‘জারে মোর শরীলটা গরম থাকবে বাহে’
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী গ্রাম দুর্গারবাড়ি। ওই গ্রাম থেকে উপজেলা সদরে প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল নিতে এসেছিলেন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা ছুরতন বেওয়া (৭২)। কম্বল পেয়ে তিনি বলেন, ‘যে জার (শীত) বাহে। হাত-ঠ্যাংগুলাত ছ্যাংগা ধরছে। জারের ঠেলায় শরীলত টট্টরী নাগছে। মুই তো ঘর থাকি বাহিরও হবার পাওনা। এই জন্য কারোটে চাবারো (চাইতে) পাওনা। জারোত মোর জীবনটা বেড়ে যায়ছোল, তোমারলার ডুশা (কম্বল) দিয়া মোর জারের কষ্ট দূর করলেন। জারে মোর শরীলটা গরম থাকবে বাহে।’
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে পাটগ্রাম তারকনাথ (টিএন) স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে দুস্থ ও অসহায় ২৫০ পরিবারের মধ্যে আজ সোমবার বিকেলে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এই আয়োজনে সহযোগিতা করছেন এনভয় লিগ্যাসি ও শেলটেক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ। তিনি ব্যক্তিগত অর্থায়নে প্রথম আলো ট্রাস্টে ৫০০টি কম্বল দিয়েছেন। এসব কম্বল অসহায় শীতার্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
বিকেলে প্রচণ্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে পাটগ্রাম পৌরসভার স্টেশনপাড়া, জুম্মাপাড়া, ঝাকুয়াটারী, মাসুয়াপাড়া; কুচলিবাড়ী ইউনিয়নের পানবাড়ি, কুচলিবাড়ী, লক্ষ্যনাথের কামাত; পাটগ্রাম সদর ইউনিয়নের জিমনাল, খানপাড়া, ধবলসুতি, কদুরবাজারসহ বিভিন্ন সীমান্তবর্তী গ্রামের অসহায় প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষ কম্বল নিতে উপস্থিত হন। এর আগে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে তাঁদের বাছাই করে স্লিপ বিতরণ করেন প্রথম আলো পাটগ্রাম বন্ধুসভার সদস্যরা।
পাটগ্রাম সদর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম বিরিংগেরবাড়ির কামাত থেকে এসেছিলেন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ মতিয়ার রহমান (৭২)। কম্বল পেয়ে তিনি বলেন, ‘মোর (আমাদের) জমি জায়গা নাই, মানষির জমিত ঘর করি থাকোং। ভাঙা বাড়ি বাহে তাতে বর্ষায় পানি ও বাতাস ঢুকে, আবার ঠান্ডার সময় কুয়াশা আর বাতাস ঢুকে বাহে। কুয়াশা আর ঠান্ডাতে থাকিবার পারোং না। হামার এই সীমান্তের গ্রামোত আসি কাহোয় হামার খোঁজ নেয় না। এইবার তোমরায় ডুশাখান (কম্বল) দিলেন। এই জারোত বুড়িটা (স্ত্রী) ভালো করি ঘুমপারির পাবে।’ পানবাড়ি গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ ভাঙ্গরু মিয়া (৭৫) বলেন, ‘এই কম্বলটা পেয়ে মোর খুবই উপকারে আসিল বাহে।’
কম্বল বিতরণের সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পাটগ্রাম সরকারি জসমুদ্দিন কাজী আবদুল গণি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম ফরিদ রুমি, হাতীবান্ধার আলিমুদ্দিন সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক কেরামত আলী, পাটগ্রাম টিএন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মামুন অর রশিদ, প্রথম আলোর পাটগ্রাম প্রতিনিধি এ বি সফিউল আলম, পাটগ্রাম বন্ধুসভার সভাপতি অজিত রঞ্জন রায়, সদস্য আজিজুল হক, আজিনুর রহমান, আজাদি ইয়াসমিন প্রমুখ।
গোলাম ফরিদ রুমি বলেন, ‘প্রথম আলো দেশের আনাচকানাচ থেকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সংগ্রহ করেই তা প্রকাশ করে থাকে। তবে এর বাইরে সমাজের নৈতিক দায়িত্ব পালন করে দেশে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই প্রচণ্ড শীতে শীতার্ত দুস্থ মানুষের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে শীতবস্ত্র।’
Also Read: ‘কম্বলটা পেয়ে মোর শীতের কষ্ট চলে গেল’
শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।