Thank you for trying Sticky AMP!!

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিনটি অ্যাম্বুলেন্স দীর্ঘদিন ধরে বিকল পড়ে আছে। গত শুক্রবার ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণের টিনশেড ঘর থেকে তোলা

তিনটি অ্যাম্বুলেন্স বিকল, ভোগান্তি

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের মাঠের শেডঘরের নিচে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়েছে। এর মধ্যে দুটির চাকাসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে।

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিনটি অ্যাম্বুলেন্স দীর্ঘদিন ধরে বিকল পড়ে আছে। অন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে কোনোরকমে সেবা দেওয়া হচ্ছে। সেটাও মাসে দুই-একবার নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থায় মুমূর্ষু রোগীদের জেলা শহর বা ময়মনসিংহে পাঠানো সম্ভব হয় না। এতে রোগীর স্বজনদের ভাড়ায় অ্যাম্বুলেন্সের ওপর নির্ভর করতে হয়।

গত শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের মাঠের শেডঘরের নিচে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়েছে। এর মধ্যে দুটির চাকাসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। এই দুটো অ্যাম্বুলেন্স পলিথিনের ত্রিপল দিয়ে ডেকে রাখা হয়েছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সগুলো দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা হয় না। দীর্ঘদিন ধরে অ্যাম্বুলেন্সগুলো পড়ে থাকায় পুরো জরাজীর্ণ হয়ে গেছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, দীর্ঘদিন ধরে ওই শেডের নিচেই ওই তিনটি অ্যাম্বুলেন্স পড়ে থাকতে দেখছেন। কখনো ওই তিনটি অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে দেখেন নাই। একই জায়গায় সেগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

তিনটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে দুটি একদম বিকল হয়ে গেছে। আরেকটি মেরামত করা হলে চালানো যেত।
মো. রহিম , অ্যাম্বুলেন্সচালক

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১৯৯৫ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি অ্যাম্বুলেন্স দেয়। ১০ বছর চলার পর ২০০৬ সালে অ্যাম্বুলেন্সটি বিকল হয়ে যায়। পরে ওই বছর নতুন একটি অ্যাম্বুলেন্স দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে আরেকটি নতুন অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। এখন এই অ্যাম্বুলেন্সটি চলছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, প্রতিদিনই কোনো না কোনো মুমূর্ষু রোগীকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল অথবা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে একটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। সেটাও মাসে কয়েকবার বিকল হয়ে পড়ে থাকে। তখন রোগীদের ভাড়া করা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর নির্ভর করতে হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়েন দরিদ্র রোগীদের স্বজনেরা। কারণ, বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া অনেক বেশি হয়। তখন তাঁরা রোগীদের সিএনজিচালিত অটোরিকশায় অন্য হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে দুটো অ্যাম্বুলেন্স সচল থাকলে সব সময় সেবা দেওয়া যাবে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে আল-আমিন নামের এক রোগীর স্বজনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, যদি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মুমূর্ষু কোনো রোগী আনা হয়। চিকিৎসকেরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করে দেন। এ সময় জরুরিভাবে প্রয়োজন হয় অ্যাম্বুলেন্সের। কিন্তু বেশির ভাগ সময় অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি সচল অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। অনেক সময় অন্য রোগী নিয়ে বাইরে থাকে। প্রয়োজন অনুযায়ী বেশির ভাগ রোগীরা ওই সচল অ্যাম্বুলন্সেটিও পান না। বাধ্য হয়ে তাঁদের কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে জেলা শহর কিংবা ময়মনসিংহে নেওয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতাল এলাকার একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, যেকোনো রোগীর বেশি খারাপ অবস্থা দেখলে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে জেলা শহরের হাসপাতালে স্থানান্তর করতে বলা হয়। তবে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় না। বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে এক থেকে দুই হাজার টাকা ভাড়া লাগে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সচালক মো. রহিম বলেন, তিনটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে দুটি একদম বিকল হয়ে গেছে। আরেকটি মেরামত করা হলে চালানো যেত। বর্তমানে যে অ্যাম্বুলেন্সটি চালাচ্ছি। অনেক সময় সেটার ইঞ্জিনের কাজ করতে হয়। তখন হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সেবা কিছুটা সময় বন্ধ থাকে।

মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গাজী রফিকুল হক বলেন, ওই অ্যাম্বুলেন্স তিনটি বিকল হয়ে পড়ে আছে। দুটি পুরোপুরি বিকল হয়ে গেছে। তবে একটি মেরামত করা গেলে, সচল করা সম্ভব হবে। বর্তমানে একটি অ্যাম্বুলেন্স ঠিকঠাক আছে। সেটাও সম্প্রতি সময়ে বিকল হয়ে গিয়েছিল। পরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিজস্ব অর্থে মেরামত করা হয়েছে। যেকোনো সময় সেটাও আবার বিকল হয়ে যেতে পারে। সম্প্রতি নতুন একটি অ্যাম্বুলেন্স ও বিকল অ্যাম্বুলেন্স সচল করতে বরাদ্দ চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।