Thank you for trying Sticky AMP!!

‘কথা রাখলা না, আমারে অকূলপাথারে ফালাইয়্যা চইল্যা গেলা’

ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে সংঘর্ষে নিহত পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলামের স্ত্রী রুমা আক্তার ও একমাত্র মেয়ে তানহা ইসলাম (৭) শোকে কাতর। রোববার বিকেলে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা সদরে সরকারি বিনোদা সুন্দরী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা সদরে তখনো মো. আমিরুল ইসলামের লাশ পৌঁছায়নি। কিন্তু সরকারি বিনোদা সুন্দরী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে তখন অনেক মানুষ। সবাই অপেক্ষা করছেন লাশের জন্য। ছেলের শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা রহিমা বেগম। তাই তাঁকে মাঠের পাশে সদরের চকমিরপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের একটি কক্ষে রাখা হয়। আর বাবা মো. সেকেন্দার আলী মোল্লার মুখে কোনো কথা নেই, নীরবে কেঁদে যাচ্ছেন তিনি। ছোট ভাই আর বড় বোনও বুক চাপড়ে আহাজারি করছেন।

গতকাল শনিবার ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে সংঘর্ষে নিহত হন পুলিশের কনস্টেবল মো. আমিরুল ইসলাম (৩৩)। ঢাকায় ময়নাতদন্তসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে পুলিশের লাশবাহী গাড়িতে করে রোববার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিনোদা সুন্দরী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে তাঁর লাশ আনা হয়। তখন স্বজনদের আহাজারিতে আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

লাশের গাড়ির সঙ্গে নিহত আমিরুলের স্ত্রী রুমা আক্তার ও ছয় বছরের সন্তান তানহা ইসলামও আসে। মাঠে বসেই স্বামী হারানোর শোকে কাঁদছিলেন তিনি। স্বামীর উদ্দেশে তিনি বলতে থাকেন, ‘আমারে বলছিলা একসঙ্গে থাকবা। কিন্তু সেই কথা রাখলা না। আমারে অকূলপাথারে ফালাইয়্যা, মেয়েরে এতিম কইর‌্যা চইল্যা গেলা! আমরা এহন কেমনে বাঁচুম, আমাগো এহন কে দেখব...।’ তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে জেলা প্রশাসক রেহেনা আক্তার তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খানসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

মাগরিবের নামাজের পর ওই মাঠেই আমিরুলের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহীউদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, পুলিশ সদস্যসহ উপজেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশ নেন। পরে উপজেলা সদরে কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।

পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলামের স্বজনদের আহাজারি যেন থামছে না

জেলা–পুলিশ এবং স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সেকেন্দার আলী মোল্লার ছেলে আমিরুল ইসলাম। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি মেজ। বড় বোন শেফালি বেগমের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট ভাই আজিজুল হক ডিগ্রিতে (পাস) পড়াশোনা করেন। ২০১১ সালের ১৫ আগস্ট আমিরুল ইসলাম পুলিশ বিভাগে কনস্টেবল পদে যোগ দেন। চলতি বছরের ৩ আগস্ট থেকে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইনভেস্টিগেশন (সিটিআই-৩) ইউনিটে কর্মরত ছিলেন।

প্রায় দেড় বছর আগে আমিরুলের গ্রামের বাড়ি যমুনা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে। এরপর পাশের টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ফয়েজপুর গ্রামে এক ব্যক্তির জায়গা ভাড়া নিয়ে সেখানে ঘর তোলা হয়। এ বাড়িতে বৃদ্ধ মা–বাবা ও ছোট ভাই থাকেন। তবে কর্মস্থল ঢাকায় হওয়ায় আমিরুল স্ত্রী রুমা আক্তার ও মেয়ে তানহা আক্তারকে নিয়ে শাহজাহানপুরের একটি ভাড়াবাসায় থাকতেন।

Also Read: বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য নিহত

পুলিশ সূত্র আরও জানায়, গতকাল শনিবার বিকেলে ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশস্থলে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড় এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে আমিরুলের ওপর হামলা হয়। এতে গুরুতর আহত হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত আমিরুলের চাচা মহির মোল্লা বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তাঁর ভাতিজা আমিরুল। পরিবারে স্ত্রী, শিশুসন্তানসহ বৃদ্ধ মা–বাবা ও ছোট ভাই রয়েছে। আমিরুলের মৃত্যুতে পরিবারটির ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরাও চিন্তিত। নিহত আমিরুলের ছোট ভাইকে সরকার চাকরির ব্যবস্থা করলে পরিবারটি বেঁচে যেত।

দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান। পাশাপাশি সরকারকে অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি।

Also Read: পুলিশ সদস্য হত্যার বিচার ত্বরিত গতিতে করা হবে: আইনমন্ত্রী