Thank you for trying Sticky AMP!!

ঘূর্ণিঝড় হামুনে বিধ্বস্ত কুতুবদিয়ার ৬০০ ঘরবাড়ি, বিদ্যুৎ-ইন্টারনেট বন্ধ

ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি। বুধবার বিকেলে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়নে

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে মাত্র ৩০ মিনিটের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হয় অন্তত ৬০০ কাঁচা ঘরবাড়ি।

ঝড়ের কারণে গতকাল বিকেল থেকে পুরো দ্বীপ অন্ধকারে। বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ আছে ইন্টারনেট সেবা।

Also Read: কক্সবাজারে ৩০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, বিদ্যুৎ–ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুন গতকাল রাতে কক্সবাজার শহরে আঘাত হানে, তখনো কুতুবদিয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। সেখানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। রাত সাড়ে নয়টার দিকে হামুন আঘাত হানে কুতুবদিয়ায়। এরপর আধা ঘণ্টার তাণ্ডবে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের অন্তত ৬০০ কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত এবং চার হাজারের বেশি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে ত্রাণসহায়তা ও গৃহনির্মাণসামগ্রী পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই উপকূলীয় কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছিল। এ কারণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তবে গাছপালা ও উড়তে থাকা ঘরের টিনের আঘাতে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বিকেল থেকে দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ আছে।

মঙ্গলবার রাতে মাত্র ৩০ মিনিটের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হয় অন্তত ৬০০ কাঁচা ঘরবাড়ি। বুধবার বিকেলে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়নে

বিকেলের দিকে মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক চালু হলেও বিদ্যুৎ না থাকায় অনেকে মুঠোফোন চালু করতে পারছেন না। বিদ্যুতের কারণে উপজেলার কয়েকটি হাটবাজারসহ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে উপজেলার প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র বড়ঘোপ বাজারের হাজারো দোকানপাট, হোটেল রেস্তোরাঁ, সরকারি অফিস-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখা যায়।

কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিকদার বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব ও ভারী বৃষ্টিতে তাঁর ইউনিয়নে এক হাজারের বেশি কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। গাছপালা ভেঙে পড়েছে কয়েক হাজার। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে তিনি ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করছেন। কৈয়ারবিল ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মীর কাশেম বলেন, বাঁধের পশ্চিম পাশে থাকা ৭০০টি কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খোলা আকাশে নিচে শত শত পরিবার। আজ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ ত্রাণসহায়তা পাননি।

Also Read: মহেশখালীতে হামুনের আঘাতে উপড়ে পড়েছে পল্লীবিদ্যুৎতের খুঁটি, সড়কে গাছ পড়ে বন্ধ যান চলাচল

উপজেলার প্রধান সড়কের দুই পাশে ১৭ কিলোমিটার এলাকায় অন্তত ১০ হাজার গাছ উপড়ে পড়েছে। এতে আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ ছিল। সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যুৎ না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন দিশাহারা। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, মহেশখালীর মাতারবাড়ি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে আলোকিত হচ্ছে কুতুবদিয়া। ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যুতের তার ও খুঁটি ভেঙে পড়ায় এখনো উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা নাদিম বলেন, গতকাল রাত আটটা থেকে আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ১৮ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়ায় দেয়াল চাপা পড়ে আহত তিনজনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যুতের তার ও খুঁটি ভেঙে পড়ায় এখনো কুতুবদিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি

২১৫ দশমিক ৮০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে লোকসংখ্যা ১ লাখ ৩১ হাজার। গত ১৪ এপ্রিল দ্বীপে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ–সংযোগ স্থাপনের পরের ছয় মাসে কুতুবদিয়ার দৃশ্যপট পাল্টে যায়। দ্বীপের চারদিকে বেড়িবাঁধ আছে প্রায় ৪০ কিলোমিটার। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে দ্বীপের অন্তত ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।