Thank you for trying Sticky AMP!!

হারানো শিশুদের রঙিন দিন

ঠিকানাবিহীন শিশুদের আশ্রয়স্থল উপলব্ধির কার্যালয় সেজেছিল উৎসবের রঙে। শিশুদের পরনে ছিল রঙিন পোশাক।

উপলব্ধির শিশুদের সঙ্গে কেক কেটে কিশোর আলোর নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন করেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন কবি ওমর কায়সার। গতকাল বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম নগরের ফিরিঙ্গীবাজার এলাকায় উপলব্ধির কার্যালয়ে

তখন মরিয়মের বয়স ছিল মাত্র ছয় মাস। চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট এলাকার একটি ডাস্টবিনের পাশে খুঁজে পাওয়া যায় তাকে। কোনো সাড়াশব্দ ছিল না শিশুটির। এরপর উপলব্ধি শিশুনিবাসের সদস্যরা তাকে নিয়ে যান হাসপাতালে। সুস্থ হয়ে ওঠে সে। এখন রীতিমতো দৌড়ে বেড়াচ্ছে মরিয়ম। খেলছে মনের আনন্দে।

গতকাল শুক্রবার উপলব্ধির কার্যালয় সেজেছিল উৎসবের রঙে। মরিয়মের মতো হারিয়ে যাওয়া অভিভাবকহীন শিশুরাও রঙিন পোশাকে নিজেদের রাঙিয়েছিল। কিশোর আলো (কিআ) সম্পাদক আনিসুল হক আসবেন, এই অপেক্ষায় খুব ভোরে শিশুদের চোখের ঘুম পালিয়ে যায়। অবশেষে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অপেক্ষার পালা শেষ হয়। হাজির হন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। সঙ্গে ছিলেন প্রথম আলো চট্টগ্রাম কার্যালয়ের বার্তা সম্পাদক ওমর কায়সারও। শিশুরা তাঁদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়। পরে আনিসুল হক ঘুরে দেখেন উপলব্ধির গ্রন্থাগার, কম্পিউটার ল্যাবসহ নানা কক্ষ।

শিশুদের পরিবেশনায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক আয়োজন। শুরুতে তাদের ‘মঙ্গল দ্বীপ জ্বেলে’ গানের সুরের মূর্ছনা সবার নজর কাড়ে। এরপর কখনো নাচ, কখনো আবৃত্তিতে পুরো দিনটিই রাঙিয়ে তোলে শিশুরা। পরে কিশোর আলোর নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কেটে উদ্‌যাপন করে এই শিশুরা। আনিসুল হক সবার হাতে তুলে দেন কিআর নতুন সংখ্যা।

প্রতীক্ষার অবসান

স্কুল ও কলেজে পড়ুয়া মেয়েরা আনিসুল হককে বলেন, ‘স্যার, আপনার লেখা আমরা পড়ি। আপনি আমাদের কাছে এসেছেন, আমাদের বিশ্বাসই হচ্ছে না। আপনাকে চার বছর আগে চিঠি লিখেছিলাম উপলব্ধিতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে। আপনি উত্তর লিখে বলেছিলেন, আসবেন। আজ আমাদের প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে।’ আনিসুল হক শিশুদের কাছে টেনে নেন। তাদের সঙ্গে গল্পে মেতে ওঠেন। বলেন, ‘অনেক মানুষ পৃথিবীতে আছেন, যাঁদের মা-বাবা হারিয়ে গেছেন। কিন্তু তাঁরা বড় হয়েছেন। কাজী নজরুল ইসলাম শৈশবেই তাঁর বাবা-মাকে হারান। কিন্তু তিনি বড় হয়েছেন। তোমাদের সবাইকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। লেখাপড়া করতে হবে, বই পড়তে হবে, গান করতে হবে, ঠিকমতো নাচ করতে হবে। যখন নিজরা বড় হবে, উপলব্ধিকে ভুলে যেয়ো না।’

