Thank you for trying Sticky AMP!!

কুমিল্লায় হাতিপুকুর ভরাটের প্রতিবাদে মানববন্ধন

কুমিল্লা নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুরে ২৫০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক হাতিপুকুরটি ভরাটের প্রতিবাদে মানববন্ধন। আজ সোমবার তোলা

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর এলাকার ২৫০ বছরের পুরোনো হাতিপুকুরের উত্তর অংশ ভরাটের প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে হঠাৎ বিশ্ব পরিবেশ দিবসের আলোচনা সভা চলাকালীন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে ঢুকে পড়েন অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ। পরে তাঁরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দক্ষিণ দিকের প্রবেশদ্বারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এরপর জেলা প্রশাসকের দপ্তরে মানববন্ধন করেন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড দ্বিতীয় মুরাদপুরে ২৫০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক হাতিপুকুরটি ভরাটের প্রতিবাদে ও পুনরায় পুকুরটি খনন করে ভূমিদস্যুদের হাত থেকে অবমুক্ত করার দাবিসংবলিত ব্যানার নিয়ে সোমবার দুপুর ১২টায় হঠাৎ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে ঢুকে পড়েন অন্তত ৫০ নারী-পুরুষ। তাঁদের হাতে ‘পুকুর ভরাট বন্ধ করো, করতে হবে’ ও ‘ভূমিদস্যুদের হাত থেকে পুকুর ভরাট বন্ধ করো’-সংবলিত প্ল্যাকার্ড আছে। তখন জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের আলোচনা সভা চলছিল। এতে পরিবেশ অধিদপ্তরের নেতা, পরিবেশকর্মীরাও ছিলেন। এ সময়ে জেলা প্রশাসক বিষয়টি দেখতে পেয়ে পরে আসার অনুরোধ করেন। পরে দ্বিতীয় মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দক্ষিণ পাশের প্রবেশদ্বারে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে নিচতলায় মানববন্ধন করেন। পরে তাঁরা স্মারকলিপিও দেন।

মানববন্ধনে লিটন মিয়া, নাইম মিয়া, বালা রানী মহল, রাশেদা বেগম, পুষ্প রানী দাস ও ইতিরানী মোদক জানান, এই পুকুর ২৫০ বছরের পুরোনো। একে রক্ষা করতে তাঁরা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে এসেছেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, ‘দাবি থাকবে, কিন্তু হুট করে এভাবে সভাস্থলে ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে ঢুকে পড়া ঠিক হয়নি। কুমিল্লা পুকুর ও দিঘির শহর। এগুলো রক্ষা করতে হবে।’

সরেজমিনে বিকেলে জানা গেছে, হাতিপুকুরে জায়গার পরিমাণ ২ একক ৩৭ দশমিক ৫ শতক। এর মধ্যে দক্ষিণ অংশের ১ একর ৩২ দশমিক ৫ শতকের মালিক কুমিল্লা বঙ্গবন্ধু আইন কলেজের অধ্যক্ষ আইনজীবী আলী আজাদ। উত্তর অংশের ১ একর ৫ শতক জায়গার মালিক ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও রাজগঞ্জ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আবদুল জলিল। কয়েক দিন ধরে পুকুরের উত্তর অংশের অন্তত ১২ শতকের জায়গা ভরাট করা হয়। এর আগেও পুকুর ভরাট করে দোকানপাট করা হয়। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ দ্বিতীয় মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, এই পুকুর ২৫০ বছরের পুরোনো। পুকুরের পানি দিয়ে রান্না করে প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠী। এ পুকুরে গোসল করেন তাঁরা। ছয় মাস আগে পুকুর সেচে (পানি অপসারণ করা হয়) ভরাটের কাজ শুরু হয়। ধীরে ধীরে ভরাট করা হয় পুকুর। এতে এলাকাবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই তাঁরা পুকুর ভরাট বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে যান।

জানতে চাইলে আবদুল জলিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি আমাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি। বিএনপির কিছু ছেলেপেলে মিলে এই আন্দোলন করছে। ওরা আমার কাছে ৪০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। ৪০ লাখ টাকা দিলে ভরাট করতে পারব বলে জানায়। কয়েক বছর আগে পুকুরের উত্তর অংশে ময়লা ফেলা হয়। এলাকাবাসী ময়লা ফেলে। তখন সেখানে ময়লার স্তূপ পড়ে যায়। পরে সেখানে আমরা দোকান করি। এখন আমরা পুকুরের পাড় বাঁধছি।’

কুমিল্লা বঙ্গবন্ধু আইন কলেজের অধ্যক্ষ আইনজীবী আলী আজাদ বলেন, ‘আমার অংশ ভরাট হচ্ছে না। পুকুর ভরাট করছি না আমি।’

পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মুহাম্মদ রাজীব বলেন, ‘পুকুর ভরাটের কোনো সুযোগ নেই। আমরা বিষয়টি সরেজমিনে গিয়ে দেখব।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, পরিবেশ দিবসের আলোচনা সভা চলছিল। হঠাৎ হাতিপুকুর রক্ষার দাবি নিয়ে কিছু লোক ডিসি সাহেবের সম্মেলনকক্ষে ঢুকে পড়েন। পরে তাঁদের বুঝিয়ে বের করা হয়।