Thank you for trying Sticky AMP!!

নেত্রকোনায় শিয়ালের সঙ্গে হাঁস-মুরগি-ছাগলের বসবাস

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার নয়নকান্দি গ্রামের আজিজুল হকের বাড়িতে একসঙ্গে হাঁস, মুরগি, ছাগল, কুকুর, বিড়াল ও শিয়াল থাকে

বাড়ির উঠানে ১২টি ছাগল ও বেশ কয়েকটি হাঁস-মুরগি। পাশে একটি টিলায় বসে আছে একটি শিয়াল, কিন্তু তাতে ভীত নয় ছাগল ও হাঁস-মুরগিগুলো। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, বাড়ির গৃহকর্ত্রী একটি পাত্রে খাবার দিলেন। হাঁস-মুরগিগুলো ওই খাবার খেতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের সঙ্গে খাবার খেতে যোগ দেয় শিয়ালটিও। এ সময় ছাগলগুলো নির্বিকার ভঙ্গিতে তাদের চারপাশে ঘোরাঘুরি করছিল।

গতকাল বুধবার বিকেলে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের নয়নকান্দি গ্রামে এ ঘটনা দেখা যায়। ওই গ্রামের আজিজুল হকের বাড়ির নিত্যদিনের চিত্র এটি। আজিজুল হক তাঁর বাড়িতে একসঙ্গে হাঁস, মুরগি, ছাগল, কুকুর, বিড়াল ও শিয়াল পালন করছেন। তাঁর এ কাজে স্ত্রী সুমা আক্তার সহযোগিতা করেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ওই বাড়িতে উৎসুক লোকজনের ভিড় লেগে আছে।

শিয়াল সাধারণত বনজঙ্গলে বসবাস করে। তাদের পোষ মানার কথা শোনা যায় খুবই কম। বন বা নির্জন পথ দিয়ে একলা চলাচল করতে গিয়ে শিয়ালের তাড়া খেতে হয়েছে, এমন লোকের সংখ্যাও কম নয়। শিয়াল থেকে বাঁচতে সব সময় ভয়ে থাকে হাঁস, মুরগি, ছাগলসহ বিভিন্ন পশুপাখি। আজিজুল হকের বাড়িতে শিয়াল ছাড়া রয়েছে ১২টি ছাগল, বেশ কয়েকটি হাঁস-মুরগি, একটি করে কুকুর ও বিড়াল। এদের থাকার জন্য উঠানে রয়েছে একটি ঘর। আর ওই ঘরেই শিয়ালসহ একসঙ্গে সব প্রাণীদের রাখা হয়। স্থানীয় লোকজনের কাছে আজিজুল হকের বাড়িটি বর্তমানে ‘শিয়াল বাড়ি’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা, আজিজুল ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেড় বছর আগে একদিন বিকেল বেলা আজিজুল হক পাশের নাজিরপুর ইউনিয়নের লোহারগাঁও এলাকায় যান। সেখানে একটি ছোট জলাশয়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কয়েকজন নারী মাছ ধরছিলেন। এ সময় পাশের একটি জঙ্গল থেকে খাবারের সন্ধানে তিনটি শিয়ালের ছানা বের হয়ে আসে। পরে ছানাগুলোকে ওই নারীরা উদ্ধার করে তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যেতে চান। তাঁদের কাছ থেকে আজিজুল হক একটি ছানা চেয়ে আনেন। তখন ওই শিয়ালের ছানার আনুমানিক বয়স ছিল তিন মাসের মতো। বাড়িতে আনার পর তাঁর স্ত্রী কিছুটা গালমন্দ করলেও পরে বেশ আদর-যত্ন করতে থাকেন।

আজিজুল-সুমা দম্পতি প্রথমে ভেবে পাচ্ছিলেন না শিয়ালের ছানাটিকে তাঁরা কী খাওয়াবেন। পরে সুমা আক্তার একটি ফিডারে গরুর দুধ ভরে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। প্রথম দিন ব্যর্থ হলেও পরের দিন সকাল থেকে প্রায় এক মাস দুধ খাওয়ান। এর পর থেকে বাড়ির সদস্যদের মতো শিয়ালটিকেও সব ধরনের খাবারে অভ্যস্ত করা হয়। বর্তমানে শিয়ালটির বয়স প্রায় ১ বছর ৯ মাস। তাঁরা শিয়ালটিকে ‘লালু’ নামে ডাকেন।

শিয়াল পালন নিয়ে সুমা আক্তার বলেন, ‘প্রথমে স্বামীর হাতে শিয়ালের ছানাটিকে দেখে রাগ হলেও কিছুক্ষণ পর মায়া জন্মে যায়। পরে দুধ খাইয়ে শিশুসন্তানের মতো শিয়ালটিকে বড় করেছি। প্রতিবেশীরা আগে আমাদের নিয়ে মশকরা করলেও এখন সবাই শিয়ালটিকে পছন্দ করে। সে পোষ মেনেছে। লালু নামে ডাক দিলে কাছে আসে। সব ধরনের খাবারই খায়। মানুষ, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল কাউকেই কামড় দেয় না।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আকবর আলী প্রথম আলোকে বলেন, সকালে শিয়াল, ছাগল, হাঁস, মুরগিগুলো ছেড়ে দেওয়ার পর সেগুলো বাড়ির পাশে একটি টিলায় চলে যায়। দিন শেষে সন্ধ্যার আগেই শিয়ালটি অন্যগুলোকে তাড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। এটি দেখে মনে হয় যেন শিয়ালটি মালিকের আদেশ পালন করছে। তবে প্রতিবেশী ও অন্যান্য পশুপাখিকে কামড়ানো বা কোনো ধরনের অত্যাচার করে না।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘আমরা জানি শেয়াল হচ্ছে মাংসাশী প্রাণী। যেসব প্রাণীর জলাতঙ্ক বা র‌্যাবিস হয় বা জীবাণু বহন করে, তাদের মধ্যে শেয়াল অন্যতম। সে ক্ষেত্রে জলাতঙ্ক টিকা শিয়াল ও তার পালনকারী দুজনেরই নেওয়া উচিত।’