Thank you for trying Sticky AMP!!

সিলেটে ভারত থেকে চোরাই পথে ‘বুঙ্গার চিনি’ আসা থামছেই না

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পান্তুমাই এলাকা থেকে ১৪২ বস্তা চোরাই চিনি জব্দ করা হয়েছে। রোববার রাতে

সিলেটের সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে চোরাই পথে চিনি আসা থামছেই না। এসব চিনি সিলেট শহরসহ বিভাগের চার জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। চোরাচালানে আসা এসব চিনি স্থানীয়ভাবে ‘বুঙ্গার চিনি’ নামে পরিচিত। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব চিনি উদ্ধারে সিলেট জেলা ও মহানগরজুড়ে অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত ২৪ আগস্ট প্রথম আলোর শেষ পাতায় ‘সিলেটের বাজারে বুঙ্গার চিনি’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর চিনি উদ্ধার ও চোরাকারবারিদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা আরও বাড়ে। প্রতিদিন জেলার কোথাও না কোথাও এসব চিনি জব্দ করছে পুলিশ। তবে এ তৎপরতার মধ্যেও ভারতীয় চিনি চোরাই পথে ঠিকই বাজারে আসছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

পুলিশের ভাষ্য, সেপ্টেম্বর মাসেই জেলা পুলিশ ‘বুঙ্গার চিনি’ জব্দের ঘটনায় ২৯টি মামলা করেছে। এসব মামলায় ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চিনি জব্দ হয়েছে ১ হাজার ২৩৭ বস্তা। এসব বস্তায় মোট ৬২ হাজার ৪২ কেজি চিনি ছিল। অন্যদিকে চিনিসহ চোরাই পণ্য উদ্ধারের ঘটনায় একই মাসে সিলেট মহানগর পুলিশ আটটি ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৯) সাতটি মামলা করেছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩১ জনকে। আর চিনি জব্দ করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৪৭২ কেজি।

এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক (অপারেশন) রাশেদ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, বরাবরের মতো সীমান্তে বিজিবির কড়া নজরদারি অব্যাহত আছে। চোরাচালান হয়ে আসা চিনি জব্দ করতে বিজিবি তৎপর আছে। গত মাসেও প্রচুর পরিমাণ চিনি জব্দ করা হয়েছে।

সীমান্ত এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী শতাধিক স্থান দিয়ে চোরাই পণ্য সিলেটে প্রবেশ করে। সীমান্ত এলাকার অন্তত এক হাজার চোরাকারবারি এই কাজে জড়িত। সাম্প্রতিক সময়ে চোরাই চিনি আটকের পরিমাণ আগের চেয়ে বেশি হলেও পাচারের পরিমাণের তুলনায় তা খুবই কম।

Also Read: বালুর নিচে থরে থরে সাজানো ছিল ভারতীয় চিনি, সাড়ে ৭ টন জব্দ

সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) শেখ মো. সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, এর আগে সিলেটের ইতিহাসে চোরাই পথে আসা চিনি এমন পরিমাণ কখনোই উদ্ধার হয়নি। সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুনের নির্দেশে জেলা পুলিশ তৎপর আছে। চিনি পাচারের কোনো সংবাদ পাওয়া মাত্রই পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। চিনি জব্দের পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের চোরাকারবারিরা ভারতের কিছু ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে চোরাই পথে চিনি আনছেন। চোরাকারবারিদের নিয়োগ করা শ্রমিকেরা দিন–রাতে সুযোগ বুঝে ৫০ কেজির একেকটা চিনির বস্তা মাথায় করে সীমান্ত পার করেন। পরে নৌকা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ট্রাক কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে মজুত করা হয়। এরপর একশ্রেণির ব্যবসায়ীদের তৎপরতায় এসব চিনি সিলেট নগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চলে যায়।

ভারত থেকে চোরাই পথে আসা চিনির চোরাচালানে জড়িত দুজন ও তিনজন চিনি ব্যবসায়ী জানান, দেশীয় কিংবা আমদানি করা প্রতি ৫০ কেজি ওজনের চিনির বস্তার চেয়ে ভারতীয় চিনি অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কমে পাওয়া যায়। ফলে ভারতীয় চিনির চাহিদা পাইকারি ও খুচরা বাজারে ব্যাপক। দিনে গড়ে এক থেকে দেড় কোটি টাকার চিনি চোরাই পথে সিলেটে পাচার হয়ে থাকে।

বালুর ট্রাক থেকে জব্দ করা ভারতীয় চিনির বস্তা। চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা এই চিনি ঢাকায় নেওয়া হচ্ছিল। সিলেটের ওসমানীনগর থেকে চালানটি জব্দ করা হয়

সিলেট মহানগর পুলিশের তথ্যমতে, চোরাই পণ্য জব্দ করা হয়েছে ১ কোটি ৫৯ লাখ ২৮ হাজার ৫৫০ টাকার। এর মধ্যে চিনি উদ্ধার করা হয়েছে ১১ হাজার ২৫০ কেজি। এ ছাড়া জব্দের তালিকায় আছে, চোরাই পথে আসা বিভিন্ন ধরনের বিস্কুট, চকলেট, কিন্ডার জয় বক্স, হরলিকস, ট্যাংক, কাজুবাদাম, স্কিন সাইন ক্রিম, ভরলিন ক্রিম, শাড়ি, বিড়ি, দুটি পিকআপ, একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ইত্যাদি।  

র‌্যাবের জব্দের তালিকায় আছে ২৬ হাজার ২২২ কেজি চিনি, তিনটি ট্রাক, ১১ হাজার ১১৪ কেজি চা–পাতা এবং ৪৮৯ জোড়া স্পোর্টস বুট জুতা।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. আজবাহার আলী শেখ প্রথম আলোকে বলেন, চিনিসহ যাবতীয় চোরাই পণ্য উদ্ধারে মহানগর পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশ এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। ফলে চোরাই পণ্যসহ চোরাচালানে জড়িত ব্যক্তিরাও নিয়মিত ধরা পড়ছে।