্তব্যে বলেন, ১৯৭১ সালের ১৪ মে তাঁর স্বামীকে (সিরাজুল আবদাল) মৌলভীবাজার থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপর আর তিনি ফেরেননি। পরে জানা যায়, তাঁকে হত্যা করে লাশ এখানে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে বলে মনে করেন রাশেদা কে চৌধূরী।

তিনি বলেন, ‘অনেক জেলা থেকে অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম সংগ্রহ করা হয়েছে। বীর শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া খুবই দরকার। না হলে আমাদের নতুন প্রজন্ম বিষয়টি জানতে পারবে না। এ জন্য তথ্য–উপাত্ত দিতে আমরা সব সময় প্রস্তুত রয়েছি।’