Thank you for trying Sticky AMP!!

হাত বদলে বেগুনের দাম বেড়ে দ্বিগুণ 

উপজেলার চরাঞ্চলে বিপুল পরিমাণে বেগুন উৎপাদন হয়েছে। এই উপজেলার বেগুনের খ্যাতি সারা দেশেই।

বেগুনের অন্যতম পাইকারি বাজার জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার টুপকারচর। বাজারে কেউ বেগুন বিক্রি করছেন। আবার কেউ পাইকারি কিনে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। গত বুধবার বিকেলে

বেগুনের অন্যতম পাইকারি বাজার জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার টুপকারচর। গত বুধবার সেখানে কৃষক এক কেজি বেগুন বিক্রি করছেন প্রকারভেদে ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে। সেখান থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে জামালপুর শহর। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সকাল বাজারে খুচরা পর্যায়ে ক্রেতারা এই বেগুন কিনছেন প্রকারভেদে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। 

উপজেলার চরাঞ্চলে বিপুল পরিমাণে বেগুন উৎপাদন হয়েছে। এই উপজেলার বেগুনের খ্যাতি সারা দেশেই। এই বেগুনের চাহিদা অনেক। গতবারের থেকে এবার বেগুনের ভালো ফলন হয়েছে। চাহিদা বেশি থাকায় বসছে বেগুনের পাইকারি বাজার।

উপজেলায় এবার বিপুল পরিমাণ বেগুন চাষ হয়েছে। এবার ফলন ও দাম ভালো। প্রকারভেদে বাজারে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি হচ্ছে। 
আবদুল্লাহ আল ফয়সাল, কৃষি কর্মকর্তা, মেলান্দহ উপজেলা

উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের কৃষক রাশেদুল ইসলাম ৩০ শতক জমিতে বেগুনের চাষ করেছেন। টুপকারচর পাইকারি বাজারে খেতের তোলা বেগুন গতকাল বিকেলে বিক্রি করতে এসেছিলেন। প্রতি কেজি বেগুন ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। অথচ ওই বাজারের ১৫ কিলোমিটার দূরে খুচরা সবজি বাজারে দেখা গেলে উল্টো চিত্র। সেখানে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে। 

শুধু সকাল বাজার নয়, একই চিত্র জামালপুর শহরের বানিয়াবাজার, বড় বাজার, শফি মিয়ার সবজির বাজারগুলোতেও। খুচরা বাজারগুলোতে বেগুনসহ সব ধরনের সবজি চড়া দামে বিক্রি হলেও তাতে সবজিচাষিদের তেমন লাভ হচ্ছে না। মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছেন একশ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী। হাত ঘুরলেই বাড়ছে সবজির দাম। এতে ঠকে যাচ্ছেন সাধারণ ক্রেতা ও সবজিচাষিরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, জামালপুর-ইসলামপুর মহাসড়কের পাশেই ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে পাইকারি টুপকারচর বাজার। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও চরাঞ্চল থেকে ইজিবাইক, রিকশা ও ঘোড়ারগাড়ি, মহিষের গাড়ি, ভ্যানগাড়ি ও খাঁচায় করে বাজারে বেগুন নিয়ে আসছেন কৃষকেরা। বিভিন্ন জেলায় নেওয়ার জন্যে সারিবদ্ধভাবে ট্রাক ও পিকআপভ্যান দাঁড়িয়ে রয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে শুরু হয় দরদাম। বিকেল চারটার মধ্যেই পুরো হাট বেগুনে ভরে যায়। এরপর শুরু বেচাকেনা। বিভিন্ন জেলায় থেকে আসা পাইকাররা কৃষকদের কাছ থেকে বেগুন কিনে নেন। তারপর শ্রমিক দিয়ে বস্তায় ভরা হচ্ছে।

ওই বাজারে আসা কয়েকজন কৃষক বলেন, উপজেলার পূর্বপাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রমত্তা যমুনার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ থাকার কারণে একসময় নদটি ছিল প্রচণ্ড খরা¯স্রোতা। তবে যমুনার সঙ্গে এখন সংযোগ নেই। তবে প্রতিবছর যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের বন্যার পানিতে উপজেলার বেশির ভাগ চরাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে উপজেলার পূর্বাঞ্চলের টুপকারচর, বালুর চর, সাদুপুর, কান্দারপাড়া, শ্যামপুর, ৪ নম্বর চর, ২ নম্বর চর, ৫ নম্বর চর, কাজাইকাটা, মাহমুদপুরসহ বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে পলিমাটি পড়ে। প্রতিবছর কৃষকেরা এসব চরে বেগুনের চাষ করেন। ধীরে ধীরে বেগুন চাষে খ্যাতি অর্জন করেন এখনকার কৃষকেরা। 

বেগুনের পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুল মজিদ বলেন, ‘কৃষকদের কাছ থেকে বেগুনের প্রকারভেদে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে কিনছি। বেগুনগুলো ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করি। কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা লাভে বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করি। আড়তদাররা বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। আর খুচরা ব্যবসায়ীরাও কিছু লাভ করেন। ফলে খুচরা বাজারে দাম একটু বেশি হয়। প্রতিদিন এই বাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ মণ বেগুন সারা দেশে যাচ্ছে।’ 

টুপকারচর এলাকার চাষি সাইদুর রহমান বলেন, ‘উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি টুপকারচর ও শ্যামপুর এলাকায় বেগুন চাষ হয়। আগে বেগুন মেলান্দহ বাজারে পাইকারি বিক্রি করতাম। কয়েক বছর ধরে শুধু বেগুন বিক্রির জন্যে টুপকারচর বাজার বসেছে। বেশির ভাগ কৃষক এখানেই বেগুন বিক্রি করে থাকেন। ৩ মণ বেগুন ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলাম।’

মেলান্দহ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল ফয়সাল বলেন, এবার উপজেলায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বেগুন চাষ হয়েছে। ৬০ হাজার মেট্রিক টন বেগুন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলায় এবার বিপুল পরিমাণ বেগুন চাষ হয়েছে। এবার ফলন ও দাম ভালো। প্রকারভেদে বাজারে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষক ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন।