Thank you for trying Sticky AMP!!

এসএসসির পর ১৫০ ডলারে শুরু, স্নাতকোত্তর শেষের আগেই মাসে আয় ৫ লক্ষাধিক টাকা

আল শাহরিয়াত করিম

এক যুগ আগে ফ্রিল্যান্সিং করা শুরু করেন আল শাহরিয়াত করিম। শুরুতে অনুবাদ, মার্কেটিং ও আধেয় লেখার কাজ করতেন। প্রথম মাসে আয় হয় ১৫০ ডলারের মতো। তবে এখন তিনি আগের মতো কাজ করেন না। বর্তমানে পশ্চিমা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করেন তিনি। ট্রেডমার্ক, পেটেন্ট, কপিরাইট নিয়ে কাজ করা এই তরুণের বর্তমানে প্রতি মাসে গড় আয় পাঁচ লক্ষাধিক টাকা।সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ইতিমধ্যে তিনি জাতীয় পর্যায়ে পাঁচটি পুরস্কারও পেয়েছেন।

আল শাহরিয়াতের বাড়ি মাদারীপুর পৌরসভার বটতলা এলাকায়। বাবা মো. বজলুল করিম অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। স্থানীয় একটি কলেজ থেকে স্নাতক পাসের পর রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পড়ছেন শাহরিয়াত। ভবিষ্যতে সুইডেন থেকে পিএইচডি করতে চান তিনি।

যেভাবে শুরু

২০১১ সালে এসএসসি পরীক্ষার পর তিন মাসের অবসর সময় পান শাহরিয়াত। এখনকার মতো তখন দ্রুতগতির ইন্টারনেট ছিল না। ফ্রিল্যান্সিং শেখার আগ্রহ নিয়ে ‘সামহোয়্যারইন ব্লগে’ লেখা পড়তে শুরু করেন শাহরিয়াত। সেখানে প্রথম ব্লগিং ও অ্যাডসেন্স নিয়ে ধারণা পান। এরপর একটি ডোমেইন কিনে ফ্রিল্যান্সিং করা শুরু করেন।

শুরুর গল্প বলতে গিয়ে শাহরিয়াত বলেন, ‘অনলাইনে কীভাবে আয় করা যায়’—ইংরেজিতে লিখে ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করতেন। রাত জেগে প্রতিদিন ব্লগে লেখা পড়তেন। ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে বিস্তারিত জানতে কয়েক শ লেখা পড়েছেন। আয়ের টাকা পাওয়ার আগে তাঁর বিশ্বাসই হয়নি, অনলাইনে আয় করা সম্ভব। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে গুগল অ্যাডসেন্স থেকে তিনি ১৫০ ডলারের এক চেক হাতে পান।
ফ্রিল্যান্সিং পেশায় শাহরিয়াতের শুরু ব্লগার বা লেখক হিসেবে। কিন্তু আয় কম হওয়ায় তিনি প্রফেশনাল কনটেন্ট রাইটার, অনুবাদক ও মার্কেটার হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। এরপর ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস ‘ওডেক্স ডটকমে’ অ্যাকাউন্ট খোলেন তিনি। কিন্তু বয়স ১৮ না হওয়ায় বিপত্তি বাধে। পরে বাবার নামে অ্যাকাউন্ট খুলে কাজের সন্ধান করেন। ওই মার্কেটপ্লেস থেকে বিদেশিদের দেওয়া প্রথম কাজ পেয়ে ২৫৮ ডলার আয় করেন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে বিচরণ ঘটে তাঁর।

প্রশিক্ষণ ও সফলতা

ফ্রিল্যান্সিং পেশায় পা রেখে শাহরিয়াত শিখেছেন অ্যানিমেশন ডিজাইন, বিগ ডেটা ভিজুয়ালাইজেশন, ই-কমার্স ম্যানেজমেন্ট, প্রমোশন অ্যান্ড ব্র্যান্ডিং, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, ভায়াবিলিটি অ্যান্ড ফেসিয়াবিলিটি রিসার্চ, পিআর পাবলিকেশনসহ বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে। অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কোর্স করেছেন তিনি। আপওয়ার্ক মার্কেটপ্লেসে ‘টপ রেটেড প্লাস’ ফ্রিল্যান্সার তিনি। আল শাহরিয়াত বলেন, প্রতি মাসে ফ্রিল্যান্সিং থেকে তাঁর গড়ে আয় পাঁচ হাজার ডলারের মতো। আপওয়ার্ক থেকে তিনি শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ ডলার আয় করেছেন।

আউটসোর্সিং খাতে বিশেষ অবদান রাখায় বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন আল শাহরিয়াত করিম

ঘরে বসে বিদেশে চাকরি

শাহরিয়াত বাংলাদেশে থেকেই সুইডেনভিত্তিক আন্তর্জাতিক কসমেটিকস বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এক্সল্যাশেলিগ্যাল অ্যাডভাইজর (ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অ্যান্ড কন্ট্রাক্ট) হিসেবে কাজ করছেন। সেখান থেকে তিনি প্রতি মাসে ১ হাজার ৪০০ ডলার আয় করছেন। আল শাহরিয়াত বলেন, ‘ইউরোপে আমার দুটি জব অফার আছে। একটি সুইডেনে, আরেকটি এস্তোনিয়ায়। বর্তমানে সুইডিশ একটি প্রতিষ্ঠানে রিমোট জব করছি। মূলত সেখানেই জয়েন করার ইচ্ছা আছে। ইউরোপের কোথায় গিয়ে থাকব, সেটা নির্ভর করছে ভালো স্কলারশিপের ওপর। আমার কাছে জবের চেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।’

২০১৭ সালের শেষের দিকে তুরস্কের একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ নিয়ে প্রথমবারের মতো নয়াদিল্লিতে যান শাহরিয়াত। এরপর বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় দুবাই, ওমান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, নেপাল, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন তিনি।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের স্বীকৃতি

শাহরিয়াত করিম আউটসোর্সিং খাতে বিশেষ অবদান রাখায় এখন পর্যন্ত পাঁচটি পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৫ সালে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলকের হাত থেকে জাতীয় হাইস্কুল প্রোগ্রামিং কনটেস্ট অ্যাওয়ার্ড (এনএইচএসপিসি-ঢাকা আঞ্চলিক), ২০১৭ সালে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসকের হাত থেকে এলইডিপি বেস্ট ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড, ২০১৮ সালে ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের হাত থেকে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড এবং ২০২০ সালে বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড পান উদ্যমী এই তরুণ।

আল শাহরিয়াত প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর পথচলায় প্রতিটি পুরস্কার তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে। নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। নতুন করে যাঁরা ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আসতে চান, তাঁদের ধৈর্য ধরে লেগে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।