Thank you for trying Sticky AMP!!

‘এ্যালা আর মুরগি পুষি লাভ হওছে না’

খামার আছে মুরগি নেই। রংপুরের তারাগঞ্জের চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের ওয়াজেদুল মিয়ার মুরগির খামার। আজ শুক্রবার দুপুরে তোলা

রংপুরের তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ উপজেলায় মুরগির খামারের মালিকেরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। মুরগির খাবারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এবং বাজারে মুরগির দাম কমে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে খামারিদের।

লোকসানের মুখে গত তিন মাসে ওই দুই উপজেলায় শতাধিক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাকি খামারগুলোও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন খামারিরা।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, দুই উপজেলায় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত খামার ছিল প্রায় ৪৫০টি। খামারি ও ফিড ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই মাসে প্রতি বস্তা ব্রয়লার ফিড ২ হাজার ৩৯০, সোনালি ফিড ২ হাজার ১৭৫ ও লেয়ার ফিড ২ হাজার ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মুরগি যথাক্রমে বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা, ১৯০-১৯৫ টাকা ও ২০৫ টাকা কেজি দরে।

বর্তমান বাজারে প্রতি বস্তা ব্রয়লার ৩ হাজার ৩০০ টাকা, সোনালি ৩ হাজার টাকা ও লেয়ার ২ হাজার ৭০০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে খামারিদের। এক বছরের ব্যবধানে প্রতি বস্তা ব্রয়লার ফিডে ৯১০ টাকা, সোনালি ফিডে ৮২৫ টাকা, লেয়ার ফিডে ৬৬৫ টাকা বেড়েছে। ভোগ্য উপযোগী ব্রয়লার মুরগি করতে ৩০-৩৫ দিন ও সোনালি মুরগি ৬০-৭০ দিন সময় লাগে। ১ হাজার ব্রয়লার মুরগির ৫৬-৬০ বস্তা ফিড ও ১ হাজার সোনালি মুরগি ৩২ বস্তা ফিড লাগে। কিন্তু এক বছরে চার দফায় খাদ্যের দাম বাড়ায় অনেক খামারি উৎপাদন বন্ধ করে দিচ্ছেন।

পুঁজি না থাকায় মহাজনের কাছ বাকিতে মুরগির খাদ্য ও ওষুধ কিনে ব্যবসা চালান প্রামাণিকপাড়া গ্রামের খামারি মাহাবুল ইসলাম। বাকিতে কেনার জন্য ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দাম গুনতে হয় তাকে। তাঁর ওপর চার দফায় খাদ্যের দাম বাড়ায় লোকসানে পড়ে মুরগি উৎপাদন বন্ধ করেছেন তিনি।
মাহাবুল ইসলাম বলেন, মুরগির ফিডের যে দাম খামার বন্ধ না করে করব কী? এক বছরে চারবার ফিডের দাম বাড়ল। কিন্তু মুরগির দাম দিন যতই যাচ্ছে তত নিচে নামছে। দুইবার মুরগি উৎপাদন করে লোকসান খেয়ে এই বাজার দরে মুরগি তোলার সাহস পাচ্ছি না। খামার বন্ধ করে রেখেছি।

উৎপাদন খরচের সঙ্গে মুরগির বাজার দরের সামঞ্জস্য না থাকায় মুরগি পালনে আগ্রহ হারিয়েছে চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের ওয়াজেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘খামারিদের কষ্ট কেউ বুঝেও, শোনেও না। ফিডের দাম হু হু করি বাড়লেও কায়ও দেখছে না। এ্যালা আর মুরগি পুষি লাভ হওছে না। হামার গ্রামের অনেকেই মুরগিত লোকসান খায়া মোর মতন খামার বন্ধ করি দিছি।’


বদরগঞ্জের আমরুলবাড়ী গ্রামের সাইফুল ইসলাম ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। গ্রামে ফিরে তিন বছর ধরে মুরগি পালন করেন। কিন্তু উৎপাদন খরচে সঙ্গে কোনোভাবেই মিল নেই মুরগির বাজার দরের। তাই তিনি ফের খামার বন্ধ করে ঢাকায় যাওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মুরগির বাজার দর উঠানামা করে। কিন্তু ফিড, ওষুধের দাম খালি বাড়ে। এক বছরের একবস্তা ফিডে ৮২৫ টাকা বেড়েছে। কিন্তু মুরগির দাম আগের চেয়ে আরও কমেছে। এক কেজি সোনালি মুরগি উৎপাদন খরচ ২২৭ টাকা। সর্বোচ্চ পাইকারি বাজার এবার ১৭০-২০০ টাকা কেজি। লোকসান ছাড়া খামারে আর কিছুই নেই। তাই খামার বন্ধ করে ঢাকা যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি।

তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফরহাদ নোমান বলেন, লাভ না হলে তো খামারিরা খামার বন্ধ করবেই। ফিডের দাম খামারিদের কাছে বাড়ার কথা শুনেছি। দাম কমা-বাড়ার বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে। গরমে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের তালিকা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পাঠিয়েছি।