Thank you for trying Sticky AMP!!

শিক্ষক–সংকটে নাকাল শিক্ষার্থীরা 

কলেজের আইসিটি, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থীদের তুলনায় শিক্ষক অনেক কম। এ ছাড়া অন্যান্য বিভাগেও শিক্ষক–সংকট রয়েছে।

পঞ্চগড়ের মকবুলার রহমান সরকারি কলেজে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকের সংখ্যা অনেক কম। এই কলেজে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে ৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করলেও তাঁদের পাঠদানের জন্য আছেন মাত্র ৩৫ জন শিক্ষক। খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েও বিভিন্ন বিভাগের পাঠ্যক্রম শেষ করা যাচ্ছে না। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। 

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলেজের বেশ কয়েকটি বিষয়ে তিনজন বা এর বেশি শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র একজন করে। ফলে একজন শিক্ষক পাঠদান করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।

কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে ১ হাজার ১০০ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক আছেন মাত্র একজন। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি এবং স্নাতক ৩২০ শিক্ষার্থীর পাঠদানের দায়িত্বে আছেন একজন শিক্ষক।

আইসিটির শিক্ষক প্রভাষক মো. রাহাত আলম প্রধান বলেন, ১ হাজার ১০০ শিক্ষার্থীকে পাঠদান করতে গিয়ে তাঁর সমস্যা হচ্ছে। মাঝেমধ্যে অতিথি শিক্ষকের (খণ্ডকালীন শিক্ষক) সহায়তায় চালিয়ে নেওয়া হয়। 

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক মো. ছায়েদুর রহমান প্রধান বলেন, উচ্চমাধ্যমিকের ১২০ জন আর স্নাতকের (পাস) ২০০ জন শিক্ষার্থীকে একাই পাঠদান করতে হয় তাঁকে। প্রায় সাত বছর ধরে তিনি একাই এভাবে পাঠদান করছেন। এর মধ্যে প্রায় দুই বছর আগে একজন শিক্ষকের পদায়ন হলেও তিনি যোগদান করার অগেই বদলি হয়ে চলে যান। মাঝেমধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চালানো হয় বলে জানান তিনি। 

রসায়ন বিষয়ে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতকে (পাস) মোট ৫০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন একজন শিক্ষক। রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. পশিবুল হক বলেন, শিক্ষার্থী অনুযায়ী রসায়ন বিভাগে পাঠদানের জন্য আরও শিক্ষক প্রয়োজন। একাই ৫০০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করতে অনেক সময় হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

কলেজের অধ্যক্ষ দেলওয়ার হোসেন প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে বেশ কয়েকবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ না নেওয়ায় শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে নিতে খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হয়েছে। তবে খণ্ডকালীন শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কলেজের পুরোনো প্রশাসনিক ভবনেই চালানো হয় দাপ্তরিক কার্যক্রম। শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি কলেজে দ্রুত একটি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করাও জরুরি হয়ে পড়েছে। 

কলেজের কার্যালয় ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে জেলা শহরের ডোকরোপাড়া এলাকায় ৯ দশমিক ১৬ একর জমিতে গড়ে ওঠে মকবুলার রহমান কলেজ। এরপর ১৯৮৩ সালের ১ মে কলেজটি জাতীয়করণ হয়। ১৯৭০ সালে স্নাতক (পাস কোর্স) এবং ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষে ৬টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু হয়। স্নাতকোত্তর চালু হয় ২০১৩ সালে। কলেজে বর্তমানে শিক্ষার্থী ৭ হাজার ১৩০ জন। এর মধ্যে উচ্চমাধ্যমিকে ১ হাজার ১০০ জন, স্নাতক ৮০০ জন, ৯টি বিষয়ের স্নাতক (সম্মান) কোর্সে ৪ হাজার ৬০০ জন এবং ৬টি বিষয়ের স্নাতকোত্তরে ৬৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। কলেজে ৮০ আসনের ১টি ছাত্র হোস্টেল ও ১০০ আসনের একটি ছাত্রী হোস্টেল আছে। কলেজের পুরোনো প্রশাসনিক ভবনে একটি গ্রন্থাগার আছে, তবে গ্রন্থাগারিক না থাকায় সেখানে কার্যক্রম নেই বললেই চলে।

স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুসনাদ আহম্মেদ মান্নান বলেন, ‘প্রথম বর্ষে যেভাবে ক্লাস হয়, সেভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষে ক্লাস হয় না। চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের যে কয়েকজন শিক্ষক আছেন, তাঁদেরকেই উচ্চমাধ্যমিক, ডিগ্রি, অনার্স—সব জায়গায় সামাল দিতে হয়। কলেজে আরও শিক্ষক হলে আমরা শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতাম।’

বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. এহতেশামুল হক বলেন, ‘শিক্ষকসংকট থাকায় আমরা যাঁরা কর্মরত আছি, তাঁদেরকেই উচ্চমাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পাঠদান করতে হয়। এতে পাঠদানে হিমশিম খেতে হয়।’