Thank you for trying Sticky AMP!!

২২ বছর ধরে দুবলার চরে মাছ ধরেন সুবল

সুবল বিশ্বাস

একসময় বাড়ির পাশের কপোতাক্ষ নদে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন সুবল বিশ্বাসের বাবা ভদ্র বিশ্বাস। ওই নদের বিভিন্ন জায়গায় পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীতে আর মাছ পড়ে না। অভাব লেগে থাকতে শুরু করল সুবলদের ঘরে।

অভাবের কারণে ২২ বছর আগে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের দুবলার চরে প্রথম মাছ ধরতে যান সুবল। তখন অন্য মহাজনের সঙ্গে শ্রমিক হিসেবে গিয়েছিলেন। সেই থেকে প্রতিবছরই দুবলার চরে মাছ ধরতে যাচ্ছেন তিনি। তবে এখন আর অন্য মহাজনের সঙ্গে নয়, তিনি নিজেই মহাজন। এ বছর তাঁর অধীনে যাবে তিনটি মাছ ধরা ট্রলার আর থাকবেন ২০ জন শ্রমিক।

সুবল বলেন, ‘পরিস্থিতিটা আগে এমন ছিল না। ছয় ভাইবোন মিলে আটজনের সংসারে অভাব লেগেই থাকত। কোনোরকমে এসএসসি পাস করে অর্থের অভাবে আর পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়নি। ২০০০ সালে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হই। ওই বছরই টাকার অভাবে অন্য মহাজনের সঙ্গে সাগরে মাছ ধরার জন্য দুবলার চরে যাই। এরপর আর পড়াশোনা করা হয়নি।’

সুবল বলতে থাকেন, ‘কয়েক বছর অন্য মহাজনের সঙ্গে দুবলার চরে যাওয়ার পর নিজেই কিছু একটা করার পরিকল্পনা করি। ২০০৫ সালের দিকে বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারদেনা করে নিজে দুটি ট্রলার তৈরি করি। এরপর তা নিয়ে সাগরে যাই। এভাবেই এত বছর চলে এসেছে।’

সুবলের বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের হিতামপুর গ্রামে কপোতাক্ষ নদের পাড়ে। সেখানে অনেক জেলের বসবাস। প্রায় সব পরিবার থেকেই পাঁচ মাসের জন্য দুবলার চরে মাছ ধরতে যান জেলেরা। যাঁদের ট্রলার নেই, তাঁরা যান শ্রমিক হিসেবে। প্রতিবছর অক্টোবরের মাঝামাঝি অথবা শেষ সপ্তাহ থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত সাগরে মাছ ধরেন তাঁরা। এ বছর ২৮ অক্টোবর মধ্যরাতে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে। ওই নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেই মোংলা থেকে দুবলার চরের দিকে ছুটবেন সুবলেরা। তার আগে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পাইকগাছার হিতামপুর গ্রাম থেকে বহর নিয়ে মোংলার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন তাঁরা।

সুবলের বয়স ৪০ বছরের মতো। এক ছেলে ও এক মেয়ে তাঁর। বড় ছেলের বয়স সাত বছর আর ছোটটি আড়াই বছরের। মা-বাবা থাকেন তাঁর সংসারে। এখন পাকা বাড়ি করেছেন। এ বছর ১০ লাখ টাকা দিয়ে একটি বড় ফিশিং ট্রলার কিনেছেন সুবল বিশ্বাস। আগের দুটিসহ এ বছর তিনি মোট তিনটি ট্রলার নিয়ে সাগরে যাচ্ছেন।

সুবল বলেন, ‘এবার দুবলার চরে বড় একটিসহ মোট তিনটি ট্রলার যাবে। লোক থাকবে ২০ জনের মতো। একেক শ্রমিককে পাঁচ মাসের জন্য সর্বনিম্ন এক লাখ, ওপরে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হবে। ওই সময় তাঁদের খাওয়াদাওয়া, চিকিৎসা থেকে শুরু করে সবকিছু তাঁকে বহন করতে হবে। সব মিলিয়ে খরচ হবে ৩০ লাখ টাকার বেশি। এর মধ্যে ২০ লাখ টাকা তাঁর নিজস্ব আর ১০ লাখ টাকা বিভিন্ন জায়গা থেকে উচ্চ সুদে ধার নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে পাঁচ মাসে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা আয় না হলে লোকসান গুনতে হবে।’  

দুবলার চরে মাছ ধরতে গিয়ে সুবল মুখোমুখি হয়েছিলেন সিডর, বুলবুলের মতো বড় বড় ঘূর্ণিঝড়ের। বললেন, গত বছরও বড় ঝড়ের কবলে পড়েছিলেন। আগে থেকে সতর্ক থাকায় খুব বেশি সমস্যা হয়নি। তবে তাঁর পাশের অন্য মহাজনদের কয়েকজন জেলে সাগরে ট্রলার ডুবে হারিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের লাশও পরে পাওয়া যায়নি। এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘দুবলার চরে মাছ ধরতে যাওয়া মানে প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করা। আমরা বেশি লোভ করি না। এ কারণে ঝড়ের সতর্কসংকেত জানতে পারলেই আমরা সতর্ক হয়ে যাই। সুন্দরবনের মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাই। কিন্তু যাঁরা এমনটি করেন না, তাঁরা বিপদে পড়েন।’