Thank you for trying Sticky AMP!!

ক্যামেরুনের গোলে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের উল্লাস, ব্রাজিল সমর্থকদের হতাশা

ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজের মাঠে খেলা দেখছেন শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষ

ময়মনসিংহের সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের সামনের বিশাল মাঠটায় তখন ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে চলছে তুমুল আড্ডা। মাঠের দুই দিকের সড়কে তিনটা পপকর্নের, পাঁচটা ঝালমুড়ির দোকান। একটু দূরে একটা ফাস্ট ফুডের দোকানে ভাজা হচ্ছে চিকেন চাপ আর লুচি। কে বলবে, রাত তখন সাড়ে ১২টা! মনে হচ্ছে যেন সবে সন্ধ্যা হয়েছে।

মিনিট দশেক পর ভিড় আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। মাঠটা প্রায় কানায় কানায় ভরে ওঠে। কিছুক্ষণ পরই শুরু হবে ব্রাজিল বনাম ক্যামেরুনের খেলা। আনন্দ মোহন কলেজের খেলার মাঠের এক পাশে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মুক্তমঞ্চে বড় পর্দায় বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখার আয়োজন করেছে সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ কর্তৃপক্ষ। খেলা দেখতে প্রতি রাতেই জড়ো হন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার খেলার দিন মাঠে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল সমর্থকদের খুনসুটি চলে খেলা চলার সময়জুড়ে। যতক্ষণ খেলা চলে, ততক্ষণই চলে খেলা দেখতে আসা শিক্ষার্থীদের উল্লাস।

Also Read: ব্রাজিলের জয়ের পর ‘হই হই রই রই, আর্জেন্টিনা গেল কই’ স্লোগান

গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১টায় ব্রাজিলের গ্রুপ পর্বের শেষ খেলা ছিল ক্যামেরুনের সঙ্গে। ব্রাজিল আগে থেকেই দ্বিতীয় পর্বের খেলা নিশ্চিত করে ফেলায় ব্রাজিল সমর্থকেরা ছিল নির্ভার। তবে ক্যামেরুনের পক্ষ নেওয়া আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা ছিল মাঠের এক পাশে। খেলা শুরু হতে যখন মিনিট দু-এক বাকি, তখন থেকেই শুরু হয় ঢোলের বাদ্য। ক্ষণে ক্ষণে চলে আতশবাজি ফোটানো।

খেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, যখনই ব্রাজিল আক্রমণে যায়, তখন চলে একদফা উল্লাস। আবার ক্যামেরুন আক্রমণে গেলে চলে ক্যামেরুনের পক্ষ নেওয়া আর্জেন্টিনার সমর্থকদের উল্লাস। উপলক্ষ এলেই উল্লাস ধ্বনিতে কেঁপে ওঠে মাঠ। কখনো ‘ব্রাজিল, ব্রাজিল’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় খেলা দেখার মাঠ। আবার কখনো ক্যামেরুনের নামেও দেওয়া হয় জয়ধ্বনি।

খেলা দেখতে আসা আনন্দ মোহন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহাদী মিশু ব্রাজিল দলের সমর্থক। তিনি বলেন, মেসে টেলিভিশন না থাকায় তিনিসহ তাঁর মেসের মোট ছয়জন এখানে খেলা দেখেন। সবাই একসঙ্গে খেলা দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। খেলা দেখার পাশাপাশি ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার সমর্থকদের খুনসুটিটাও খুব ভালো লাগে মাহাদীর।

আর্জেন্টিনার সমর্থক শিশির হাসান পড়েন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষে। আর্জেন্টিনার সমর্থক হলেও তিনি ব্রাজিল বনাম ক্যামেরুনের খেলা দেখতে এসেছেন। শিশির অকপটে স্বীকার করেন, তিনি ক্যামেরুনের পক্ষ হয়ে খেলা দেখছেন। খেলায় ব্রাজিল হেরে গেলে তাঁর রাতজাগা সার্থক হবে।

Also Read: শাবিপ্রবিতে আর্জেন্টিনা-ভক্তদের আনন্দ-উল্লাস

মাঠের এক পাশের সড়কে খেলা দেখতে জড়ো হন রাতজাগা রিকশাচালকেরা। শীতের রাতে নিজেদের রিকশায় শরীর গুটিয়ে জবুথবু হয়ে বসে খেলা দেখেন তাঁরা। আলী হোসেন নামের একজন রিকশাচালক বলেন, তিনি সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত রিকশা চালন। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর প্রতি রাতেই আনন্দ মোহন কলেজের সামনে বসে খেলা দেখেন। খেলা শেষ হলে এখান থেকেই ভাড়ায় যাত্রী নিয়ে যান।

আলী হোসেন বলেন, কয়েক হাজার শিক্ষার্থী একসঙ্গে খেলা দেখেন। অনেক হইহুল্লোড় হয়। তবে কখনো অপ্রীতিকর কিছু ঘটে না। যে কারণে আনন্দ মোহন মাঠে খেলা দেখতে খুব ভালো লাগে।
খেলার মধ্যবিরতির সময় চলে ঝালমুড়ি, পপকর্ন আর চা পান করার ধুম। চায়ের সঙ্গে তর্ক জমে ওঠে মধ্যবিরতি পর্যন্ত, কোন দল ভালো খেলেছে তা নিয়ে। বিরতির পর আবারও শুরু হয় খেলা। আবারও কারণে–অকারণে চলে উল্লাস ধ্বনি। দুই দলেই আক্রমণ করে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত গোল কেউ পায় না।

খেলার ঠিক ৯০ মিনিটের সময় গোল পেয়ে যায় ক্যামেরুন। উল্লাসে ফেটে পড়ে আনন্দ মোহন কলেজের মাঠ। অতিরিক্ত সময়ের পাঁচ মিনিটের খেলায় আর কোনো গোল না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত হতাশা নিয়ে ‘মাঠ’ ছাড়েন ব্রাজিল সমর্থকেরা। ক্যামেরুনের পক্ষ নেওয়া আর্জেন্টিনা সমর্থকদের উল্লাস আর কে দেখে!