Thank you for trying Sticky AMP!!

সংসদ সদস্যের পাশে বসে অধ্যক্ষ বললেন, নিজেরা নিজেরাই ধাক্কাধাক্কি করেছেন

কলেজ অধ্যক্ষকে মারধর করার অভিযোগে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন রাজশাহীর সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। একপর্যায়ে তিনি হাতজোড় করে সাংবাদিকদের কাছে তাঁর সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান

রাজশাহীতে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর হাতে মার খাওয়ার অভিযোগ ওঠার পর আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন অধ্যক্ষ মো. সেলিম রেজা। এ সময় সংসদ সদস্য তাঁর পাশেই ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ দাবি করেন, অধ্যক্ষ ফোরামের সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে নিজেরা নিজেরাই ধাক্কাধাক্কি করেছেন। সংসদ সদস্য তাঁদের নিবৃত্ত করেছেন। ওমর ফারুক মারধর করেছেন, তাঁর এমন বরাত দিয়ে একটি দৈনিকে যে খবর ছাপা হয়েছে, তা তিনি বলেননি। সাংবাদিকেরা যখন অধ্যক্ষের কাছে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চান, তখন তিনি বলেন, নিজেদের ধাক্কাধাক্কির কারণে আহত হয়ে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন।

রাজশাহী নগরের নিউমার্কেটের পাশে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ওমর ফারুকের পক্ষ থেকেই এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ সেলিম রেজার এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ার কথা শুনে বাংলাদেশ কলেজশিক্ষক সমিতির রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি শফিকুর রহমান বলেছেন, অধ্যক্ষ সংসদ সদস্যের কাছে মার খেয়েছেন বলে তাঁর কাছে স্বীকার করেছিলেন। পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার কারণে অধ্যক্ষ সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর ভয়ে এখন ঘটনা অস্বীকার করছেন বলে তিনি মনে করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গোদাগাড়ীর মাটিকাটা আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল আওয়াল, প্রেমতলী কলেজের উপাধ্যক্ষ আ নু গো মাহমুদুল হাসান, গোদাগাড়ী সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উমরুল হক, পাকড়ী কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল গাফফার, গোদাগাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রোকনুজ্জামান প্রমুখ।

Also Read: সংসদ সদস্য ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষকে মারধরের অভিযোগ

লিখিত বক্তব্যে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বলেন, ঈদ উপলক্ষে তাঁরা কয়েকজন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এ সময় তাঁদের অধ্যক্ষ ফোরামের কমিটি গঠন ও অভ্যন্তরীণ অন্যান্য বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে সংসদ সদস্য তাঁদের নিবৃত্ত করেন। এ ছাড়া অন্য কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের একটি কুচক্রী মহল আগামীকাল ১৫ জুলাই তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে গোদাগাড়ী-তানোর নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর সুনাম নষ্ট করতে ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করেছে।’

অধ্যক্ষ সেলিম রেজার এমন বক্তব্যের পর সাংবাদিকেরা তাঁর কাছে জানতে চান, তাঁর চোখের নিচে কালো দাগ কেন? তাঁরা অধ্যক্ষের বাঁ হাতের কনুই দেখতে চান। সাংবাদিকদের কাছে তথ্য আছে, সংসদ সদস্যের মারধরে অধ্যক্ষের বাঁ হাতের কনুইয়ে ক্ষত হয়েছে। এ সময় অধ্যক্ষ তাঁর হাত দুটি টেবিল থেকে নিচে নামিয়ে নেন। তিনি কিছুতেই কনুই দেখাতে রাজি হননি। আহত না হলে কেন চিকিৎসা নিয়েছিলেন জানতে চাইলে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বলেন, অ্যাক্সিডেন্টলি লেগেছিল। তাই মৌখিকভাবে তিনি তাঁর ভাই সম্পর্কের একজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। লিখিত বক্তব্যে তর্কবিতর্কের কথা বললেও পরে তিনি স্বীকার করেন, তাঁদের নিজেদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল।

এই পর্যায়ে সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে উপস্থিত থাকা মাটিকাটা আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল আওয়াল সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি দাবি করেন, তিনিই অধ্যক্ষদের সেদিন ডেকেছিলেন। সেখানে তাঁদের ফোরামের কোষাধ্যক্ষ অধ্যক্ষ সেলিম রেজার সঙ্গে একটি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তাঁরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। তিনি নিজেও পড়ে গিয়েছিলেন, অধ্যক্ষ সেলিম রেজাও পড়ে গিয়েছিলেন। এ সময় প্লাস্টিকের চেয়ার ও আলমারির সঙ্গে তাঁদের ধাক্কা লাগে। তাঁদের বিবাদ নিরসন করতে সংসদ সদস্য তাঁকে ধাক্কা দেন, অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকেও ধাক্কা দেন। তারপর বিষয়টা সেখানেই মীমাংসা হয়ে গেছে। তাঁরা একসঙ্গে চা খেয়েছেন। সেলিম রেজাকে বুকে জড়িয়ে তিনি বাইরে বের হয়েছেন।

একজন সংসদ সদস্যের সামনে কলেজের অধ্যক্ষ হয়ে নিজেরা কীভাবে মারামারিতে জড়ালেন, জানতে চাইলে অধ্যক্ষ আবদুল আওয়াল বলেন, মানুষ মাত্রই উত্তেজিত হতে পারেন। তাঁদের ভুল হয়েছে। তাঁরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, আর কোনো দিন তাঁরা এ ধরনের ভুল করবেন না। এই ভুলের জন্য তাঁরা জাতির কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।

পরে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের কারণে তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পারিবারিক জীবনে তিনি হেয়প্রতিপন্ন হয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের কাছে এর বিচার চান। তিনি তাঁর সম্মান ফেরত চান।

বাংলাদেশ কলেজশিক্ষক সমিতির রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি শফিকুর রহমান অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধর করার বিষয়টি সাংবাদিকদের নজরে এনেছিলেন। তিনি বলেন, সংবাদ সম্মেলনে আগামীকাল তানোর আওয়ামী লীগের সম্মেলন সামনে রেখে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার সঙ্গে কলেজের অধ্যক্ষদের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না। একজন অধ্যক্ষ সংবাদ সম্মেলনে কেন এই বক্তব্য দিতে যাবেন। ঘটনা আড়াল করার জন্যই এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া হয়েছে।

৭ জুলাই রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী তাঁর থিম ওমর প্লাজার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আরও কয়েকজন অধ্যক্ষের সামনে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।