এক শিশু আনিসুল হককে প্রশ্ন করে বলে, সে কিশোর আলোতে চারটি লেখা পাঠিয়েছে, কিন্তু ছাপানো হয়নি। জবাবে আনিসুল হক বলেন, অনেক অনেক লেখা কিশোর আলোতে জমা হয়। সব লেখা ছাপানো যায় না।

উপলব্ধির শুরুর গল্প

ফিরিঙ্গী বাজারের ৭১ নম্বর শিববাড়ী সড়কের ছয়তলা একটি আবাসিক ভবনের চারটি তলায় ৬৫ শিশুর অন্য রকম বাসস্থান উপলব্ধি। ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠান হারিয়ে যাওয়া, পথে পাওয়া অসহায় মেয়েশিশুদের লালন-পালনের দায়িত্ব পালন করছে। এখানে এই শিশুরা থাকে, লেখাপড়া করে, স্কুলে যায়, কলেজে যায়। তাদের জন্য রয়েছে গৃহশিক্ষক। শরীর-স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে নিয়মিত চিকিৎসক আসেন । পড়ালেখার পাশাপাশি শিশুরা ছবি আঁকে, ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নেয়, দাবা খেলে।

Also Read: চট্টগ্রামে কিশোর আলোর অনুষ্ঠান আজ

এই প্রতিষ্ঠান শুরুর গল্প শোনালেন প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শেখ এজাবুর রহমান। পদ্মা অয়েল কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ এবং প্রশাসন) শেখ এজাবুর রহমান জানালেন, ২০১০ সালের কোনো এক শুক্রবার তিনি বাজার করতে যান চট্টগ্রামের ২ নম্বর গেট এলাকায়। সেদিন একটি ছোট্ট ছেলে তাঁর বাজারের ব্যাগ ধরে টানছিল। ছেলেটি কোথায় থাকে, তিনি জানতে চান। জবাবে বলেছিল, সে ‘নাইট শেল্টারে’ (ছিন্নমূল শিশুদের রাতে থাকার ব্যবস্থা) থাকে। নাইট শেল্টারের কথা শুনে তিনি কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। ছেলেটির কাছে নাইট শেল্টারের ঠিকানা জানতে চান এবং তার সঙ্গে তিনি সেখানে যান।

একটা সময় আর্থিক সহায়তার অভাবে নাইট শেল্টার বন্ধ হয়ে যায়। তখনই এ রকম একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চিন্তা মাথায় আসে শেখ এজাবুরের। আর ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর শেখ এজাবুর, তাঁর স্ত্রী শাহনাজ বেগম ও কন্যা তাহসিন রহমানকে নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি করে উপলব্ধি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের জন্ম দেন। ব্যাংক হিসাব খোলা হয় এ প্রতিষ্ঠানের নামে।

Also Read: কিআর অন্য রকম জন্মদিন

শেখ এজাবুর রহমান বলেন, এই শিশুরা নিজ ঠিকানা জানে না। এমনকি এ ধরাধামে তাদের কেউ আছে কি না, তা-ও বলতে পারে না। উপলব্ধিই তাদের একমাত্র ঠিকানা, একমাত্র বসতঘর। এরা এখানে ভালো আছে, কেউ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়, কেউ ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে। ১২ জন মেয়ে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। চারজন আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতায় নিয়মিত স্কোর করছে। দুজন দাবা প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এখন বিভাগীয় পর্যায়ে খেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা নিয়মিত কিশোর আলো পড়ে। সবাই পাঠাগারের সাহিত্যের বই পড়ে।

শিশুদের সাংস্কৃতিক আয়োজনের সঞ্চালনা করে তাহমিনা সুলতানা ও বিলকিস আক্তার।

উপলব্ধিতে আরও উপস্থিত ছিলেন কিআ বুক ক্লাবের স্বেচ্ছাসেবক ও বন্ধুসভার বন্ধুরা। কিআর পক্ষ থেকে শিশুদের উপহার বিতরণ করা হয়।