Thank you for trying Sticky AMP!!

দিনমজুরি করে পড়াশোনা ও সংসার দুটোই চালায় তানবীর

তানবীর হোসাইন

মাকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করে আলাদা সংসার পাতেন বাবা। মা ও ছোট এক বোনকে নিয়ে বিপাকে পড়ে একমাত্র ছেলে তানবীর হোসাইন। সংসারে দেখা দেয় অভাব–অনটন। মা লোকজনের ঘরে কাজ করে সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু পাহাড়ি এলাকায় তেমন কাজ নেই। আয়রোজগার কম। ফলে খেয়ে না–খেয়ে চলছিল টানাপোড়েনের সংসার। একটা সময় তানবীরকেই সংসারের হাল ধরতে হয়।

তানবীর তখন কক্সবাজার শহরের বায়তুশশরফ জব্বারিয়া একাডেমির নবম শ্রেণির ছাত্র। সারা দিন শহরে রিকশা চালিয়ে সে ৪০০-৫০০ টাকা পেত। তা দিয়ে দুই ভাইবোনের লেখাপড়া এবং সংসারে দুই বেলা খাবার জুটত না। পড়ালেখাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো। কিন্তু হাল ছাড়েনি অদম্য তানবীর। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। বড় হয়ে সে প্রকৌশলী হতে চায়।

তানবীর হোসাইন প্রথম আলোকে বলে, ২০২০ সালে সে শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমিতে (উচ্চবিদ্যালয়) নবম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ফরম কেনে। কিন্তু ভর্তির টাকা হাতে ছিল না। বই কেনার টাকাও ছিল না। বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি এম সিরাজুল ইসলাম তার পাশে দাঁড়ান। তানবীরকে তিনি বিনা বেতনে বিজ্ঞান শাখায় পড়ার সুযোগ করে দেন। বই কিনে দেন। বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক রেজাউল করিম তাকে বিনা টাকায় পড়িয়েছেন। গণিতের শিক্ষক শাহেদুল ইসলাম বিনা বেতনে পড়িয়েছেন ইংরেজি। সে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ায় সবাই খুশি। কলেজে ভর্তি নিয়ে চিন্তায় ছিল সে। আবারও তার পাশে দাঁড়ান সিরাজুল ইসলাম।

এম সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সুবিধাবঞ্চিত তানবীর অত্যন্ত মেধাবী ছেলে। পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ অনেক।

তানবীর হোসাইন বলে, ‘কলেজে ভর্তি হয়েছি। এখন কাজ করে হলেও লেখাপড়াটা চালিয়ে যেতে চাই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মা ও ছোট বোনকে নিয়ে পরিবারের খরচ চালানো।’

উত্তরণ মডেল কলেজে ভর্তি হয়েছে তানবীর। সেই কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, তানবীরের মতো সুবিধাবঞ্চিত কয়েকজনকে বিনা বেতনে পড়ালেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তবে পরিবারগুলোর আর্থিক অবস্থা এত খারাপ যে তাদের আরও সহযোগিতা দরকার।