Thank you for trying Sticky AMP!!

রাঙামাটিতে শত কোটি টাকার বাঁশের ব্যবসা, বাড়ছে ব্যক্তি মালিকানার বাঁশ বাগান

প্রাকৃতিক বন এবং ব্যক্তি মালিকানার বাঁশের বড় হাট বসে রাঙামাটি সদরের কুতুকছড়ি বাজার এলাকার। কাপ্তাই হ্রদে ভাসিয়ে বিক্রির জন্য কুতুকছড়িতে নেওয়া হচ্ছে বাঁশ। সম্প্রতি তোলা ছবি

সারা দেশে বাঁশের কদর বা প্রয়োজনীয়তা বেশ রয়েছে। দিন দিন চাহিদা আরও বাড়ছে, তবে রাঙামাটির সংরক্ষিত বনে বাঁশের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। বন কমে যাওয়ার এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অন্য দিকে ব্যক্তি মালিকানা সৃজন করা বাঁশ বাগানে উৎপাদন বাড়ছে।

বন বিভাগ হিসাব মতে গত এক বছর রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন সংরক্ষিত বন ও সৃজন করা বাঁশ বাগান থেকে অন্তত ৭০ কোটি টাকার বাঁশ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নেওয়া হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের হিসাবে শত কোটি টাকার বাঁশ ব্যবসা হয় বলে জানিয়েছেন।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাঙামাটিতে মূলত তিন স্থানে বেশি বাঁশ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি বাঁশ আহরণ করা হয়, বাঘাইছড়ি উপজেলা কাচালং, শিজক ও নাড়াইছড়ি সংরক্ষিত বন থেকে। তারপরে কাউখালী উপজেলা ও নানিয়ারচর উপজেলা থেকে। এই তিন স্থানে প্রতি বছর অন্তত এক কোটি ৮০ হাজার বাঁশ আহরণ করা হয়।

এ ছাড়া বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, রাজস্থলী, সদর, কাপ্তাই উপজেলা বিভিন্ন স্থানে থেকে বাঁশ উৎপাদন হয়। সব মিলিয়ে প্রতিবছর দুই কোটির চেয়ে বেশি বাঁশ আহরণ করা হচ্ছে। তবে আজ থেকে কয়েক বছর আগে ওই সব বাঁশ বাগান থেকে অন্তত তিন কোটি বাঁশ আহরণ করা হতো। আহরণ করা বাঁশ বিক্রির জন্য অন্তত ১০টি স্থানে হাট বসে।

গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে জেলা বন বিভাগের জুন নিয়ন্ত্রণ,অশ্রেণিভুক্ত বনাঞ্চল, উত্তর ও দক্ষিণ বন বিভাগ থেকে এক কোটি ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৪৫৭টি বাঁশ আহরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।  প্রতি বাঁশ থেকে এক টাকা ৪০ পয়সা করে বন বিভাগ রাজস্ব নেয়। তবে ব্যবসায়ীদের হিসাবে বাঁশ আহরণের সংখ্যা অনেক বেশি বলে জানা গেছে। উৎপাদিত বাঁশের মধ্যে রয়েছে মুলি, ওরা, মিতিঙ্গা, ডুলু, ফারুয়া ও বাইজ্জা। সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় মুলি বাঁশ।

গত সোমবার সকালে সদর উপজেলা কুতুকছড়ি বাজারে বাঁশের হাটে গিয়ে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদর উপজেলার কুতুকছড়ি এলাকা, নানিয়ারচরে বগাছড়ি, সাবেক্ষ্যং ও ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত শ্রমিক বন থেকে বাঁশ কেটে কুতুকছড়ি বাজারে বাঁশে হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। সেখানে প্রতিটি বাঁশ আকারভেদে ১৫ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। শুধু ওই বাজার থেকে দৈনিক ১০টি ট্রাক বোঝাই বাঁশ নেওয়া হয়।

প্রতিটি ট্রাকে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ৭০০ বাঁশ নেওয়া হয়। প্রতি ট্রাক বাঁশ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী ও ঢাকা বিক্রি এক লাখ ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে প্রতিটি বাঁশ ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে বিক্রি করা যায়। প্রতি মৌসুমে শুধু কুতুকছড়ি বাজারের বাঁশে হাট থেকে অন্তত ৩৫ লাখ বাঁশ বেচাকেনা হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাঁশের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে নানিয়ারচর ও কাউখালী উপজেলা বিভিন্ন গ্রামে বাড়ির আশপাশে ও পরিত্যক্ত টিলাগুলোতে বাঁশ বনগুলো সংরক্ষণ করে স্থানীয়রা। এখন ওসব বাঁশ বাগান তাদের একমাত্র আয়ে উৎস হয়ে উঠেছে। শত শত পরিবার ইতিমধ্যে বাঁশ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছে। ছড়া দিয়ে ভেলা বানিয়ে হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয়। আকারভেদে প্রতিটি বাঁশ ১৫ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়।

কাউখালী উপজেলা শামকুছড়ি গ্রামের সুইচিং মারমা ও হারেঙ্গী এলাকার বাসিন্দা নির্মল চন্দ্র চাকমা বলেন, প্রতি সপ্তাহে বাঁশ বিক্রি করে পরিবারের  খরচ মেটান। বনাঞ্চলে ও নিজের বাগান থেকে এসব বাঁ নিয়ে আসা হয় । গ্রামবাসীরা দল বেঁধে হাটে বিক্রির জন্য বাঁশ নিয়ে আসেন।তবে আগে বিভিন্ন বনে থেকে বাঁশ সংগ্রহ করে নিয়ে আসা যায়। এখন সব গুলো ব্যক্তি মালিকানা হয়ে গেছে। সে জন্য আগের মতো বাঁশ পাওয়া যায় না।

কুতুকছড়ি বাজারের শ্রমিক সুজন চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, আমরা শুধু ট্রাকে বাঁশ বোঝাইয়ের কাজ করি। প্রতিটি ট্রাকে বোঝাই করতে ১০ হাজারা টাকা নেওয়া হয়। এই কাজে আমরা প্রায় দেড় শতাধিক শ্রমিক রয়েছি। এ ছাড়া আমাদের এলাকায় বাঁশ কাটা ও পরিবহন শ্রমিক রয়েছে শত শত।

কুতুকছড়ি এলাকায় ইউপি সদস্য ও বাঁশ ব্যবসায়ী নিবারণ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, কুতুকছড়ি বাজারের নৌঘাটে বাঁশ শ্রমিকেরা ভেলা করে বিক্রির জন্য বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ নিয়ে আসেন। আমরা ব্যবসায়ীরা আঁকার ভেদে ১৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কিনে নিই।

এ ছাড়া বাইজ্জা বাঁশের দাম প্রতিটি ৯০ থেকে ১০০ টাকা। ট্রাকে বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা হয়। আমার জানামতে রাঙামাটিতে হাজার হাজার বাঁশ কাটা, পরিবহন ও বিভিন্ন কাজে জড়িত রয়েছে। বাঁশে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা করলে আরও উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।

উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আমার আওতাধীন এলাকায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৫৫ লাখের বেশি বাঁশ আহরণ করা হয়েছে। তবে কয়েক লাখ বাঁশ উৎপাদন হয়েছে। এসব বাঁশ কর্তন করা সম্ভব হয়নি। বেশি করে শিজক ও কাচালং সংরক্ষিত বনে বাঁশ উৎপাদন হয়।