Thank you for trying Sticky AMP!!

বরিশালে জমজমাট লক্ষ্মীপূজার হাট

আজ শনিবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের লক্ষ্মী পূজা। লক্ষ্মীপূজা পালনের জন্য প্রতিমাসহ বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। আজ বরিশাল নগরের নতুন বাজার এলাকায়

বাঙালি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব লক্ষ্মীপূজা আজ শনিবার সন্ধ্যায়। শারদীয় দুর্গোৎসব শেষে প্রথম পূর্ণিমা তিথিতে লক্ষ্মীপূজা হয়। এই পূর্ণিমাকে বলা হয় কোজাগরী। সে জন্য এই পূজা কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা নামেও পরিচিত।  

এ উপলক্ষে বরিশাল নগরে বসেছে দুই দিনব্যাপী লক্ষ্মীপূজার হাট। জমজমাট এই হাটে লক্ষ্মীর প্রতিমা, সরা, ঘট, ফুল, বেলপাতাসহ সব  উপকরণের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। বরিশাল নগরের হাটখোলার হরি মন্দিরে বসেছে এই হাট। এ ছাড়া আরও দুই স্থানে এই হাট বসেছে। শুক্রবার সকাল থেকে হাট ছিল জমজমাট।

ভরা পূর্ণিমায় পরিবারের মঙ্গল ও সমৃদ্ধি কামনায় হিন্দুধর্মাবলম্বীরা ঘরে ঘরে লক্ষ্মীর ঘট দেন। লক্ষ্মী পূজার প্রধান উপকরণ ধানের ছড়া, সুপারি ছড়া, কলাগাছের ডোঙ্গা, কলাপাতা, পদ্মফুল, ধান-দূর্বা, আলপনা আঁকার চালের গুঁড়া এখন আর সহজলভ্য নয়। বরিশাল নগরে তিন জায়গায় পূজার এসব উপকরণ নিয়েই বসেছে দুই দিনের মেলা। আশপাশের গ্রাম থেকে মানুষজন এসব নিয়ে আসেন এখানে।

নগরের স্ব-রোড এম এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে পাওয়া যাচ্ছে কলাগাছের খোল, ফুল ও ফল। কেউ কেউ খোল দিয়ে ডোঙ্গা বানিয়েও বিক্রি করছেন। বাজার রোড কালীমন্দিরের সামনে ফলমূল ছাড়াও মিলছে প্রসাদের জন্য বিভিন্ন মিষ্টিজাতীয় ও মনিহারি পণ্য। আর হাটখোলার হরিমন্দিরে বিক্রি হচ্ছে প্রতিমা। আকার ও নকশাভেদে দামেরও পার্থক্য আছে।

বিক্রেতারা বলছেন, এবার ক্রেতাদের ভিড় যেমন বেশি ছিল, তেমনি বেচা-বিক্রিও ভালো হয়েছে। আর একই জায়গায় পূজার কাজে ব্যবহৃত সব সামগ্রী পাওয়া যাওয়ায় খুশি রয়েছেন ভক্তরা।

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জানান, শারদীয়া দুর্গোৎসবের পর আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের শেষে পূর্ণিমা তিথিতে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা করা হয়। বাঙালি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে এক চিরন্তন প্রার্থনা। প্রায় প্রতি ঘরেই দেবী লক্ষ্মীর পূজা হয়ে থাকে। লক্ষ্মী হলেন ধনসম্পত্তির দেবী। ধনসম্পদের আশায় ঘরে ঘরে লক্ষ্মীপূজা হয়ে থাকে।
শাস্ত্রমতে, দেবী লক্ষ্মী ধনসম্পদ তথা ঐশ্বর্যের প্রতীক। উন্নতি, আলো, জ্ঞান, সৌভাগ্য, দানশীলতা, সাহস ও সৌন্দর্যের দেবী হিসেবে পরিচিত লক্ষ্মী। তাই লক্ষ্মী ঐশ্বর্যের দেবী।

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নেয়ামতি, কলসকাঠি, কুমারখালী, চর আইচা, বাবুগঞ্জের মাধবপাশা, ঝালকাঠির সদর, রিয়তপুরের ফাইলপাড়া অঞ্চল থেকে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে এসেছেন বিক্রেতারা।

লক্ষ্মীপূজায় অনেক হিন্দু নারী উপবাসব্রত পালন করেন। পূজা অর্চনার পাশাপাশি ঘরবাড়ির আঙিনায় লক্ষ্মীর পায়ের ছাপের আলপনা আঁকা হবে। সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বালন করা হবে।

হাট ঘুরে দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী এ হাটে লক্ষ্মীর প্রতিমা, পূজার মাটির উপকরণ ও শোলাসামগ্রী নিয়ে এসেছেন মৃৎশিল্পী ও শোলাশিল্পীরা। গ্রাম থেকে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা লক্ষ্মীপূজার এসব সামগ্রীর সঙ্গে পদ্মকুড়ি, কলাগাছ, ফুল, বেলপাতার উপকরণও এনেছেন। এ ছাড়া লক্ষ্মীপূজার দিন ঘর সাজানোর আলপনা ও ঝুলনসামগ্রীও বেচাকেনা হচ্ছে হাটে।

লক্ষ্মীপূজায় অনেক হিন্দু নারী উপবাসব্রত পালন করেন। পূজা অর্চনার পাশাপাশি ঘরবাড়ির আঙিনায় লক্ষ্মীর পায়ের ছাপের আলপনা আঁকা হবে। সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বালন করা হবে। সাধারণত ঘরোয়া পরিবেশে লক্ষ্মীপূজায় বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়।

ঐশ্বর্যের দেবী লক্ষ্মীকে বিশ্বের নানা অঞ্চলে নানাভাবে পূজা করা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালি হিন্দু সমাজের রাজা-মহারাজা, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ গৃহস্থসহ সবাই লক্ষ্মী দেবীর পূজা করে আসছেন।

ঐশ্বর্যের দেবী লক্ষ্মীকে বিশ্বের নানা অঞ্চলে নানাভাবে পূজা করা হয়। বাঙালি বিশ্বাসে লক্ষ্মী দেবী দ্বিভুজা ও তাঁর বাহন প্যাঁচা এবং হাতে থাকে শস্যের ভান্ডার। প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালি হিন্দু সমাজের রাজা-মহারাজা, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ গৃহস্থসহ সবাই লক্ষ্মী দেবীর পূজা করে আসছেন।

বরিশাল মহানগর পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র দে বলেন, শতাধিক বছর ধরে বরিশাল নগরের হাটখোলার হরিমন্দিরে লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে লক্ষ্মীর প্রতিমা, সরা ও উপকরণের মেলা বা হাট বসে। দুর্গাপূজার বিসর্জন অর্থাৎ বিজয়া দশমীর পরদিন থেকে শুরু হয় এ মেলা, যা চলে লক্ষ্মীপূজার আগপর্যন্ত।