Thank you for trying Sticky AMP!!

নওশীন প্রমিলা ফুটবল একাডেমির সদস্যদের অনুশীলন। সম্প্রতি দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ মাঠে

বড় হচ্ছে তন্বী-লিমাদের স্বপ্ন

ফুটবলে আগ্রহী হচ্ছেন দিনাজপুরের নারীরা। অনেকেই অনূর্ধ্ব–১৪সহ জাতীয় দলে খেলছেন। তবে নারীদের খেলার ক্ষেত্রে সেভাবে পৃষ্ঠপোষকতা নেই।

সকাল ছয়টা। অনেকেই যখন বিছানায়, তন্বী-তনিমা, জয়ন্তী-কাকলীরা তখন মাঠে। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে দুই কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ মাঠে অনুশীলনে আসছে যমজ দুই বোন তন্বী ও তনিমা। এরপর একে একে মাঠে আসে জয়ন্তী, রত্না, বুলবুলি, রিমি, লিমা, সাগরিকাসহ ২৫ জন নারী খুদে ফুটবলার। তখনো মাঠে আসেননি তাদের কোচ নুর ইসলাম (৪৮)।

জয়ন্তীকে দিয়ে আলাপ শুরু। ঈদগাহ বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। শহরের পুলহাট এলাকায় মা-বাবার সঙ্গে থাকে। টানা তিন বছর সপ্তাহের ছয় দিন সকালে ফুটবল অনুশীলনে আসে। জয়ন্তীর সঙ্গে কথা বলার সময় পাশে এসে দাঁড়ান চেহেলগাজী কলেজের একাদশের ছাত্রী তারামনি। পাঁচ বছর আগে মাঠে মেয়েদের ফুটবল খেলতে দেখে নিজের বোনকে কোচের কাছে দেন তারামনির ভাই। সেই তারামনি দুই বছর রংপুর সদ্যপুষ্করিণী যুব সংঘের হয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলছে।

ইতিমধ্যে মাঠে আসেন কোচ নুর ইসলাম। খেলোয়াড়দের কাছে তিনি ‘বেলাল স্যার’ নামে পরিচিত। একসময় খেলেছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। ছিলেন জাতীয় দলের স্কোয়াডেও। পায়ের সমস্যায় আর খেলতে পারেননি। কিন্তু ফুটবল ও মাঠ ছাড়তে পারেননি তিনি। ১৫ জন মেয়েকে নিয়ে গোর-এ-শহীদ মাঠে ফুটবল অনুশীলন শুরু করেন। গড়ে তোলেন ‘নওশীন প্রমিলা ফুটবল একাডেমি’।

নুর ইসলামের একাডেমিতে বর্তমানে নারী খেলোয়াড়ের সংখ্যা ৩৫। নয়জন খেলছেন প্রিমিয়ার লিগে। অনূর্ধ্ব–১৪ দলের পাশাপাশি জাতীয় দলে খেলেছেন— এমন খেলোয়াড়ও আছেন।

একাডেমির প্রায় সব খেলোয়াড়ের গল্পগুলো আর্থিক অনটনে ভরা। এক-তৃতীয়াংশ খেলোয়াড় ঈদগাহ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অধিকাংশেরই দিন কাটে অর্ধাহারে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান কয়েকজনের লেখাপড়া ও খাওয়া খরচের দায়িত্ব নিয়েছেন। একাডেমির সদস্য ছোট তারামনি নবম শ্রেণিতে পড়ে। মা–বাবা মারা গেছেন। বোনের সংসারেই ঠিকানা। জানাল, প্রধান শিক্ষক তার লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছেন।

২০ মিনিট ঘামঝরানোর পর কোচ খেলোয়াড়দের দুই দলে ভাগ করলেন। খালি পায়ে বল গড়াল মাঠে। রক্ষণভাগ, মাঝমাঠ কিংবা স্ট্রাইকিং পজিশনে সবাই অসাধারণ ক্রীড়ানৈপুণ্য দেখাচ্ছে।

পাক্কা ৬০ মিনিট খেলা শেষে কেউ বসে পড়ল। কেউ শুয়ে। পরনের কাপড়েই ঘাম মুছছে কেউ কেউ। এরই ফাঁকে কথা হয় তন্বী ও তনিমার সঙ্গে। জানাল, দপ্তরির কাজ করা মা তাদের খেলাধুলায় উৎসাহ দেন। নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রিমিয়ার লিগে দুই বোনই ঢাকার উত্তরা ক্লাবের হয়ে চুক্তিবদ্ধও হয়েছে। তনিমা বলে, ‘গত সপ্তাহেও ময়মনসিংহে খেলে এসেছি। খেলে সামান্য যা আয় হয়, মায়ের সংসারে কাজে লাগে। জাতীয় দলে ঢুকতে আমরা দুই বোন কঠোর অনুশীলন করছি।’

২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব–১৫ দলে খেলেছেন সাগরিকা। ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত গোলরক্ষক হিসেবে জাতীয় দলেও ছিলেন। ঠাকুরগাঁওয়ের সাগরিকা পড়ছেন স্নাতকে। কৃষক বাবার ছয় সন্তানের মধ্যে একমাত্র মেয়ে সাগরিকা। এবার প্রিমিয়ার লিগে কুমিল্লা ইউনাইটেডের হয়ে খেলবেন। সাগরিকা প্রথম আলোকে বলেন, ‘দিনাজপুর নারী ফুটবলারদের জন্য সম্ভাবনাময়ী জেলা। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় খেলোয়াররা মনোবল হারাচ্ছেন। এক জোড়া বুট দিনের পর দিন সেলাই করে পরে খেলছেন মেয়েরা। কিন্তু কারও কোনো সহযোগিতা করতে দেখিনি।’

কোচ নুর ইসলাম বলেন, খুদে খেলোয়াড়দের নিয়েই সময় কাটে তঁার। একাডেমিতে তিনি কারও কাছ থেকে ফি নেন না। মাঠে খেলতে আসা অন্যরা খেলোয়াড়দের খুবই উৎসাহ দেন। মাঝেমধ্যে টিফিনও কিনে দেন। নিজেও যতটুকু পারছেন করে যাচ্ছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও ভালো খেলোয়াড় বের হয়ে আসবে।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সুব্রত মজুমদার বলেন, ফুটবল ইভেন্ট জেলা ক্রীড়া সংস্থার আওতায় নেই। বিষয়টি দেখভাল করে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। তারপরও যতটুকু সহযোগিতা দরকার ক্রীড়া সংস্থা করবে।

দিনাজপুর ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম নবী দুলাল বলেন, ফুটবলের মানোন্নয়নে তাঁরা বেশ কয়েকবার ক্যাম্পিং করেছেন। অ্যাসোসিয়েশন বেশির ভাগ সময় পুরুষদের খেলার আয়োজন করে। নারীদের বিষয়টি জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা দেখে। কিন্তু এক যুগেরও বেশি সময় কমিটি না থাকায় সংস্থাটি রীতিমতো অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী বলেন, খোঁজখবর নিয়ে যতটুকু পারা যায় সহযোগিতা করা হবে।